বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

প্রতি বছর দেড় লাখ টন খাদ্যপণ্য দিতে চায় মিয়ানমার

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

ভারতের পর এবার কোটায় খাদ্যপণ্য সরবরাহ করতে বাংলাদেশকে চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে পাশের দেশ মিয়ানমার। প্রস্তাবিত চুক্তির আওতায় প্রতি বছর দেড় লাখ মেট্রিক টন পণ্য আমদানির সুযোগ পাবে সরকার। চুক্তিতে উল্লিখিত কৃষিপণ্যগুলো হচ্ছে চাল, ডাল, পিঁয়াজ, হলুদ, ভুট্টা, আদা ও মরিচ।

মিয়ানমারের এ আগ্রহের বিষয়টি জানিয়ে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন ইয়াঙ্গুনে কর্মরত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মনোয়ার হোসেন। চিঠিতে তিনি জানান, দেশটির রাষ্ট্রীয় সংস্থা মিয়ানমার রাইস ফেডারেশন (এমআরএফ) একটি চুক্তির খসড়া দিয়েছে, যেখানে চালের পাশাপাশি অন্যান্য কৃষিপণ্য বাণিজ্যের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আরও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তারা এ প্রস্তাব দিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপনকান্তি ঘোষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মিয়ানমারের প্রস্তাবটি আমরা পর্যালোচনা করে দেখছি। তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ কারণে এখন এলসি করতেও সমস্যা। এ বিষয়ে আরও খোঁজখবর নিতে হবে।’ সূত্র জানান, মিয়ানমার থেকে চাল আমদানির লক্ষ্যে দেশটির সঙ্গে পাঁচ বছর মেয়াদি একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। সরকারি পর্যায়ে (জিটুজি) গত বছরের সেপ্টেম্বরে করা ওই চুক্তিটির মেয়াদ ২০২৭ সাল পর্যন্ত। চুক্তি অনুসারে, ২০২২ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর আড়াই লাখ টন সাদা চাল ও ৫০ হাজার টন সেদ্ধ চাল কিনতে সম্মত হয় বাংলাদেশ। এখন চালের পাশাপাশি প্রতি বছর অন্যান্য কৃষিপণ্য রপ্তানির (প্রতি বছর দেড়লাখ টন) জন্য চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে মিয়ানমার।

যা আছে চুক্তির খসড়ায় : ‘এমওইউ অন রাইস অ্যান্ড আদার অ্যাগ্রো প্রোডাক্টস ট্রেড’ শিরোনামে এ সমঝোতা চুক্তিটিতে দুই দেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে পক্ষ করা হয়েছে। বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান টিসিবি এবং মিয়ানমারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান এমআরএফ এতে স্বাক্ষর করবে। প্রস্তাবিত চুক্তির খসড়ায় সমতা ও পারস্পরিক সুবিধার ভিত্তিতে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধি এবং শক্তিশালী করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়েছে। ধারা-১-এ বলা হয়েছে, উৎপাদন পরিস্থিতি সাপেক্ষে উভয় দেশে বিদ্যমান মূল্যস্তরে বাংলাদেশ প্রতি বছর দেড় লাখ মেট্রিক টন কৃষি ও অন্যান্য খাদ্যপণ্য নিতে পারবে; আমদানি কার্যক্রম সম্পন্ন হবে দুই দেশের সরকারি পর্যায়ে (জিটুজি); মিয়ানমারের পক্ষে দেশটির রাইস ফেডারেশন (এমআরএফ) এবং বাংলাদেশের পক্ষে সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবি এ বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে; এমওইউ স্বাক্ষরের তারিখ থেকে চুক্তিটি কার্যকর হবে এবং ২০২৮ সালের জুলাই পর্যন্ত বলবৎ থাকবে; উভয় পক্ষই পারস্পরিক সম্মতির মাধ্যমে বৈধতার মেয়াদ বাড়াতে পারবে; তবে কোনো পক্ষ চুক্তিটি বাতিল করতে চাইলে তিন মাস আগে নোটিস করতে হবে। এরই মধ্যে কোটা পদ্ধতিতে ভারত থেকে প্রায় ৬২ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ও কৃষিপণ্য আমদানির প্রস্তাব দিয়েছে সরকার। উল্লিখিত খাদ্যের আমদানি এবং মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়া নিয়ে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরেরও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে দিল্লিকে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে গেলে দেশটির কাছে খাদ্য আমদানিতে সহায়তা চান। তখন প্রতি বছর একটি নির্দিষ্টসংখ্যক খাদ্যপণ্য কোটায় নেওয়ার জন্য ভারতই বাংলাদেশকে প্রস্তাব দেয়। সে প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ চাল, গম, চিনি, পিঁয়াজ, ডাল, আদা, রসুন এ সাত পণ্য কোটায় আমদানি করতে ভারতে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠিয়েছে।

সর্বশেষ খবর