বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
রাজপথ দখলে মরিয়া দুই দল

মরণকামড়ে রাজপথের দখল চায় বিএনপি

শফিউল আলম দোলন ও শফিকুল ইসলাম সোহাগ

মরণকামড়ে রাজপথের দখল চায় বিএনপি

এক দফা আন্দোলনের শেষ ধাপের কর্মসূচির প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। ‘রাজপথেই ফয়সালা’র অঙ্গীকার নিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা দলটির। সরকার পতনে একদফা দাবি আদায়ে চূড়ান্ত আন্দোলনে সমমনা সব জোট ও রাজনৈতিক দল নিয়ে রাজপথ দখলে রাখতে চায়। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত মরণকামড়ে মাঠে থাকতে চায় দলটি। ক্ষমতাসীন প্রতিপক্ষের হামলা-মামলা, গ্রেফতার-হয়রানি কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে এবার দাঁতকামড়ে থেকে রাজপথ দখলে রাখতে চান দলের নেতা-কর্মীরা। জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই চলমান আন্দোলনের সফল পরিণতি ঘটাতে চায় রাজপথের এ প্রধান বিরোধী দল।

বিএনপির নীতিনির্ধারক সূত্রে জানা গেছে, অক্টোবর মাসকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন তারা। এটি হবে বিএনপির সরকারবিরোধী টানা আন্দোলন-কর্মসূচির শেষ ধাপ। আন্দোলনের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। জনগণ নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন চায়। এ দাবিতে আমরা রাজপথে আছি। যতই নির্যাতন, মামলা-হামলা করুক আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না। রাজপথেই এবার ফয়সালা হবে ইনশাআল্লাহ। আগামী দিনের বাংলাদেশ কেমন হবে, তা নির্ভর করবে আগামী কয়েক দিনের ওপর। জানা গেছে, ৫ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে ফেনী-মিরসরাই হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রোডমার্চের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বিএনপির পূর্বঘোষিত ১৫ দিনের প্যাকেজ কর্মসূচি। এর মধ্যে পৃথক শ্রমিক ও নারী সমাবেশ করার কর্মসূচিও রয়েছে। বর্তমানে চলছে রাজধানী ঢাকা ঘিরে সমাবেশ ও সারা দেশে অঞ্চলভিত্তিক রোডমার্চ কর্মসূচি। এরপর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সমমনা জোট ও দলের শীর্ষনেতাদের সঙ্গে এ নিয়ে বিএনপির আলোচনা শুরু হয়েছে। তাদের মতামত নিয়ে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা শেষে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি চূড়ান্ত করবে বিএনপির হাইকমান্ড। ধারণা করা হচ্ছে, এটিই হবে বিএনপির এক দফা আন্দোলনের শেষ ধাপের কর্মসূচি। যুগপৎ এ কর্মসূচি বিরতিহীনভাবে চালিয়ে যাবে বিএনপি। তবে শেষ পর্যায়ে যুগপৎ থেকে বেরিয়ে এসে সমমনা দলগুলোর একসঙ্গে এক মঞ্চে কর্মসূচি পালনের সম্ভাবনাও জোড়াল হচ্ছে। অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়ার কথা বিএনপির এক দফা আন্দোলনের শেষ ধাপের কর্মসূচি। ঢাকায় মহাসমাবেশ ও সচিবালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ ঢাকা ঘেরাওয়ের কর্মসূচির পক্ষে মতামত ব্যক্ত করছেন বিএনপিসহ সমমনা দলের নেতারা। তবে এবার সারা দেশের পাশাপাশি রাজধানী ঢাকামুখী কর্মসূচির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন সবাই। বিগত সময়ের আন্দোলনের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বিবেচনায় রেখেই এবার ঢাকামুখী কর্মসূচি প্রণয়ন করা হচ্ছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কী কর্মসূচি দেওয়া হবে, তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের জন্য যখন যে কর্মসূচির প্রয়োজন হবে, তখন সে কর্মসূচিই দেওয়া হবে। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত জনগণের এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম দিকে নির্বাচন হলে আর বাকি আছে মাত্র তিন মাস। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই সরকারের ওপর চতুর্মুখী চাপ তৈরির মাধ্যমে নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে ফয়সালা করতে চায় বিএনপি। বিরোধী দলের নীতিনির্ধারকদের ধারণা, জাতীয় নির্বাচনের তফসিল একবার ঘোষণা করা হয়ে গেলে সেখান থেকে ক্ষমতাসীনদের ফেরানো কিংবা নির্বাচন ঠেকানো মুশকিল হতে পারে। তাই তফসিল ঘোষণার আগেই সেটা সারতে চায় বিএনপি। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবি আদায়ে চলমান এক দফা আন্দোলনের সফল পরিণতি ঘটাতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। রাজপথের আন্দোলনেই জনগণের দাবি আদায় করা হবে।

সর্বশেষ খবর