শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বলেই এত উন্নয়ন : প্রধানমন্ত্রী

প্রতিদিন ডেস্ক

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বলেই এত উন্নয়ন : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি রাস্তাঘাট, ব্রিজ, নৌপথ, রেলপথ, আকাশপথসহ বিভিন্ন খাতে ২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত দেশের যে উন্নয়ন হয়েছে তার জন্য আমি জনগণের প্রতি, বাংলাদেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। কারণ তারাই বারবার ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসীন করেছে। খবর বাসস

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েই আপনারা এ দেশে স্বাধীনতা পেয়েছেন এবং নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিলেন বলেই আজকে এই উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন দেশের প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ‘কমিউনিটি আই সেন্টার স্থাপন’ কার্যক্রমের চতুর্থ পর্যায়ে ৬৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থাপিত ‘কমিউনিটি আই সেন্টার’ উদ্বোধনকালে দেওয়া বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী একই অনুষ্ঠানে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৮০টি উন্নয়ন প্রকল্প ও পুনঃখনন করা ৪৩০টি ছোট নদী-খাল-জলাশয়ের উদ্বোধন এবং ২০টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তিনি দেশের নদীগুলোকে মানবদেহের সঙ্গে তুলনা করে এগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য পানির প্রবাহ যথাযথভাবে প্রবহমান রাখতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, হার্টে ব্লক তৈরি হলে মানুষ মারা যায়। আমাদের নদী ও খালগুলো মানুষের প্রাণের মতো। এগুলো প্রবাহিত রাখতে আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যদি ভবিষ্যতে জাতির সেবা করার আর একটি সুযোগ পাই, ইনশাআল্লাহ আমরা স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং প্রতিটি জেলা ও উপজেলা হাসপাতালের আরও উন্নয়ন করব। তিনি বলেন, আমরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটিকে ৪ থেকে ৫ হাজার শয্যার একটি আধুনিক হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তুলব। তিনি বলেন, কভিড-১৯ না এলে এবারই তাঁর সরকার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আধুনিকায়নের কাজ সম্পন্ন করে ফেলত। প্রধানমন্ত্রী কভিডের ভ্যাকসিন আগে আনার জন্য, গবেষণার জন্য ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা অগ্রিম প্রদান, অনেক উন্নত দেশ না পারলেও বিনামূল্যে এ দেশের মানুষকে কভিড ভ্যাকসিন প্রদান, টিকা সংরক্ষণে উন্নত শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা করা, স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদান, তাদের জন্য আলাদা ভাতা প্রদান, পৃথক আবাসন ব্যবস্থা করা, তাদের নিরাপত্তার জন্য কভিড প্রতিরোধী সুরক্ষা স্যুট আমদানি, টিকা প্রদান প্রক্রিয়ার ব্যয় এবং জনগণকে বাঁচাতে তাঁর সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের খতিয়ান তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় এবং রিজার্ভে টাকা জমা পড়ায় আমরা দুই হাতে টাকা খরচ করে মানুষকে বাঁচিয়েছি। তিনি বলেন, এসব খাতে অনেক টাকা খরচ হয়ে যাওয়ায় অনেক কাজ আমরা শুরু করতে পারিনি। ইনশাআল্লাহ, আগামীতে সুযোগ পেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে যেমন উন্নত করব তেমনি প্রত্যেকটি জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোকে আমরা আরও উন্নত করব। সারা দেশে ডাক্তার-নার্সদের আবাসনে সরকার উন্নত বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণের উদ্যোগ শুরু করেছে, ভবিষ্যতে আরও করে দেওয়া হবে। আগামীতে সুযোগ পেলে চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোনো রকম অবহেলা যেন না হয়, সে ব্যবস্থা তাঁর সরকার করে দেবে।

‘কমিউনিটি আই সেন্টার স্থাপন’ কার্যক্রমের চতুর্থ পর্যায়ে এদিন ৬৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থাপিত ‘কমিউনিটি আই সেন্টার’ উদ্বোধনসহ দেশে এখন ২০০টি ‘কমিউনিটি আই সেন্টার স্থাপন’ করা হয়েছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, এর ফলে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ৪০ শতাংশ এখন চক্ষুসেবা পাচ্ছে। এ পর্যন্ত ২০ লাখ মানুষ এর সেবা গ্রহণ করেছে। ফলে অকাল অন্ধত্ব থেকে অনেকেই মুক্তি পেয়েছে, অনেক দরিদ্র রোগীকে বিনামূল্যে চশমা সরবরাহ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব কমিউনিটি ক্লিনিকে এই সেবার ব্যবস্থা করা হবে।

যশোরের শার্শা উপজেলা, পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা এবং মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার সংশ্লিষ্টরা ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী গত ১৫ বছরে বাস্তবায়িত উন্নয়ন পরিকল্পনা সমন্বিত ‘জয়যাত্রা’ নামে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের ওপর দুটি পৃথক ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। বিএনপির চিন্তার দীনতা ও স্বার্থপরতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ কমিউনিটি ক্লিনিক করেছে। এগুলোতে যারা চিকিৎসা নেবে তারা আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে পারে সে আতঙ্কে খালেদা জিয়া ২০০১ পরবর্তী সময় ক্ষমতায় এসে জনস্বার্থের কথা চিন্তা না করে ’৯৬-পরবর্তী সময়ে তাঁর সরকার প্রতিষ্ঠিত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দিয়েছিল। এখন সারা দেশে ৫ হাজারের অধিক কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং সেখান থেকে ৩০ প্রকারের ওষুধ বিনামূল্যে প্রদানসহ নানা স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এসব কমিউনিটি ক্লিনিক যাতে আর কেউ বন্ধ করতে না পারে সে জন্য ট্রাস্ট ফান্ড করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দেশে কোনো মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। বিএসএমএমইউ প্রতিষ্ঠা করার সময় বিএনপির ডাক্তারদের অনেক বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল। কিন্তু এখন ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ মোট ৫টি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। আমাদের লক্ষ্য- প্রত্যেক বিভাগেই একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দেব। কারণ আমাদের ডাক্তার, নার্স ও দক্ষ জনশক্তির পাশাপাশি চিকিৎসাবিজ্ঞানে গবেষণারও প্রয়োজন। সে জন্য আলাদা ফান্ডও দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ’৯৬ থেকে এ পর্যন্ত তাঁর সরকার বেশ কিছু বিশেষায়িত ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল গড়ে তুলেছে, যার ফলে কর্মসংস্থান যেমন বেড়েছে তেমনি মানুষ সেবা ও চিকিৎসা পাচ্ছে। ‘দারিদ্র্যের হার ৪১ ভাগ থেকে ১৮ দশমিক ৭ ভাগে এবং হতদরিদ্রের হার ২৫ দশমিক ৫ ভাগ থেকে ৫ দশমিক ৬ ভাগে নামিয়ে এনেছে তাঁর সরকার’- উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইনশাআল্লাহ আগামীতে এ দেশে কেউ আর হতদরিদ্র বা ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য ঘর করে দেওয়ার পাশাপাশি জীবনমানের উন্নয়নের ব্যবস্থা সরকার করেছে। তিনি তাঁর সরকারের প্রয়াসে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ ও সুপেয় পানির সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার উল্লেখ করে এগুলো ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দেন এবং তাঁর সরকারের করে দেওয়া উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি সব শ্রেণির জনপ্রতিনিধিকে এ বিষয়ে নজরদারি করার আহ্বান জানান।

সর্বশেষ খবর