বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

হেঁটেই টুঙ্গিপাড়া দলীয় কার্যালয়ে শেখ হাসিনা

চক্রান্ত সব সময় থাকে, ভয় নাই

নিজস্ব প্রতিবেদক ও গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

হেঁটেই টুঙ্গিপাড়া দলীয় কার্যালয়ে শেখ হাসিনা

গতকাল টুঙ্গিপাড়ায় পারিবারিক বাসভবন থেকে আধা কিলোমিটার হেঁটে দলীয় কার্যালয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি -পিআইডি

রাজনীতি আর রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিটি মুহূর্ত কাটে নিদারুণ ব্যস্ততায়। নিজের জন্য সময় করা হয়ে ওঠে না তেমন একটা। মঙ্গলবার পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগের উদ্বোধন ও ভাঙ্গায় জনসভায় বক্তৃতা শেষে ছোটবোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামের বাড়ি টুঙ্গিপাড়ায় যান বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে শেখ হাসিনা। সেখানেই রাত কাটান। সকালে নিজহাতে ইলিশ-পোলাও রান্না করেন। সে খাবার বাড়িতে অতিথিদের খাওয়ানো হয়।

এরপর দুপুর ১২টায় নিজবাড়ি থেকে টুঙ্গিপাড়ায় দলীয় কার্যালয়ে পায়ে হেঁটে যান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। বুলেটপ্রুফ গাড়ি ছেড়ে প্রায় আধা কিলোমিটার হেঁটে দলীয় কার্যালয়ে        পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। হেঁটে যাওয়ার সময় গ্রামবাসীর খোঁজখবর নেন। গ্রামবাসীসহ নির্বাচনী এলাকার মানুষের সঙ্গে প্রাণ খুলে কথা বলেন এবং তাদের কুশলাদি সম্পর্কে খোঁজ নেন। বঙ্গবন্ধুকন্যাকে কাছে পেয়ে স্থানীয়রাও তাদের সুখদুখের কথা ভাগাভাগি করেন।

জাতীয় আন্তর্জাতিক চক্রান্ত সব সময় থাকে, ভয় নাই : শেখ হাসিনা

আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দেশি ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র সব সময়ই থাকে, থাকবে। ওপরে আল্লাহ, নিচে জনগণ ও দলের লোক। দেশের মানুষের ওপরই আমার পূর্ণ আস্থা আছে। ভয় নাই, জনগণের ভোট আমাদের আছে। গতকাল দুপুরে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মী, জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আগামীতে নির্বাচন আছে, তবে আমার চিন্তা নাই, জনগণের ভোট আমাদের আছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র সব সময় থাকে। আমি ওটা নিয়ে ভয় করি না। গুলি-বোমা সব মোকাবিলা করে এ পর্যন্ত এসেছি। শেখ হাসিনা বলেন, আমি মনে করি, আল্লাহ মানুষকে একটা কাজ দেন, সেই কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে আল্লাহই রক্ষা করেন। ওপরে আল্লাহ নিচে আমার দলের লোক। যখনই আঘাত এসেছে আমার দলের মানুষ আমাকে রক্ষা করেছে। মানবঢাল তৈরি করে তাদের জীবন দিয়ে আমাকে রক্ষা করেছে।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, দেশের মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ পেয়েছি সেটাই সবচেয়ে বড় কথা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করাই লক্ষ্য জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, করোনা এবং যুদ্ধ না থাকলে দেশ আরও এগিয়ে যেত। তিনি বলেন, সব এমপি নিজের এলাকায় যান। কিন্তু আমাকে দেখতে হয় পুরো ৩০০ আসন। তবে মজার বিষয় হলো, টুঙ্গিপাড়াবাসীই আমাকে দেখে রাখেন।

এ সময় তাঁর সাফল্যের পেছনে টুঙ্গিপাড়াবাসীর অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, আমি যতটুকু সাফল্য অর্জন করেছি তাতে টুঙ্গিপাড়াবাসীর অনেক অবদান। এই মানুষগুলো আমাকে দেখে, আমাকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেয়। এ জন্য আমি সারা দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে পারি। শেখ হাসিনা বলেন, দেশবাসীকে উন্নত ও সুন্দর জীবন দেওয়ার মাধ্যমে তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্যে তাঁর সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। আমি জনগণের কল্যাণে সম্ভাব্য সবকিছু করছি।

শেখ হাসিনা বলেন, যদিও আমি আপনাদের পর্যাপ্ত সময় দিতে পারিনি, কারণ আমাকে সারা দেশের কল্যাণ দেখতে হয়। আমি আমার আপনজনদের হারানোর পর দেশের মানুষ এবং আমার দলের নেতা-কর্মীরাই আমার স্বজন। কাছের মানুষগুলো আমার পাশে না থাকলে সফল হওয়া সম্ভব হতো না। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও খাদ্য সংকটের প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসী ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়াতে বলেন। তিনি বলেন, খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে প্রতি ইঞ্চি জমি চাষের আওতায় আনুন। আমাদের নিজেদের খাদ্য নিজেদেরই উৎপাদন করতে হবে। মতবিনিময় সভায় শেখ হেলাল এমপি, শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল এমপি, গোপালগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুন্সি আতিয়ার রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুব আলী খানসহ টুঙ্গিপাড়া আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বেলা পৌনে ১১টার দিকে বঙ্গবন্ধুর সমাধি কমপ্লেক্স লাগোয়া বাসভবন থেকে বের হন সরকারপ্রধান। গাড়ি ব্যবহার না করে হেঁটেই রওনা হন তিনি। এ সময় সঙ্গে ছিলেন নির্বাচনি এলাকায় শেখ হাসিনার প্রতিনিধি অবসরপ্রাপ্ত সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার এবং তাঁর নিরাপত্তাকর্মীরা। বেলা ১১টার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে যান শেখ হাসিনা। সেখানে স্লোগানে স্লোগানে তাঁকে বরণ করে নেন নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ। সভায় নিজে বক্তব্য রাখার পাশাপাশি স্থানীয় নেতা-কর্মীদের বক্তব্যও শোনেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

প্রধানমন্ত্রী গত মঙ্গলবার বিকালে মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় ঢাকা-ভাঙ্গা রেল সংযোগের উদ্বোধন ও ফরিদপুরের ভাঙ্গায় ড. কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়ামে এক মহাসমাবেশে ভাষণ দেওয়ার পর টুঙ্গিপাড়া পৌঁছান। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছার পরপরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় তিনি ফাতেহা পাঠ, দোয়া ও মোনাজাত করেন। সেখানে রাত্রিযাপন করেন তিনি। সকালে নিজ হাতে ইলিশ পোলাও রান্না করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বিকালে সড়কপথে ঢাকায় ফেরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

সর্বশেষ খবর