শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

কেবিন ভাড়া করে খুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকার সদরঘাটে চার বছর আগে মিতালি-৭ লঞ্চের কেবিনে লিলুফা বেগম (৫৭) হত্যার রহস্য উন্মোচন করার কথা জানিয়েছে পিবিআই। জড়িত অভিযোগে ব্রুনাইপ্রবাসী দেলোয়ার মিজিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২২ সেপ্টেম্বর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার মোল্লাবাড়ি নাসিরকোর্টে। গতকাল ঢাকার ধানমন্ডিতে পিবিআই সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত আইজি বনজ কুমার মজুমদার। তিনি বলেন, লিলুফা বেগম চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের মৃত মোজাম্মেল হকের স্ত্রী। ২০১৯ সালের ১৬ জুন রাত ১০টায় ঢাকায় আসার জন্য মিতালি-৭ লঞ্চের এস-৩০৯ নম্বর কেবিনে ওঠেন। পরের দিন সকাল ৯টায় কেবিন বয় লিলুফার লাশ দেখে পুলিশে খবর দেন। পিবিআইয়ের ক্রাইমসিন টিম ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে ভিকটিমের পরিচয় শনাক্ত করে। থানা পুলিশ পরিবারকে জানালে ভিকটিমের ভাই মনির হোসেন লাশ শনাক্ত করেন। লঞ্চের বুকিং রেজিস্টারে প্রতিবেশী জাহাঙ্গীরের নামের পাশে ভিকটিমের মোবাইল নম্বর লেখা ছিল। নিহত লিলুফার সঙ্গে সখ্য থাকায় প্রতিবেশী জাহাঙ্গীরকে আসামি করে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা করা হয়। ভিকটিমের ভাই মনির হোসেন বাদী হয়ে দায়ের করা মামলাটি থানা পুলিশ এক মাস তদন্ত করে। পিবিআইর শিডিউলভুক্ত হওয়ায় ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই পিবিআই ঢাকা জেলা স্ব-উদ্যোগে মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে। পরে পিবিআই ঢাকা জেলার ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মো. কুদরত-ই-খুদার তত্ত্বাবধানে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. সালেহ ইমরান মামলাটির তদন্ত করে রহস্য উদঘাটন করেন। পিবিআই প্রধান জানান, মামলার এজাহারে উল্লিখিত ভিকটিমের প্রতিবেশী জাহাঙ্গীরের জড়িত থাকার তথ্য না পেয়ে অন্যান্য বিষয় তদন্ত করা হয়। তদন্তে ভিকটিমের সঙ্গে একই গ্রামের ব্রুনাইপ্রবাসী দেলোয়ারের পরকীয়ার বিষয়টি বেরিয়ে আসে। দেলোয়ারের পাসপোর্ট নম্বর সংগ্রহ করা হয়। জানা যায়, তিনি ২৬ জুন ২০১৯ সালে ব্রুনাই গেছেন। চলতি বছরের ২২ সেপ্টেম্বর ইমিগ্রেশন পুলিশের সহায়তায় শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি লিলুফা হত্যার দায় স্বীকার করেন। তিনি জানান, ২০১২ সালের দিকে ভিকটিমের বাড়িতে কাঠমিস্ত্রির কাজের সুবাদে দেলোয়ারের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে সখ্য গড়ে ওঠে। ২০১৭ সালে ব্রুনাই চলে গেলে ভিডিও কলের মাধ্যমে কথাবার্তা চলতে থাকে। দেলোয়ার ২০১৯ সালের ২৮ এপ্রিল দুই মাসের ছুটিতে দেশে আসেন। তিনি লিলুফার সঙ্গে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক করেন। লিলুফা তাকে বিয়ের জন্য চাপ দেন। দেলোয়ারের বড় মেয়ের বিয়ের আয়োজন করা হলে লিলুফা সেখানে গিয়ে সম্পর্কের বিষয়টি সবাইকে জানিয়ে দেবেন বলে হুমকি দেন। দেলোয়ার কিছুদিন অপেক্ষা করতে বলেন এবং বিদেশ যাওয়ার আগে তাকে বিয়ে করে যাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে শান্ত করেন। লিলুফা ১৩ বছরের বড় হওয়ায় দেলোয়ার এই বিয়েতে রাজি ছিলেন না। মানসম্মানের কথা চিন্তা করে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। ২০১৯ সালের ১৬ জুন বিয়ের কথা বলে ভিকটিমের প্রতিবেশী জাহাঙ্গীরের নাম এবং ভিকটিমের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে ঢাকামুখী মিতালি-৭ লঞ্চের তৃতীয় তলার এস-৩০৯ নম্বরের একটি সিঙ্গেল কেবিন বুক করেন দেলোয়ার।

ওই দিন লঞ্চ ছাড়ার পর রাত অনুমান ১২টার দিকে দেলোয়ার লিলুফার সঙ্গে শারীরিকভাবে মিলিত হন। রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে তার গলা চেপে ধরেন। পরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।

 

সর্বশেষ খবর