মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা
যুবসমাবেশে কাদের

অবরোধ করলে করুণ পরিণতি

সমাবেশে পাল্টাপাল্টি হুঁশিয়ারি

নিজস্ব প্রতিবেদক

অবরোধ করলে করুণ পরিণতি

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি ১৮ অক্টোবরের সমাবেশ থেকে ঢাকা অবরোধের কর্মসূচি দিতে পারে। অবরোধ করলে বিএনপি অবরোধ হয়ে যাবে। এখন চুরি করে ঢুকছ (ঢাকায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের আগমন) এরপর পালাবার পথ পাবা না। শাপলা চত্বর থেকে শেষ রাতে পালায় গেল না? আরও করুণ পরিণতি হবে বিএনপির।

গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে যুবলীগ আয়োজিত যুব সমাবেশে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। বিকাল সাড়ে ৩টার পর যুবলীগের সমাবেশ শুরু হয়। কিন্তু দুপুর ১টার পর থেকে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড, থানা এবং গাজীপুর জেলা ও মহানগর থেকে যুবলীগের নেতা-কর্মীরা আসতে শুরু করেন। নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে বিশাল জনসমুদ্রে রূপ নেয় যুব সমাবেশ। যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দীর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল। যুবলীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকা সিটির খবর রাখেন? ১৮ (অক্টোবর) তারিখ সামনে রেখে মির্জা ফখরুল... বিএনপি ডিসেম্বর মাসের (২০২২) মতো তাদের নেতা-কর্মীদের সারা বাংলাদেশ থেকে ঢাকা আনতে শুরু করেছে। হোটেলগুলো খালি নাই। সব সিট তারা বুক করে ফেলেছে। ঢাকা শহরে নতুন বাড়ি হচ্ছে, খালি ফ্ল্যাট আছে সব তারা বুক করে ফেলেছে। ‘আবার ডিসেম্বর মাসের মতো সরকার পতনের স্বপ্ন দেখছে মির্জা ফখরুল ইসলাম। ফখরুলের আন্দোলন, বিএনপির আন্দোলন ভুয়া। বিএনপিই হচ্ছে ভুয়া। এরা ঢাকা শহরে লোক জমায়েত করবে, অবরোধ করবে, এই শহরে সচিবালয় থেকে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা অবরোধ করার কর্মসূচি তারা ১৮ তারিখে ঘোষণা করবে। তারা সেই ষড়যন্ত্র করছে।’ ১৮ অক্টোবর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে জমায়েত হওয়ার নির্দেশনা দেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আমরা জমায়েত হব। এখন প্রবেশ করছ (বিএনপি) চুরি করে, চুরি করে এসে এসো আত্মীয়স্বজনের বাসায়। ফখরুল বলেছেন অতিরিক্ত কাপড় আনতে, ক্ষমতা দখল করার জন্য, তো আমরা কি দাঁড়ায়া ললিপপ খাব? যুবলীগের যুবকরা, ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ আমরাও প্রস্তুত আছি। আমরাও সেদিন আন্দোলনে নবতর পথযাত্রার সূচনা করব শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। আন্দোলনের মিছিল বয়ে নিয়ে যাব বিজয়ের বন্দরে।

শেখ হাসিনা মাথানত করেন না বলে জানিয়ে তিনি বলেন, আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করেন না। ফখরুল সাহস পাচ্ছে বিদেশ থেকে। আমরা সাহস পাচ্ছি বিদেশি সমীক্ষা এসেছে আগামী নির্বাচনে শতকরা ৭০ ভাগ লোক শেখ হাসিনার পক্ষে ভোট দেবে। আমরা বাংলাদেশের জনগণের সমর্থন থেকে সাহস পাচ্ছি, শেখ হাসিনার মতো সাহসী নেতার নেতৃত্বে। আমরা কাউকে ভয় করি না। যতক্ষণ জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে ততক্ষণ কোনো ভয় নেই। আল্লাহ পাকও আমাদের সঙ্গে আছে। কারণ আমরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে আছি। আমরা নীতির পক্ষে আছি, গণতন্ত্রের পক্ষে আছি, জনগণের সঙ্গে আছি। বাংলাদেশের মানুষ আমাদের সঙ্গে আছে, থাকবে। মির্জা ফখরুল ইসলাম মাঝে মাঝে আজগুবি বার্তা ছড়াচ্ছে বলে দাবি করেন কাদের। তিনি বলেন, ‘তিনি বলেন হাওয়া থেকে পাওয়া খবর।’

বিএনপির আন্দোলনে টাকার ছড়াছড়ি হচ্ছে বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, টাকা পয়সার নতুন চালান আসছে। মালপানি ভালোই। গত ডিসেম্বরের চেয়েও সরবরাহ এখন একটু বেশি। টাকার বস্তার ওপর বসে আছে। ফখরুল টাকা দিয়ে আন্দোলন (ডিসেম্বর, ২০২২) হয়নি। ওই টাকার আন্দোলন গোলাপবাগের গরুর হাটের গর্তের মধ্যে চলে গেছে। এখন আবার আন্দোলন? পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন বিএনপিকে আন্দোলনের সাহস জোগাচ্ছে মির্জা ফখরুলের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আমরা এটা জানি না। এ খবর হাচা না, মিছা? মিথ্যা কথা আর কত বলবা ফখরুল? পশ্চিমা বিশ্বের যারা বাংলাদশে এসেছে, যারা আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে, বিদেশে বলেছে, দেশে বলেছে, তারা বলেছে বাংলাদেশের নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না। এ কথা আমেরিকাও বলেছে, এ কথা ইউরোপও বলে দিয়েছে। ফখরুল কোত্থেকে হাওয়া থেকে মিচা, আজগুবি খবর..।

বিএনপিকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেন কাদের। তিনি বলেন, ফাউল করলেই লাল কার্ড। লাল কার্ড তৈরি হয়ে আছে। আওয়ামী লীগের অ্যাকশন, যুবলীগের অ্যাকশন... ডাইরেক্ট অ্যাকশন। খেলা হবে। ডাইরেক্ট অ্যাকশন চলবে। খালেদা জিয়াকে পঙ্গু করার চেষ্টা করছে সরকার- বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীর এমন বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, খালেদা জিয়াকে ডা. জাহিদ ও পুত্রবধূ ডা. জোবায়দার তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা করা হচ্ছে। আমরা ভয়ে আছি বিএনপিতে থাকা আম্মা গ্রুপ আর ভাইয়া গ্রুপের কোনো অন্তর্ঘাত কি না। সাবধান থাকতে হবে আমাদের। বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে ভাইয়ের সামনে বোনকে, বাবার সামনে মেয়েকে রেপ করেছে বিএনপি-জামায়াত। সে সময় সরকারের চেয়ে আরেক শক্তিশালী সরকার ছিলো হাওয়া ভবন। সাংবাদিক বালু, অ্যাডভোকেট মমতাজকে হত্যা করেছে। যে গ্রেনেড যুদ্ধ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় তারা ১৪টি গ্রেনেড মেরেছে, মামলা নেয় নেই। তারা বলে আইনের শাসনের কথা। যুবলীগ রাজপথে থাকবে জানিয়ে সংগঠনের সাবেক চেয়ারম্যান নানক বলেন, যুব সমাজ পরিষ্কার জানাতে এসেছে, রাজপথেই আপনাদের কবর রচনা করবে। বাংলাদেশে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শক্তি যেন কোনো যড়যন্ত্র করতে না পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, বিএনপি কাকে প্রধানমন্ত্রী বানাবেন, তা তারা জানেন না। দেশের মানুষের ঠেকা পড়েছে, একজন পলাতক চোরের কথায় হরতাল পালন করবে। বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর পরিকল্পনা করেছিল জিয়াউর রহমান। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করে চলেছে বিএনপি। বিশ্বের ইতিহাসে কোথাও স্বাধীনতাবিরোধীরা রাজনীতি করতে পারে না। কিন্তু বাংলাদেশে বিএনপি রাজনীতি করে যাচ্ছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠলেই বুকটা ২ ইঞ্চি চওড়া হয়ে যায়। মেট্রোরেলে চড়লে গর্বে বুকটা ভরে ওঠে। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে গেলে বাংলাদেশ না আমেরিকা তা বুঝা যায় না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর