শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

পরিবর্তিত আইনের পার্থক্য নিয়ে খোঁজ

ঢাকায় ব্যস্ত মার্কিন প্রাক-নির্বাচনি পর্যবেক্ষক দল, গণতন্ত্র রক্ষায় আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ জানালেন প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁরা বাংলাদেশে গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছি এবং গণতন্ত্র অর্জন করেছি। আমরা গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে অঙ্গীকারবদ্ধ।’ যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) এবং ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) প্রাক-নির্বাচনি মূল্যায়ন মিশন (পিইএএম)-এর ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দল গতকাল তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর দল আওয়ামী লীগের আদর্শ গণতন্ত্র সমুন্নত রাখা এবং আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাস সম্পর্কে সংক্ষেপে প্রতিনিধি দলকে অবহিত করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৭-২০০৮ সালের সেনাবাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তাঁকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। দেশে ফিরলে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মৃত্যুর হুমকি উপেক্ষা করে দেশে ফেরেন তিনি।

বৈঠকে প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বদানকারী ইউএসএআইডির সাবেক ডেপুটি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর বনি গ্লিক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে বিস্ময়কর অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। তাঁরা কূটনীতিকসহ সব অংশীজনের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তাঁদের লক্ষ্য হলো সব অংশীজনের কথা শোনা। তাঁরা মার্কিন সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন না, তাঁরা তাঁদের ব্যক্তিগত ক্ষমতাবলে এখানে এসেছেন। তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর চান।

দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী কার্ল এফ ইন্ডারফার্থ বলেন, গণতন্ত্রের কিছু অন্তর্নিহিত সমস্যা আছে, এমনকি সমস্যাগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও রয়েছে। ব্যস্ততার মধ্যেও সময় দেওয়ার জন্য তাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান এমপি, মোহাম্মদ আলী আরাফাত এমপি, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন, আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সঙ্গে সাইবার নিরাপত্তা আইনের পার্থক্য কী, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কাছে তা জানতে চেয়েছে মার্কিন প্রাক-নির্বাচনি পর্যবেক্ষক দল। বিকালে সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মার্কিন পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান আইনমন্ত্রী। এর আগে দুপুরে সচিবালয়েই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের  সঙ্গেও বৈঠক করেছে মার্কিন পর্যবেক্ষকরা। বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি তাদের জানিয়েছি ভোট কারচুপি করে কেউ পার পাবে না এবং এ ধরনের মনোবৃত্তি আমাদের রাজনৈতিক দলের নেই। বিকাল ৩টায় আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শুরু হয়। বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আমার সঙ্গে তাদের যে বিষয়ে কথা হয়েছে সেটা হচ্ছে, ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের পরিবর্তে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে। আমি ওনাদেরকে বলেছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার অবাধ, নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ। নির্বাচন অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ হবে।’ মার্কিন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে আনিসুল হক বলেন, তাদের প্রশ্নের ধারায় আমার কাছে যেটা মনে হয়েছে, অন্যান্য দলের সঙ্গে তারা যেসব আলোচনা করেছেন, সেখানে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট বিষয়েও আলাপ-আলোচনা হয়েছে। সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট বিষয়ে তাদের বক্তব্য কী ছিল সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট এবং সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টের মধ্যে পার্থক্য কোথায়। আমি তাদের সেই পার্থক্যের কথা পরিষ্কারভাবে বলেছি। আমাকে তারা কোনো সাজেশন দেননি। নির্বাচনকেন্দ্রিক কিছু তারা আমার কাছে জানতে চাননি। তারা যেটা জানতে চেয়েছেন সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট সমন্ধে এবং জুডিশিয়ারি বিষয়ে। আমি জুডিশিয়ারির সম্পূর্ণ ইতিহাস তাদের বলেছি। তারা মামলাজট সমন্ধে জানতে চেয়েছেন। তাও আমি তাদের বলেছি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : মার্কিন পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেন, আমি তাদের (পর্যবেক্ষক দলকে) বলেছি, আমাদের মিডিয়া পিপল একদম ফ্রি। তারা যে কোনো সংবাদ যে কোনো সময় ছাপিয়ে দেন। সেই ব্যাপারে আমরা কারও কণ্ঠরোধ করি না। তাই ভোট কারচুপি করে কেউ পার পাবে না এবং এ ধরনের মনোবৃত্তি আমাদের রাজনৈতিক দলের নেই। তিনি বলেন, দেশের সবাই মনে করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন তাদের তত্ত্বাবধানে একটা সুন্দর নির্বাচন উপহার দেবে, এই ছিল কথা। বেলা ১টা ৩৫ মিনিটে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বৈঠক শুরু হয়। মন্ত্রী বলেন, তারা আমাদের কাছে নানা বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। আমরা বলে দিয়েছি ভায়োলেন্স আমরা অনেক ফেস করেছি। এখন প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ভায়োলেন্স ও টেররিস্ট ফ্রি এবং শান্তির সুবাতাস দেখছি আমাদের দেশে।

 প্রধানমন্ত্রী আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন। রোল অব ল প্রতিষ্ঠা করেছেন।

দেশের মানুষ সবসময় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চায়, কোনোরকম মারামারি দেশের মানুষ পছন্দ করে না। এখানে ভায়োলেন্স হবে বলে আমরা মনে করি না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, এ নির্বাচন আয়োজন করতে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর সক্ষমতা আছে কি না, তারা তা জানতে চেয়েছিলেন। আমরা তাদের বিস্তারিত বলে দিয়েছি। তিনি বলেন, তাদের জানিয়েছি আগে যেরকম সহিংসতা হতো এখন সেই সহিংসতা হবে না। আমরা মনে করি আমাদের উপমহাদেশে নির্বাচন এলেই উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

সর্বশেষ খবর