মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

গাজায় ফাঁদ শঙ্কায় ইসরায়েল

প্রতিদিন ডেস্ক

গাজায় ফাঁদ শঙ্কায় ইসরায়েল

গাজা থেকে ১০ লাখ বাসিন্দা সরে যাওয়ার পর দুই দিন পার হলেও ঘোষণা অনুযায়ী ইসরায়েলি সেনারা স্থল ও নৌ-অভিযান শুরু করেনি। ‘গাজায় ফাঁদ পেতে রাখা হয়েছে’ বলে হামাসের এবং ‘গাজা হবে ইসরায়েলি সেনাদের গোরস্তান’ বলে ইরানের ঘোষণা দেওয়ার পর থমকে রয়েছে এ অভিযান। এরই মধ্যে ইসরায়েলের প্রধান মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘গাজা দখল করা হবে বিরাট ভুল’। এসব ভাষ্যের পর জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান জানিয়েছেন, গাজা দখলে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। পাশাপাশি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর ইচ্ছে আমাদের নেই। পর্যবেক্ষকরা বলছে, কার্যত গাজায় সর্বাত্মক অভিযানে সাহস হারিয়ে ফেলছে ইসরায়েল। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, আল জাজিরা, পার্স টুডে। এক খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসকে অবশ্যই নির্মূল করতে হবে। তবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের জন্য একটি পথও থাকা উচিত। স্থানীয় সময় গত রবিবার সম্প্রচারিত সিবিএস নিউজের ‘সিক্সটি মিনিটস’ সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বাইডেন মনে করেন, ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তে লেবাননের সঙ্গে বাড়তে থাকা সংঘাতের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বিমানবাহী রণতরী বহর ভূমধ্যসাগরের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলের দিকে রওনা হলেও ইসরায়েলের অন্যতম ‘সেরা লড়াকু বাহিনী’ থাকায় মার্কিন সেনাদের স্থলে নামার প্রয়োজন হবে না। এক প্রশ্নের জবাবে ‘ইসরায়েলের গাজা দখল করা ভুল হবে’ বলে সতর্ক করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, কিন্তু হামাস ও হিজবুল্লাহকে ‘ধ্বংস করা দরকার’। এর আগে সিবিএসকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সালিভান বলেন, ‘এই সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে উত্তরে লড়াইয়ের আরেকটি ক্ষেত্র উন্মুক্ত হতে পারে এবং অবশ্যই ইরানের জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি আছে।’

পরে মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিমানবাহী রণতরী বহরগুলোতে যুদ্ধজাহাজ ও যুদ্ধবিমান আছে, আঞ্চলিক সংঘাত ছড়িয়ে পড়া থামাতে প্রয়োজনীয় প্রত্যেকটি পদক্ষেপই নেওয়া হবে।

আরেক খবরে বলা হয়, জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান বলেন, ফিলিস্তিনের গাজা দখলের কোনো আগ্রহ নেই ইসরায়েলের। তবে গাজায় পুরোদমে স্থল হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল। তারা সমুদ্রপথে হামলারও প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ ছাড়া আকাশপথে যুদ্ধবিমান থেকে গাজায় বোমাবর্ষণ অব্যাহত রাখা হয়েছে।

এদিকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, ‘উত্তর ফ্রন্টে যুদ্ধে জড়ানোর কোনো আগ্রহ নেই ইসরায়েলের। লেবাননের সংগঠন হিজবুল্লাহ যদি সংযত থাকে, তাহলে সীমান্ত পরিস্থিতি যেমন আছে তেমনই রাখবে ইসরায়েল।’

আরেক খবরে বলা হয়েছে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আবদুল্লাহিয়ান হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে দখলদার ইসরায়েল সরকারের পাশবিকতা চলতে থাকলে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরান চুপচাপ বসে থাকবে না। তিনি সাম্প্রতিক দোহা সফরকালে কাতারের আল-জাজিরা নিউজ চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, ‘ইহুদিবাদী ইসরাইল যদি গাজায় অনুপ্রবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে প্রতিরোধ যোদ্ধারা এই উপত্যকাকে ইসরাইলি সেনাদের গোরস্থানে পরিণত করবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধ না হলে যুদ্ধ গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়বে।’ তিনি উল্লেখ করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইল নামক পুতুলকে রক্ষা করতে এগিয়ে এসেছে। কিন্তু যুদ্ধের পরিধি যদি বিস্তত হয় তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও মারাত্মক ক্ষতি হবে।

গাজার যুদ্ধ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানা গেছে, হামাসের সঙ্গে যুদ্ধের মধ্যেই লেবানন সীমান্তে হিজবুল্লাহর সঙ্গে গোলাবিনিময় চলছে ইসরায়েলের। স্থানীয় সময় গত রবিবার বিকালে উত্তর ইসরায়েলজুড়ে হামলার সাইরেন শোনা যায়। টাইমস অব ইসরাইলের খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিবে নিযুক্ত বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও সাংবাদিকদের ব্রিফিং করার সময় গাজা থেকে ছুটে আসা রকেটের শব্দ শুনে পালিয়ে যান ইসরাইলের সেডরোট শহরের ডেপুটি মেয়র ইলাদ কালিমি। ডেপুটি মেয়র যখন ব্রিফিং করছিলেন তখন গাজা থেকে একটি রকেট হামলা হয়। এ সময় ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে সবাই ছুটে পালাতে থাকেন।

আরেক খবর অনুযায়ী, ইসরাইলের তেল আবিবের বেন গুরিয়ন বিমান বন্দরে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ফিলিস্তিনের হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জাদ্দিন কাসসাম ব্রিগেড। গাজায় ইসরাইলের অব্যাহত নির্বিচার হামলার জবাবে এ হামলা চালানো হয়েছে। গতকালের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বেন গুরিয়ন বিমান বন্দরে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। অবৈধ ইহুদি বসতি আশকেলানেও ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে হামাসের যোদ্ধারা। আল-জাজিরা টিভি চ্যানেলের এক সাংবাদিক জানান, বায়তুল মুকাদ্দাস ও তেল আবিবের মাঝামাঝি এলাকায় একের পর এক সাইরেনের শব্দ শোনা যাচ্ছে। ইজ্জাদ্দিন কাস্সাম ব্রিগেডের পক্ষ থেকে এখনো প্রতিদিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চলছে।

ধ্বংসস্তূপের নিচে বহু লাশ : অবরুদ্ধ গাজায় দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর নির্বিচার হামলা গতকাল দশম দিনের মতো অতিবাহিত হয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোর সহযোগিতায় এই হামলা চলছে। পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সেখানকার হাসপাতালগুলোতে নতুন করে কোনো রোগীর চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। খবরে বলা হয়, নিহতের সংখ্যা এত বেশি যে, তাদেরকে গণকবর দিতে হচ্ছে। ইসরাইলি হামলায় এ পর্যন্ত দুই হাজার ৮০৮ জন ফিলিস্তিনি শাহাদাৎবরণ করেছেন। শহীদদের ৫২ শতাংশ শিশু ও নারী। আহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা দশ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এখনও এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির মৃতদেহ বিভিন্ন বিধ্বস্ত ভবন ও ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ে আছে। ইসরাইলিদের হামলায় এ পর্যন্ত এক লাখ ৩৫ হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। লাখ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

১০ লাখ বাসিন্দা সরে গেছেন : ফিলিস্তিনি অঞ্চলে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয়কারী লিন হেসটিংস বলেছেন, ইসরায়েল গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর বিনিময়ে হামাসের হাতে জিম্মিদের মুক্তির চেষ্টা চালাচ্ছে, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়। তিনি জানান, গাজা থেকে অন্তত ১০ লাখ বাসন্দিা সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। আরও যারা যাচ্ছেন তারা সঙ্গে বেশি কিছু নিতে পারছেন না। তারা তাদের সর্বস্ব ছোট ব্যাগ ও সুটকেসে ভরে তিন চাকার মোটরসাইকেল ও বিবর্ণ দশার পুরনো গাড়ি, ভ্যান, গাধায়-টানা গাড়িতে করে সরে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। গাজার উত্তরাঞ্চল এখন একটি করুণ দৃশ্যের সাক্ষী।

সর্বশেষ খবর