বৃহস্পতিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা
২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা ফখরুলের

পদত্যাগ না জনপ্রতিরোধে বিদায় নেবেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

পদত্যাগ না জনপ্রতিরোধে বিদায় নেবেন

রাজধানীর নয়াপল্টনে গতকাল ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির সমাবেশে বক্তব্য দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর -বাংলাদেশ প্রতিদিন

২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির সমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে মহাযাত্রা শুরু হবে। এর পর আমরা আর থামব না। টানা কর্মসূচি চলবে। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা ফিরে যাব না। অনেক বাধা আসবে, বিপত্তি আসবে, সব বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ছুটে যেতে হবে। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে অশান্তির এ সরকারের পতন ঘটাব আমরা। সমাবেশকে কেন্দ্র করে ২৫০ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে দুপুর ২টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনের সড়কে নির্মিত অস্থায়ী মঞ্চে সমাবেশ শুরু হয়। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক এবং দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব লিটন মাহমুদের পরিচালনায় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীরউত্তম, বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, হাবিবুর রহমান হাবিব, দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন নবী খান সোহেল, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, যুবদল সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। মির্জা ফখরুল সরকারের উদ্দেশে বলেন, এখনো সময় আছে পূজার মধ্যেই সিদ্ধান্ত নেন। স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছাড়বেন নাকি জনগণের আন্দোলনে বিতাড়িত হবেন? আজকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ব্যবহার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। আজকেও দেখলাম প্রথম আলোর নামে ভুয়া পেজ খুলে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। তাদের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। আজকের এ লাখো জনতার উপস্থিতি প্রমাণ করে এ প্রপাগান্ডা জনগণ বিশ্বাস করে না। তিনি বলেন, যখনই আমাদের সমাবেশ হয় তখনই আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। আজকের সমাবেশকে কেন্দ্র করে ২৫০ জনেরও বেশি নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ থেকে প্রমাণিত হয়, সরকার ভীত হয়েছে। এদের পায়ের তলায় কোনো মাটি নেই। ভয় থেকেই সরকার এগুলো করছে। বিএনপির এই শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেন, এ সরকার বলছে, সংবিধানের বাইরে যাবে না। এরা সংবিধান কাটাছেঁড়া করে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এরা কথায় কথায় সংবিধানের দোহাই দেয়। আজকে রাষ্ট্রপতি দেশের বাইরে। সংবিধান অনুযায়ী কাউকে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব দিতে হয়। সংবিধানের কথা বলে সারা দেশকে সহিংস রাজনীতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে এ সরকার। তিনি বলেন, আজকের এ সমাবেশে অনেক জেলা থেকে সাধারণ মানুষ ও দলীয় কর্মীরা ছুটে এসেছেন। কারণ, তারা নতুন কর্মসূচি চান। দেশব্যাপী উদগ্রীব হয়ে আছে কখন এ সরকার বিদায় নেবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন,  ডাক্তাররা বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে বাঁচাতে হলে অবিলম্বে বিদেশে সুচিকিৎসার কোনো বিকল্প নেই। যে মানুষটি আজীবন দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন তাকে বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এ সরকার কতটা ভয়াবহ, কতটা নিষ্ঠুর।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ইতোমধ্যে মিথ্যা মামলা দিয়ে ৯৬ জন নেতাকে সাজা দিয়েছে। সরকারের পরিকল্পনা হচ্ছে তাদের সাজা দিতে পারলে মাঠ পরিষ্কার।

তিনি বলেন, ২০১৪ ও ১৮ সালে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। এ সরকারের কোনো জনভিত্তি নেই। আজকে মানুষ জেগে উঠেছে। এই জাগ্রত জনতা ফুঁসে ওঠার আগেই জনগণের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, এত গ্রেফতারে কি আন্দোলন থেমে গেছে? নেতা-কর্মীরা গ্রেফতারে ভয় পায় না। গতকাল একটি বিশেষ শ্রেণির সভা হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে বিরোধী নেতা-কর্মীদের দমন করার জন্য। এসব কোনো প্রক্রিয়ায় কাজ হবে না। জনগণ রাস্তায় নেমে গেছে। আমীর খসরু বলেন, আজকে সব জায়গায় মানুষের একটি প্রশ্ন- আর কয়দিন? মানুষ আর অপেক্ষা করতে পারছে না। দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছেন তারা। এখনই পদত্যাগ করুন। আলোচনা সমঝোতার কথা আসছে। বিএনপি অবশ্যই আলোচনা সমঝোতায় বিশ্বাস করে। এর আগে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। তারপরই বিএনপি আলোচনায় বসতে রাজি।

কাকরাইল থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ছিল জনস্রোত : মঙ্গলবার রাতে পুলিশের কড়াকড়ির পর ভোর হতেই নয়াপল্টনে আসতে শুরু করেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। দলীয় কার্যালয়ের সামনে তৈরি মঞ্চের চারপাশে এসে জড়ো হন তারা। ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানা ওয়ার্ডসহ আশপাশের জেলাগুলো থেকে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসেন। দুপুর গড়াতেই জনস্রোত শুরু হয় নয়াপল্টনমুখী। দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরুর আগেই নেতা-কর্মীদের ঢল মালিবাগ, কাকরাইল, নাইটিংগেল মোড়, মৎস্যভবন, পল্টন, ফকিরাপুল, মতিঝিল, আরামবাগ, পীর জঙ্গি মোড় পর্যন্ত পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টনসহ আশপাশের এলাকায় বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। সমাবেশের কারণে রাজধানীতে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর