শনিবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা
কী করবে রাজনৈতিক দলগুলো

পাহারাদারের ভূমিকায় থাকবে আওয়ামী লীগ

রফিকুল ইসলাম রনি

পাহারাদারের ভূমিকায় থাকবে আওয়ামী লীগ

সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ে ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এরপর সরকার দাবি না মানলে ‘মহাযাত্রা’র কর্মসূচিতে যাবে দলটি। ওইদিন রাজধানীতে আওয়ামী লীগও শান্তি সমাবেশ করবে। এ ছাড়াও পাড়া-মহল্লায় সতর্ক অবস্থানে থাকবে ক্ষমতাসীন দলটির নেতা-কর্মীরা। ২৮ অক্টোবর দেশের প্রধান দুই দলের মুখোমুখি অবস্থান ঘিরে সবার মুখে আলোচিত হচ্ছে, ২০০৬ সালের মতো ঘটনা কি ঘটতে যাচ্ছে রাজধানীতে? শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নাকি সংঘাত? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কিছুই ঘটবে না সেদিন। দলীয় নেতা-কর্মীদের চাঙা রাখতে দুই দলই ভোটের আগে মাঠে জিততে চায়। সে কারণে কর্মসূচি-পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে।  আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি যেন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করতে না পারে সেজন্য অতীতের মতো পাহারায় থাকবে আওয়ামী লীগ। এ জন্য দুই ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। একটি হচ্ছে, বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শান্তি সমাবেশ। এতে রাজধানীর পার্শ্ববর্তী জেলার নেতা-কর্মীরা অংশ নেবেন। ঢাকার প্রবেশমুখগুলোয় স্থানীয় নেতারা সতর্ক পাহারায় থাকবেন। কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ২৬ অক্টোবর বিশেষ বর্ধিত সভা ডেকেছে। ঢাকা মহানগর উত্তর ইতোমধ্যে প্রস্তুতি সেরেছে। দলের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগও ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা পূর্ব ঘোষিত বছরব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২৮ তারিখে রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করব। এতে শুধু ঢাকাবাসীই নয়, রাজধানীর পার্শ্ববর্তী জেলা-উপজেলা থেকেও দলীয় নেতা-কর্মীরা অংশ নেবেন। দেশবাসী যে আমাদের সঙ্গে আছে তা প্রমাণ করে দেব। বিএনপি কিছুই করতে পারবে না।’  দলীয় সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। বিশেষ করে বিএনপি লাগাতার কর্মসূচি দিচ্ছে। সর্বশেষ তারা ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। সেদিন সরকার পতনের মহাযাত্রা ঘোষণা করবে দলটি। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ চিন্তিত না থাকলেও সতর্ক অবস্থানে পাহারায় থাকবে তারা। এর অংশ হিসেবে ওইদিন রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে শান্তি সমাবেশ করবে। জানা গেছে, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের থানা-ওয়ার্ডের সম্মেলন হলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হয়নি। নির্বাচনের আগে ‘অগোছালো’ ঢাকাকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী দেখতে চায় আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। সে কারণে ঢাকাকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগকে দেখভালের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য, যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির নানককে। দক্ষিণ আওয়ামী লীগকে দেখভাল করতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অবিভক্ত মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রমকে। তারা ইতোমধ্যে কাজও শুরু করেছেন। ২৬ অক্টোবর মহানগর দক্ষিণের থানা-ওয়ার্ড নেতাদের নিয়ে বসবেন মায়া। ওইদিন বিশেষ বর্ধিত সভা করে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন তিনি।  আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপি ঘোষণা করেছে ২৮ অক্টোবরের পর তাদের মহাযাত্রা শুরু হবে। আসলে মহাযাত্রা নয়, তাদের মরণযাত্রা শুরু হবে। আমরাও কর্মসূচি নিয়ে মাঠে প্রস্তুত থাকব, তারা কী করতে পারে তা দেখব? তারা যে ভাষায় আন্দোলন করবে সেই ভাষায় জবাব দেওয়া হবে।’ সূত্রমতে, ২৮ অক্টোবর শুধু সমাবেশেই সীমাবদ্ধ থাকবে না আওয়ামী লীগ। তারা পাড়া-মহল্লায় সতর্ক পাহারায় থাকবে। বিশেষ করে উত্তরা, মহাখালী, ফার্মগেট, শ্যামলী, গাবতলী, মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর এবং রামপুরা, বাড্ডা ইউলুপ, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা, কেরানীগঞ্জসহ রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতে অবস্থান নেবেন নেতা-কর্মীরা। সমাবেশে যোগদানের পাশাপাশি ছাত্রলীগ প্রস্তুত থাকবে শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘তারা ২৮ তারিখে কিছুই করতে পারবে না। বিএনপির সবই বাগাড়ম্বর বক্তৃতা। আমরা পাহারাদারের ভূমিকায় থাকব। আমরা জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিঘিœত হয়, জনজীবন বিপর্যস্ত হয় এমন কোনো কর্মকান্ড কোনোভাবেই বরদাশত করব না। কোনো ধরনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল, আগুনসন্ত্রাস করেছিল তার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে চাইলে কঠোর জবাব দেওয়া হবে।’ রাজধানীর মানুষকে নিরাপদ রাখতে জোর প্রস্তুতি নিয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন দলের সব পর্যায়ের নেতাদের। আরও দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে ২৬ অক্টোবর বিশেষ বর্ধিত সভা থেকে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপি বাহির থেকে সন্ত্রাসীদের ঢাকায় এনে রাখছে। বাহিরের সন্ত্রাসীদের দিয়ে তারা ঢাকাবাসীকে অবরোধ করবে, আর ঢাকাবাসী বসে থাকবে? ঢাকাবাসীও প্রতিরোধ করবে। তারা নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিকভাবে যদি মিছিল, মিটিং, সমাবেশ করে আমরা স্বাগত জানাব। কিন্তু মিটিং-মিছিলের নামে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, নৈরাজ্য করে ঢাকাবাসী রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে সতর্ক অবস্থানে থাকবে। যেখানেই সন্ত্রাস-নৈরাজ্য সেখানেই প্রতিরোধ-প্রতিহত, গণধোলাই করা হবে। আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি রেখেছি, বাইরের সন্ত্রাসীদের দিয়ে ঢাকাবাসীকে অবরুদ্ধ করতে দেব না।’ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপি সরকার পতনের মহাযাত্রা করবে, আমরা কী ঘরে বসে ললিপপ খাব? সন্ত্রাসীদের ঢাকা দখল করতে দেব না। ২৮ অক্টোবর আমরাও মহাসমাবেশের ডাক দেব। এ কর্মসূচি সফল করতে ২৬ অক্টোবর ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা ডাকা হয়েছে। এতে থানা-ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, সিটি মেয়র, দল সমর্থিত কাউন্সিলররা উপস্থিত থাকবেন। কেন্দ্রীয় নেতারা যে নির্দেশনা দেবেন সেই মোতাবেক আমরা প্রস্তুত থাকব।’

সর্বশেষ খবর