শনিবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা
২৪ ঘণ্টায় নিহত ৩০৭

গাজা যেন এক মৃত্যুপুরী

প্রতিদিন ডেস্ক

গাজা যেন এক মৃত্যুপুরী

ইসরায়েলি হামলায় আহত একজন ফিলিস্তিনিকে বাঁচাতে মরিয়া উদ্ধারকর্মীরা -এএফপি

টানা প্রায় দুই সপ্তাহের ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকা যেন এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় আরও ৩০৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এদিকে, বৃহস্পতিবার রাতে গাজা শহরের একটি গ্রিক গির্জায় ইসরায়েলি বোমা হামলা হয়েছে। এতে অন্তত আটজনের প্রাণহানি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এটি গাজা শহরের সবচেয়ে পুরনো গির্জা।

অন্যদিকে, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন নিয়ে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ উত্তেজনার মাঝে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকে হামাসের সঙ্গে তুলনা করে তাদের কাউকেই বিজয়ী হতে দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন। পাল্টা বিবৃতিতে রাশিয়ার পক্ষ থেকে এ মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। ইসরায়েলি হামলায় গাজার পরিস্থিতি নিয়ে আরও উদ্বেগের খবর পাওয়া গেছে। সেখানে এখন দিনে মাত্র ৩ লিটার করে পানি পাচ্ছেন অবরুদ্ধ মানুষ। রয়টার্স, বিবিসি, আলজাজিরা।ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউর কর্মকর্তা জুলিয়েট টোমা অবরুদ্ধ গাজা শহরের পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, গত দুটি সপ্তাহে গাজা মূলত ‘নরকের গহ্বরে’ পরিণত হয়েছে। গাজার ওপর যে অবরোধ চলছে, তা খুব দ্রুত তুলে নেওয়া প্রয়োজন। কেননা, সেখানকার বেসামরিক নাগরিকদের এ মুহূর্তে মানবিক সহায়তা সবচেয়ে বেশি দরকার। জুলিয়েট বলেন, ‘সময় ফুরিয়ে আসছে। দুই সপ্তাহ চলে গেছে। এ দুটি দীর্ঘ সপ্তাহজুড়ে ইউএনআরডব্লিউএ গাজায় কোনো ধরনের সাহায্য সামগ্রী সরবরাহ করতে পারেনি।’ অন্যদিকে এ সপ্তাহের শুরুতে গাজায় সীমিত পরিমাণে সাহায্য সামগ্রী পাঠাতে চুক্তিতে পৌঁছানোর পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, শুক্রবারের আগে গাজায় সাহায্য পাঠানো যাবে না। কারণ, সাহায্য পাঠাতে হলে রাফাহ ক্রসিংয়ের রাস্তায় তৈরি হওয়া বড় বড় গর্তগুলো আগে মেরামত করতে হবে। এদিকে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের অবিরাম বিমান হামলায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার ফলে মানবিক সংকট গুরুতর আকার ধারণ করেছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির সংকট। বিভিন্ন স্কুল ও শিবিরে আশ্রয় নেওয়া এসব শরণার্থী পানি ছাড়াও চরম খাদ্য সংকটের মুখে রয়েছে, পাশাপাশি দেখা দিয়েছে চিকিৎসা সামগ্রীর অভাব। খাওয়া, গোসল এবং অন্যান্য প্রয়োজন মেটানোর জন্য একজন মানুষের প্রতিদিন গড়ে ১০০ লিটার পানি দরকার। কিন্তু গাজার বাসিন্দারা আগে থেকেই তার কম পেতেন। ৭ অক্টোবর নতুন করে সংঘাত শুরুর আগে জনপ্রতি পেতেন গড়ে ৮৪ লিটার পানি। আর এখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, সেখানে প্রতিদিন একজন ব্যক্তি পাচ্ছেন গড়ে মাত্র ৩ লিটার। ফলে রান্না, ধোয়ামোছা কিংবা গোসল তো দূরের কথা, ফিলিস্তিনের একজন ব্যক্তি তার খাবার পানিটুকুও পুরোপুরি পাচ্ছেন না। জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ বলছে, ‘পানি নেই। একই সঙ্গে ৪ হাজার মানুষের জন্য রয়েছে চারটি টয়লেট। মেঝেতে বা মাটিতেই তারা ঘুমাচ্ছেন। আমরা খাদের কিনারে চলে এসেছি। পানি না থাকলে গাজায় সংকট আরও বাড়বে। আমাদের চোখের সামনে বিপর্যয় ঘটছে, সেটা আরও তীব্র হবে।’ ইউএনআরডব্লিউএ’র প্রধান ফিলিপ্পে লাজারিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনের ১০ লাখেরও বেশি মানুষকে ঘরবাড়ি ছাড়তে বলা হয়েছে। ফলে এটি হলো সম্মিলিত শাস্তি, যেটি আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের লঙ্ঘন। এ অবস্থায় আমরা ইসরায়েল ও এ সংঘাতের সঙ্গে জড়িত সবাইকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের প্রতি সম্মান দেখানোর আহ্বান জানাচ্ছি।’ এদিকে প্রত্যক্ষদর্শী এক সাংবাদিক জানান, অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ চলছেই। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৩০৭ জনের প্রাণ গেছে। এর মধ্য দিয়ে গাজায় গত দেড় সপ্তাহের বেশি সময়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৭৮৫। নিহতদের মধ্যে অন্তত ১ হাজার ৫২৪ শিশু। নারীর সংখ্যা ১ হাজার ৪৪৪। আহত হয়েছেন সাড়ে ১২ হাজারের বেশি মানুষ। জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের ভয়াবহ পরিস্থিতি এখনো আসেনি। তিনি বলেন, এ যুদ্ধের পরিণতি হতে পারে বিপর্যয়কর। সংঘাতটি ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থেকে মধ্যপ্রাচ্যকে রক্ষা করতে হবে। আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি আসন্ন বলে সব ইঙ্গিতে উঠে আসছে। আগামী দিনগুলোতে এ বিপর্যয়ের বেদনাদায়ক পরিণতি দেখা দেবে। সংঘাত অবসানে কূটনৈতিক উদ্যোগেও কোনো ফল আসছে না। যুদ্ধ বন্ধের সিদ্ধান্ত আমাদের হাতে নেই। এটি ইসরায়েলের হাতে। যুদ্ধ অবসানে আমাদের সব উদ্যোগ নিয়োজিত করতে হবে।

পুতিন ও হামাসে পার্থক্য নেই : জাতির উদ্দেশে পূর্বনির্ধারিত ভাষণে ইসরায়েল ও ইউক্রেনের প্রতি জোরালো সমর্থনের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এ সময় তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে একই সুতোয় গাঁথা বলে মন্তব্য করেছেন। বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনের ওভাল অফিস থেকে ভাষণে বাইডেন বলেন, ‘হামাস গোষ্ঠী ও পুতিন আলাদা হামলার প্রতিনিধিত্ব করে। কিন্তু তাদের নৈতিকতা একই। উভয়ই প্রতিবেশীর গণতন্ত্রকে পুরোপুরি ধ্বংস করতে চায়। প্রকৃত অর্থে বিশ্ব মানচিত্রে একটি রাষ্ট্র হিসেবে ইউক্রেনের অবস্থান মেনে নিতে চান না পুতিন। তাকে থামানো না গেলে শুধু ইউক্রেনেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখবেন না।’ ইসরায়েল ও ইউক্রেনের সফলতা নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি। সমালোচনা রাশিয়ার : বাইডেনের মন্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছে রাশিয়া। এর আগে বিনিয়োগের বিষয় নিয়ে করা মন্তব্যের ব্যাপারেও দেশটি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা গতকাল মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে এ সমালোচনা করেন। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে বাইডেন ইউক্রেন ও ইসরায়েলকে সহায়তা দেওয়ার বিষয়টিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ হিসেবে অভিহিত করেন। এ মন্তব্যের বিষয়েও গতকাল প্রতিক্রিয়া জানান রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া। তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগ-সংক্রান্ত বাইডেনের মন্তব্য প্রমাণ করে, যুক্তরাষ্ট্র আদর্শিক কারণে লড়াইয়ে জড়ায় না। তারা ছায়াযুদ্ধ থেকে লাভবান হয়।’             

সর্বশেষ খবর