মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ইয়াবায় ভয়ানক স্টমাক ক্যারিং

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

মরণনেশা ইয়াবা পাচারে এবার ‘স্টমাক ক্যারিং’ পদ্ধতি যুক্ত হয়েছে। পাচারকারীরা ইয়াবা গলাধকরণ করে পাকস্থলীতে ধারণ করায় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন এ পদ্ধতির নাম দিয়েছেন ‘স্টমাক ক্যারিং’। বিভিন্ন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ইয়াবার ট্রানজিট পয়েন্টখ্যাত কক্সবাজার ও বান্দরবানের শতাধিক পয়েন্ট থেকে এই পদ্ধতিতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ইয়াবা পাচার হচ্ছে। কক্সবাজারসহ দেশের ৯ জেলায় ২ হাজারের ওপরে ইয়াবা বহনকারি স্টোমাক ক্যারিং পদ্ধতি ব্যবহার করছে। সূত্র মতে, এ পদ্ধতিতে ইয়াবা পাচার করলে ধরা পড়ার সম্ভাবনা থাকে না। ফলে পদ্ধতিটি পাচারকারিদের জন্য নিরাপদ হয়ে উঠেছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের চট্টগ্রাম মেট্রো উত্তর অঞ্চলের উপ-পরিচালক হুমায়ন কবির খোন্দকার বলেছেন, ‘বিগত যে কোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে স্টোমাক ক্যারিং পদ্ধতি। মাদক ব্যবসায়ীদের ধারণা, এ পদ্ধতিতে ইয়াবা পাচার করলে গ্রেফতার হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। কিন্তু তারপরও প্রতিদিনই আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার হাতে কোনো না কোনো স্টোমাক ক্যারিয়ার গ্রেফতার হচ্ছে।’ মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর চট্টগ্রাম মেট্রো উত্তর অঞ্চলের সহকারী পরিচালক সোমেন মণ্ডল জানান, গ্রেফতার হওয়া ইয়াবা ক্যারিয়ারদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, কক্সবাজারের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও কিছু নির্দিষ্ট পয়েন্টে ক্যারিয়ারদের ইয়াবা খাওয়ানো হয়। ওই পয়েন্টগুলোকে তারা ‘গিলা’ পয়েন্ট বলে। আমাদের মনে হচ্ছে অনেকে স্টোমাক ক্যারিংকে পেশা হিসেবেই নিয়েছে। এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে কক্সবাজার ও বান্দরবানের কমপক্ষে ৩০টি পয়েন্ট দিয়ে দেশে প্রবেশ করছে ইয়াবা। প্রবেশ পয়েন্টগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, সাবরাং, হ্নীলা, হোয়াক্যং, উখিয়ার বালুখালী, পালংখালী, রাজাপালং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম। এ পয়েন্টগুলো দিয়ে ইয়াবা প্রবেশের পর তার বেশির ভাগই চলে যায় রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প ও মাদক ব্যবসায়ীদের নির্দিষ্ট কিছু এলাকায়। মাদক মাফিয়াদের আখড়ায় মজুদের পর তা পাচার করা হয় দেশের বিভিন্ন জায়গায়। কক্সবাজার ও বান্দরবানে গিলা পয়েন্ট রয়েছে শতাধিক। এরমধ্যে ৩২ রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পেই রয়েছে অর্ধশতাধিক গিলা পয়েন্ট। এছাড়াও পয়েন্ট রয়েছে টেকনাফের হ্নীলা, জালিয়াপাড়া, হোয়াক্যং, মৌলভীবাজার, পানখালী, নোয়াখালীপাড়া, টেকনাফ সদর, রামুর গোয়ালিয়া পালং (মিনি বান্দরবান), উখিয়ার মরিচ্যা, ঈদগা চৌপল ‘দন্ডী ব্রিজ, কক্সবাজার সদরের পাহাড়তলী, লাইট হাউস, টেকপাড়া, বাহারছড়া, নাজিরারটেক, সমিতিপাড়া, দনিয়ানগর, কুরুশকুল, উখিয়ার হলদিয়া পালংক, পালংখালী এলাকায়। পয়েন্টগুলোতে থাকা মাচাং ঘর, মটর ঘর এবং টং ঘরে বসে বিশেষ পদ্ধতিতে ইয়াবার গিলে। এরপর বিলাসবহুল গাড়িতে করে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ইয়াবা নেওয়া হয়। নির্ধারিত গন্তব্যে গিয়ে আবাসিক হোটেলে অবস্থান করে পেট থেকে খালাস করা হয় ইয়াবার চালান। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনের দাবি, কক্সবাজার ও বান্দরবান থেকে পেশাদার স্টোমাক ক্যারিং রয়েছে কমপক্ষে ২ হাজার। যার মধ্যে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ এবং শিশু ছাড়াও রয়েছে দেশের বিভিন্ন এলাকার লোকজন। এ পর্যন্ত গ্রেফতার হওয়া স্টোমাক ক্যারিয়ারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গ্রেফতার হয়েছে রোহিঙ্গা, কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার বাসিন্দা। এরপরের অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগর, ঢাকা জেলা ও মহানগর, ফরিদপুর, গাজীপুর, খুলনা, রাজশাহী, কুষ্টিয়া এবং পাবনা এলাকার বাসিন্দা। একজন স্টোমাক ক্যারিয়ার এক চালানে সর্বনিম্ন ১ হাজার থেকে শুরু করে সাড়ে ৩ হাজার পিস ইয়াবা বহন করে। প্রতি হাজার ইয়াবা পাচারের জন্য ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা পেয়ে থাকে ক্যারিয়ার।

সর্বশেষ খবর