বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
এডিসি হারুন কাণ্ড

রহস্য উদঘাটনে ফুটেজ বিশ্লেষণ

বারডেমে মারামারির কথা জানিয়ে নিরাপত্তা কর্মকর্তার চিঠি, তদন্ত কমিটিকে আরও পাঁচ দিন সময়

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছাত্রলীগের তিন নেতাকে থানায় নিয়ে মারধরের ঘটনা তদন্তে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গঠিত তদন্ত কমিটিকে আরও পাঁচ দিন সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্তকাজ শেষ করতে না পেরে বাড়তি পাঁচ দিনের সময় চেয়ে আবেদন করার পরিপ্রেক্ষিতে কমিটিকে এই সময় দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন ডিএমপির মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) ফারুক হোসেন। এদিকে থানায় মারধরের আগে বারডেম হাসপাতালে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। সেই ঘটনা তুলে ধরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছিলেন সেখানকার এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা। সেই চিঠিটিও তদন্তের আওতায় নেওয়া হয়েছে। ডিসি ফারুক হোসেন গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্রলীগের তিন নেতাকে মারধরের অভিযোগ ওঠার পর রবিবার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিকে দুই দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু এত অল্প সময়ে তদন্ত শেষ করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে কমিটি সময় বাড়ানোর জন্য মঙ্গলবার আবেদন করে। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ডিএমপি কমিশনার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় পাঁচ দিন বাড়িয়েছেন।

তদন্ত কমিটির সদস্য রমনা বিভাগের এডিসি শাহেন শাহ মাহমুদ বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি দুই দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে। তবে সেটা সম্ভব হয়নি। সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ, সাক্ষ্য গ্রহণ, জিজ্ঞাসাবাদসহ অনেক কাজ বাকি। রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হকের সঙ্গে পুলিশের রমনা বিভাগের এডিসি হারুন অর রশীদের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে গত শনিবার ছাত্রলীগের তিন নেতাকে থানায় নিয়ে মারধর করা হয়। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, শাহবাগ থানায় পরিদর্শকের (তদন্ত) কক্ষে এই মারধরে নেতৃত্ব দেন এডিসি হারুন। তবে ঘটনার সূত্রপাত হয় বারডেম হাসপাতালে। সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে মারধর ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার নেপথ্যের কারণ হিসেবে রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল ও এডিসি হারুনের মধ্যে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের বিষয়টি সামনে আসে। সেই দ্বন্দ্ব ছিল আজিজুলের স্ত্রী সানজিদাকে কেন্দ্র করে। প্রশাসন ক্যাডারের আজিজুল ও পুলিশের এডিসি হারুন দুজনই ৩১তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে চাকরিতে যোগ দেন। এ ঘটনায় এডিসি হারুনকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশে রংপুর রেঞ্জ উপ-মহাপরিদর্শকের (ডিআইজি) কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়।

এদিকে হাসপাতালে মারামারির বিষয়ে ঘটনার পরদিন রবিবার ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেন সিকিউরিটি সুপারভাইজার ওয়ারেছ আলী। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, শনিবার রাত ৮টার দিকে হাসপাতালে আসা একদল দর্শনার্থী ইটিটি (এক ধরনের শারীরিক পরীক্ষা) কক্ষের সামনে মারামারি করেন। হাসপাতালের বিভিন্ন ইউনিট পরিদর্শন করে এসে তিনি এই মারামারি দেখতে পান। দুই পক্ষকে অনুরোধ করে তিনি মারামারি থামাতে সমর্থ হন।

চিঠিতে ওয়ারেছ আলী বলেন, মারামারিতে লিপ্ত ব্যক্তিদের পরিচয় জানতে চাইলে, প্রথমে তারা পরিচয় জানাতে অস্বীকৃতি জানান। পরে অনুরোধ করলে তারা পরিচয় দেন। এতে জানা যায়, একজন রাষ্ট্রপতির এপিএস (একান্ত সহকারী সচিব আজিজুল হক) এবং অন্যজন হচ্ছেন পুলিশ কর্মকর্তা (বরখাস্ত হওয়া রমনা অঞ্চলের এডিসি হারুন অর রশীদ)। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে তিনি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেন। পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে রমনা ও শাহবাগ থানার পুলিশ এসে তাদের নিয়ে যায়।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক রংপুর জানিয়েছেন, এডিসি হারুন অর রশীদকে রংপুরে সংযুক্তি করার আগে গত বছরের এপ্রিলে বিতর্কিত পোস্ট দিয়ে ক্লোজড হওয়া সিলেট জেলা পুলিশের আদালত পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে রংপুর রেঞ্জে বদলি করা হয়। এর আগে ভুয়া মোবাইল কোর্ট সাজিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে শাস্তিমূলক বদলি হিসেবে বদরগঞ্জ থানার ওসি হাবিবুর রহমান হাওলাদারকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে রংপুর রেঞ্জের কুড়িগ্রাম জেলায় সংযুক্ত করা হয়। ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন হয়রানির অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনা ভিডিওতে ধারণ এবং সেটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালে এই মামলা করা হয়। এর পরেই ২০১৯ সালে ১০ এপ্রিল ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে রংপুর রেঞ্জে বদলি করা হয়। ২০২৩ সালের ১১ মে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি কামাল হোসেনকে যুবলীগ নেতা আসাদুজ্জামান পুলককে নির্যাতনের ঘটনায় প্রত্যাহার করে রংপুর রেঞ্জ অফিসে সংযুক্ত করা হয়। ২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর সিলেটে ওসমানীনগর থানার ওসি এস এম আল মামুনকে লাখ টাকা খরচ করে থানায় যোগদানের বর্ষপূর্তিতে জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় রংপুর রেঞ্জে বদলি করা হয়।

সর্বশেষ খবর