মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা
জাতীয় ইমাম সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

সন্ত্রাস নয়, শান্তি চাই

আরও ৫০ মডেল মসজিদ উদ্বোধন

নিজস্ব প্রতিবেদক

সন্ত্রাস নয়, শান্তি চাই

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলামকে শান্তি, সৌহার্দ ও মানবতার ধর্ম আখ্যায়িত করে ইমামদের প্রতি তৃণমূলে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, অন্যের ওপর কোনো অন্যায়-অবিচার বা সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ যেন সৃষ্টি না হতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আমরা চাই আমাদের মানুষ শান্তিতে বসবাস করুক।

এদেশকে আমরা আরও সমৃদ্ধ ও উন্নত করতে চাই। গতকাল ‘জাতীয় ইমাম সম্মেলন ও পুরস্কার বিতরণ-২০২৩’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে ধর্ম মন্ত্রণালয় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ষষ্ঠ দফায় সারা দেশে নবনির্মিত আরও ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছানোর পর প্রধানমন্ত্রী প্রথমে মদিনার পবিত্র মসজিদ-ই-নববীর ইমামের সঙ্গে অন্য দুটি প্যান্ডেল পরিদর্শন করেন। প্রধানমন্ত্রী এবং পবিত্র মসজিদ-ই-নববীর ইমাম উভয়ই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনুষ্ঠানস্থলে সমবেত ইমামদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত মতবিনিময় করেন। তিনি জাতীয় ইমাম কাউন্সিলে যোগ দেওয়ার জন্য ইমামদের ধন্যবাদ জানান এবং দেশ ও জনগণের মঙ্গল কামনা করার জন্য তাদের প্রতি আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ ইমাম এবং আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। মসজিদ-ই-নববীর ইমাম শেখ ড. আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান আল-বুয়াইজান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন তরিকত ফাউন্ডেশনের সভাপতি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, মাওলানা ড. মোহাম্মদ কফিল উদ্দিন সরকার সালেহী ও মাওলানা এহসানুল হক আল মোজাদ্দেদী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ধর্ম সচিব মো. এ হামিদ জমাদ্দার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা বা নির্যাতন না করার জন্য আপনাদের (ইমাম-মুয়াজ্জিন,আলেম, ওলামা) সহযোগিতা চাই। আপনাদের তৃণমূলে শান্তি বজায় রাখার জন্য কাজ করতে হবে যাতে আমরা দেশের আরও উন্নয়ন করতে পারি। সরকারপ্রধান কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে বলেন, যার যার ধর্ম সে পালন করবে এই বিষয়টা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। অন্যের ওপর কোনো অন্যায়-অবিচার বা সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ যেন সৃষ্টি না হতে পারে। কারণ, ইসলাম শান্তি সম্প্রীতি ও মানবতার ধর্ম। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তির ধর্ম ইসলামের মর্মবাণী একেবারে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে দিতে হবে। তাহলেই আমাদের দেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি। তিনি বলেন, আমাদের সব মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন এবং ওলামায়ে কেরামদের অনুরোধ করব-ইসলাম শান্তির ধর্ম, সহনশীলতার ধর্ম, যা আমাদের নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সা.) শিখিয়েছেন। তাঁর যে বিদায় হজের বাণী সেই বাণীই আমরা অনুসরণ করি। সরকারপ্রধান বলেন, কাজেই সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের দেশের কোনো ছেলেমেয়ে যেন জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে না পারে সেজন্য আপনারা যথাযথ শিক্ষা দেবেন এবং সঠিক ব্যবস্থা নেবেন। মুষ্টিমেয় লোকের জন্য আমাদের প্রকৃত যে ধর্ম, শান্তির ধর্ম, বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলাম যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার জন্যই আপনাদের সবাইকে অনুরোধ জানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলা মডেল মসজিদ এবং কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারি উপজেলা মডেল মসজিদের ইমাম-মুসল্লি ও বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। কভিড-১৯ দেখা দেওয়ার পর তাঁর সরকার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সারা দেশে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের জন্য আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করে দেয় উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, সরকার সারা দেশের দরিদ্র মানুষসহ সব শ্রেণি-পেশার জনগণকে আর্থিক সহায়তা ও প্রণোদনা দেওয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সৌদি বদশাহর সহযোগিতায় হজ ব্যবস্থার উন্নয়নে হজ ক্যাম্প স্থাপন ও ইমিগ্রেশন ব্যবস্থার উন্নয়নসহ তাঁর সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পদক্ষেপের উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া তাঁর সরকার দেশে একটি আরবি ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। যেখানে সৌদি বাদশাহর অনুদানে আরবি ভাষা শিক্ষারও একটি ইনস্টিটিউট গড়ে উঠবে।

কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদীসকে মাস্টার্স ডিগ্রির সমমর্যাদা প্রদান, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সংস্কার ও আধুনিকায়ন, ৩৫ হাজার মসজিদ ভিত্তিক পাঠাগার নির্মাণ, অর্থ ও বাংলা তরজমাসহ পবিত্র কোরআন শরিফের ডিজিটাল ভার্সন তৈরি, জাকাত তহবিল ব্যবস্থাপনা আইন-২০২৩ প্রণয়ন, সিড মানি দিয়ে ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেছে। বিত্তবানরাও এখানে সহায়তা দিতে পারেন।

দেশের ভূমিহীন গৃহহীন প্রত্যেককে বিনা পয়সায় ঘর দেওয়া এবং জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা তাঁর সরকার করে দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাবা-মা-ভাই সব হারিয়ে একজন এতিম হিসেবে নিজের ও পরিবার এবং দেশকে সফলভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সবার দোয়া চাই। অনুষ্ঠানে তিনি ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ইসরায়েলি আগ্রাসনের আবারো নিন্দা জানিয়ে বলেন, ইসরায়েল কতৃর্ক আমাদের ফিলিস্তিনি ভাইদের ওপর যে আক্রমণ এবং নির্বিচারে ছোট্ট শিশু ও নারী হত্যা করা হচ্ছে আমরা এটা কখনো চাই না। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সাধ্যমতো ফিলিস্তিনের নারী-শিশু ও সাধারণ জনগণের জন্য ওষুধ ও শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও মানবতার ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে এনেছে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই সবাই শান্তিতে বসবাস করুক। তাঁর সাম্প্রতিক বেলজিয়াম সফরেও তিনি বিভিন্ন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে যুদ্ধ থামানোর আহ্বান জানিয়েছেন বলেও জানান। প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি কাজে লাগানোর মাধ্যমে দেশের সার্বিক উৎপাদন বাড়ানোয় তাঁর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, যার যেটুকু জমি আছে তাতে ফসল ফলাতে হবে। খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। কারণ, আমরা কারও কাছে হাত পেতে চলব না। জাতির পিতা যে বলেছিলেন ‘তাঁর মাটি আছে, মানুষ আছে, তা দিয়েই তিনি দেশকে গড়ে তুলবেন,’ সেভাবেই আমরা দেশকে গড়ে তুলব। কোনোভাবেই আমাদের দেশের মানুষ যেন খাদ্যের জন্য কষ্ট না পায়। তাঁর সরকারের ১ কোটি মানুষকে বিশেষ খাদ্য সহায়তা কার্ড প্রদানেরও উল্লেখ করেন তিনি। সরকারপ্রধান সবার দোয়া চেয়ে বলেন, আপনারা দোয়া করবেন যেন দেশের মানুষের সেবা করে যেতে পারি। আর বাংলাদেশ আজ যে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে সেই উন্নয়ন যেন অব্যাহত থাকে। ভবিষ্যতে এই বাংলাদেশকে যেন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর