শিরোনাম
সোমবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ফিলিস্তিনে তীব্র লড়াই

হামলা-পাল্টা হামলায় ৬০০ ইসরায়েলি ও ৪০০ ফিলিস্তিনি নিহত, হামাসের হাতে বহু আটক

প্রতিদিন ডেস্ক

ফিলিস্তিনে তীব্র লড়াই

ইসরায়েলের বোমা হামলায় বিধ্বস্ত ভবনের নিচ থেকে মানুষ উদ্ধারের চেষ্টা ফিলিস্তিনিদের -আলজাজিরা

ইসরায়েলের অভ্যন্তরে হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর দ্বিতীয় দিনে গতকাল বড় ধরনের কোনো সংঘাতের ঘটনা ঘটেনি। তবে সারা দিনে গাজা সীমান্তে বিক্ষিপ্তভাবে উভয় পক্ষ পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে। এ সময় হামাস যোদ্ধারা শতাধিক রকেট নিক্ষেপ করে, অপরদিকে ইসরায়েলি সেনারা আত্মরক্ষামূলক স্থল ও বিমান হামলা চালায়। এদিকে হামাসের শনিবারের অভিযানে ৪৪ জন ইসরায়েলি সেনা ও সেনা কমান্ডারসহ অন্তত ৬০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে বলে সর্বশেষ খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। একই সঙ্গে আহত হয়েছে আরও দুই সহস্রাধিক ইসরায়েলি, নিখোঁজ হয়েছে সাড়ে ৭০০ এবং হামাসের হাতে আটক হয়েছে সেনা ও কমান্ডারসহ শতাধিক ব্যক্তি। অপর দিকে গতকাল পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় মোট ৪০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নতুন হামলার আশঙ্কায় ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে দেশে জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেছে। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আলজাজিরা, এপি, পার্স টুডে।

গতকাল সন্ধ্যার এক খবরে বলা হয়, ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস এবং জিহাদ আন্দোলনসহ কয়েকটি প্রতিরোধ সংগঠন ইসরায়েলের ভিতরে অভিযান চালিয়ে যেসব সেনা ও অবৈধ বসতি স্থাপনকারী ইহুদিকে আটক করেছে- তাদের মুক্তির জন্য মিসরকে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছে তেল আবিব। খবরে আরও বলা হয়, হামাসের শনিবারের অভিযানে ইসরায়েল হতভম্ব হয়ে পড়েছে। ওইদিন ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা ইসরায়েলের সেনাসহ বহু অবৈধ বসতি স্থাপনকারীকে আটক করে গাজায় নিয়ে যায়। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর একজন মুখপাত্র বহু মানুষকে ধরে নিয়ে যাওয়ার কথা নিশ্চিত করলেও এর সঠিক সংখ্যা তিনি প্রকাশ করতে অস্বীকার করেন। ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, নজিরবিহীন অভিযান শুরুর পর দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলেও গতকাল পর্যন্ত ইসরায়েলের কয়েকটি ইহুদি বসতিতে ফিলিস্তিনের যোদ্ধারা অবস্থান করছিল। ইসরায়েলের বেশ কয়েকটি এলাকায় তাদের সঙ্গে যুদ্ধ চলছে। হামাসের সামরিক শাখা ইজদ্দিন আল-কাসসাম ব্রিগেডও নিশ্চিত করেন যে, ইসরায়েলের কয়েকটি জায়গায় সংঘর্ষ চলছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তাদের নিহত সেনাদের মধ্যে নাহাল ব্রিগেডের কমান্ডার, কমিউনিকেশন ব্যাটালিয়নের কমান্ডার, ডেপুটি কমান্ডার, মাজলান ইউনিটসহ আরও দুই কমান্ডারও রয়েছেন। এদিকে যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে বিমান কোম্পানি বিন গুরিয়ন বিমানবন্দরের উদ্দেশে তাদের ফ্লাইট বাতিল করেছে। একই তালিকায় আমেরিকার বিমান কোম্পানিগুলোও রয়েছে। জার্মান বিমান কোম্পানি লুফথানসা, ইউএইর এমিরেটস, গ্রিক বিমান কোম্পানি এজিন এয়ার লাইনসও তেলআবিবে তাদের ফ্লাইট বাতিল করেছে। এই তালিকায় ফরাসি, পোলিশ, স্প্যানিশ এবং ইতালীয় কোম্পানিও রয়েছে।

আরেক খবরে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি বিবেচনায় ইসরায়েল পশ্চিম তীরের সব ক্রসিং পয়েন্ট বন্ধ করে দিয়েছে। জর্ডানের সঙ্গে আল-কারমা ক্রসিং দিয়ে পশ্চিম তীরের কোনো ফিলিস্তিনিকে প্রবেশ বা বের হতে দেওয়া হয়নি। পশ্চিম তীর বর্তমানে পুরোপুরি অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাদের রেডিও জানিয়েছে, আল-আকসা তুফান অভিযান শুরুর পর থেকে তাদের অন্তত ৩০ পুলিশ নিহত হয়েছে। অন্যদিকে হামাসের সামরিক শাখা শহীদ ইজ্জাদিন আল-কাসসাম ব্রিগেড জানায়, তাদের অভিযানের সময় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গণসংযোগ ব্যাটালিয়নের কমান্ডারও নিহত হয়েছেন। কাসসাম ব্রিগেড আরও জানায়, অভিযানে তারা প্রথমবারের মতো আত্মঘাতী ড্রোন ব্যবহার করে অধিকৃত অঞ্চলের বহু ঘাঁটিতে প্রবেশ করেছে। তারা সাওফা, কিবুতজ, হাউলিত এবং ইয়াতিদ ঘাঁটিতে প্রবেশ করে কাসসাম ব্রিগেডের যোদ্ধাদেরকে যুদ্ধ সরঞ্জাম সরবরাহ করতে সক্ষম হয়েছে। পাশাপাশি গাজায় বেসামরিক বাড়িঘর লক্ষ্য করে ইসরায়েলের হামলার জবাবে প্রতিরোধ যোদ্ধারা ইসরায়েলের সেদিরুত শহরের ওপর শতাধিক রকেট নিক্ষেপ করেছে।

আরেক খবরে বলা হয়েছে, গাজার সীমান্তবর্তী বিভিন্ন শহর থেকে নিজেদের নাগরিকদের সরিয়ে নিচ্ছে ইসরায়েল। সংঘাতের দ্বিতীয় দিনে বেশ কিছু স্থানে হামাস ও ইসরায়েলি বাহিনীর মধ্যে সশস্ত্র লড়াই হয়েছে। এই সংঘর্ষে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী ভারী ট্যাংক ব্যবহার করেছে।

আরেক খবর অনুযায়ী, ইসরায়েলের দখলকৃত এলাকা থেকে পালাবার জন্য তেল আবিবের বেন গুরিওন বিমানবন্দরে হাজার হাজার ইহুদি জড়ো হয়েছেন। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের হামলার পর ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ভয়াবহ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় ইহুদিবাদীরা দলে দলে পালাতে চাইছেন।

ইসরায়েলকে বাইডেনের সমর্থন : গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় সমর্থন ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গত শনিবার রাতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে টেলিফোন আলাপে এই অকুণ্ঠ সমর্থনের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বাইডেন বলেন, ‘ইসরায়েলের নিরাপত্তার প্রতি আমেরিকার পক্ষ থেকে ইস্পাত কঠিন সমর্থন অব্যাহত থাকবে।’

সর্বশেষ খবর