বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

১৭০০ কোটির ভোট প্রস্তুতি শেষ

► প্রশিক্ষণ ব্যয় ১২৬ কোটি টাকা ► ব্যয় বাড়ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ► দুই দিনের ভাতা ভোট কর্মকর্তাদের ► আগামী সপ্তাহে চূড়ান্ত ভোটের ব্যয়

গোলাম রাব্বানী

১৭০০ কোটির ভোট প্রস্তুতি শেষ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রাথমিক ব্যয় ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা ধরা হলেও তা আরও বাড়ছে। এবারের নির্বাচনে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের দুই দিন ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সব মিলে নির্বাচন পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলা ব্যয় প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি হতে পারে বলে জানিয়েছে ইসি। এর বাইরে নির্বাচনী প্রশিক্ষণে ব্যয় হবে ১২৬ কোটি টাকা। সব মিলে নির্বাচনী ব্যয় ১৭০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। আগামী সপ্তাহে নির্বাচনী ব্যয় চূড়ান্ত করবে কমিশন।   

বিগত একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৭০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হলেও এবারের ব্যয় দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই হিসেবে চলতি অর্থবছরে ইসির সংসদ নির্বাচনের জন্য দ্বিগুণ ব্যয় রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দের বড় অংশ ব্যয় হবে নির্বাচনি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য ব্যয় বেশি (প্রায় ৬৫ শতাংশ) আর পরিচালনা ব্যয় হবে তার চেয়ে কম (প্রায় ৩৫ শতাংশ)। চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ অথবা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করার পরিকল্পনা নিয়েছে কমিশন। এক্ষেত্রে নভেম্বরের শুরুতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। তবে এবারে সব দলকে নির্বাচনে আনতে ভোটের একাধিক তারিখও রাখা হতে পারে। এবারে ৫০ থেকে ৬০ দিন হাতে রেখেই নির্বাচনের তফসিল দেবে নির্বাচন কমিশন। এ ছাড়া ইভিএম ছাড়া ব্যালট পেপারে ৩০০ আসনে ভোট করতে রোডম্যাপ অনুযায়ী প্রস্তুতিমূলক কাজ প্রায় শেষ। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, প্রাথমিক ব্যয় ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা ধরা হলেও তা বাড়ছে। কেননা এবার প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার এবং পোলিং অফিসারদের দুই দিনের সম্মানী ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগে তাদের একদিনের ভাতা দেওয়া হতো। এমনকি এবারের ভাতার পরিমাণও বাড়ছে। অন্যদিকে নির্বাচনী মালামাল কেনাকাটা, আইনশৃঙ্খলার খরচসহ সব মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা খরচ হতে পারে। এর বাইরে নির্বাচনী প্রশিক্ষণে খরচ হবে প্রায় ১২৬ কোটি টাকা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যয় এখনো চূড়ান্ত হয়নি; বৈঠক হয়েছে। আগামী সপ্তাহে সংসদ নির্বাচনের ব্যয় চূড়ান্ত হবে বলে আশা করছি।

ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, এবার প্রায় ১২ কোটি ভোটারের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা বাড়ার পাশাপাশি নির্বাচনী সামগ্রীর দামও তুলনামূলক বেড়েছে। সেই সঙ্গে জ্বালানিসহ অন্যান্য খাতেও দাম বেড়েছে।

ভোটের প্রস্তুতিমূলক কাজ ৮৫% এর বেশি হয়ে গেছে। অনেক কিছু কেনাকাটা হয়ে গেছে, জেলা পর্যায়েও পাঠিয়ে দেওয়া হবে। আগামীতে প্রস্তুতিমূলক যেসব কাজ রয়েছে তাও সময় মতো হয়ে যাবে। সংসদ নির্বাচনে ১৩ ধরনের নির্বাচনী উপকরণ কিনতে হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যালট বাক্স, ব্যালট বাক্সের ঢাকনা ও লক, অমোচনীয় কালি, বিভিন্ন ধরনের সিল, স্ট্যাম্প, সিল, বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, কাগজ, প্যাড, রশি প্রভৃতি। নির্বাচন পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভাতা ও প্রশিক্ষণ, কেনাকাটা  থাকে। এছাড়া নির্বাচনে দশ লাখের মতো ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নির্বাচনি উপকরণ কেনাকাটা, মুদ্রণসহ নানা ধরনের কাজ রয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য থাকে কয়েক লাখ। এর আগে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘সব কেনাকাটা চলছে, প্রায় শেষ ধাপে। অনেক মালামাল পেয়েও গেছি। হুসিয়ান ব্যাগ, গালা, সিল, ব্যালট বাক্সসহ সবই পেয়েছি। কেনাকাটার ক্ষেত্রে ৮০-৮৫ শতাংশের বেশি অগ্রগতি হয়েছে। তফসিল ঘোষণার আগের কাজগুলো নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে শেষ হবে। তফসিল ঘোষণার পর কিছু কাজ থাকবে ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর ব্যালট পেপার ছাপানোর কাজ থাকবে আমাদের। সাংবিধানিকভাবে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। সেক্ষেত্রে ১ নভেম্বর শুরু হবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা।  সবশেষ নবম, দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয় ২০০৮ সালের ২ নভেম্বর, ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর ও ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর। এবার ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোট করতে গেলে নভেম্বরের শুরু থেবে দ্বিতীয়ার্ধের মধ্যেই ভোটের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে।

সর্বশেষ খবর