শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি : চিকিৎসক

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি হয়েছে। চিকিৎসকদের মতে, ‘অত্যন্ত জটিল’ আকার ধারণ করেছে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা। লিভার সিরোসিসের প্রভাবে মূল তিনটি প্রত্যঙ্গের একটি কখনো একটু ভালো থাকলে আরেকটিতে জটিলতা বেড়ে যাচ্ছে। লিভারের জটিলতা চিকিৎসা দিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে, তখনই আবার কিডনি বা হৃদযন্ত্রের জটিলতা দেখা দিচ্ছে। আবার সেই জটিলতা সামলানোর চেষ্টা করছেন চিকিৎসকরা। তাঁকে সুস্থ করতে হলে লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি বলে দাবি করছেন চিকিৎসকরা। তাছাড়া বর্তমান জটিল অবস্থায় তাঁর চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ারও ঝুঁকি রয়েছে। ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়াতে চিকিৎসকদের খুব সতর্কতার সঙ্গে ওষুধ দিতে হচ্ছে। তাঁর শারীরিক অবস্থা কখনো কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলে, পরক্ষণেই আবার খারাপ হচ্ছে। আরেকজন চিকিৎসক জানান, লিভার সিরোসিসের কারণে অনেক আগেই তাঁর এই প্রত্যঙ্গ সংকুচিত হয়ে এর কার্যক্ষমতা প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে তাঁর লিভারে জটিলতা বেড়ে যাওয়ার কারণে রক্তক্ষরণের ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হচ্ছে। তার ওপর রয়েছে হৃদযন্ত্র ও কিডনির জটিল সমস্যা। এভারকেয়ার হাসপাতালে বৃহস্পতিবার রাত থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে দেখভাল করার জন্য তাঁর ছোট ছেলে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমানও রয়েছেন সার্বক্ষণিকভাবে। বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা ‘অত্যন্ত জটিল’। সে কারণে মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা তাঁকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।

তিনি জানান, মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, লিভারের জটিলতায় দেশে যে চিকিৎসা আছে, তার সর্বোচ্চটা দেওয়া হয়েছে। এখন এর বাইরে তাদের আর কিছু করার নেই। তাঁকে জরুরি ভিত্তিতে বিদেশে নিয়ে লিভার প্রতিস্থাপন (ট্রান্সপ্ল্যান্ট) করা প্রয়োজন। এ জন্য তাঁকে বিদেশে কোনো ‘মাল্টি ডিসিপ্লিনারি অ্যাডভান্স হেলথ সেন্টারে’ নেওয়ার জন্য মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে বারবার পরামর্শ ও তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারের অনুমতি না পাওয়ায় সেটা সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়ে তিনি আরও জানান, পরিবারের পক্ষ থেকেও তাঁকে স্থায়ীভাবে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার জন্য অনুমতি দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলেন। সেই আবেদনের সঙ্গে মেডিকেল বোর্ডের লিখিত পরামর্শও যুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু সরকারের দিক থেকে এখনো কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত এ তথ্য ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর তাঁর মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে প্রকাশ করা হয়েছিল। তখন থেকে প্রায় দুই বছরে তাঁর পরিপাকতন্ত্রে কয়েকবার রক্তক্ষরণ হয়েছে। মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা তাঁকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য দুই বছর ধরেই পরামর্শ দিয়ে আসছেন। ৯ আগস্ট রাতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেই থেকে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এখন তাঁর লিভার, হৃদযন্ত্র ও কিডনির সমস্যা জটিল অবস্থায় রয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

এর আগেও ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় পাঁচ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তাঁর হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।

সর্বশেষ খবর