মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

সাকিব বাবরের জয়ে ফেরার ম্যাচ

কলকাতার বয়স প্রায় ৩০০ বছর। ‘সিটি অব জয়’ বা ‘আনন্দ নগরী’ কলকাতা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সঙ্গে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে দেশের মাটিতে যুদ্ধ করতেন মুক্তিযোদ্ধারা। কলকাতায় বসে যুদ্ধ পরিচালনা করতেন মুজিবনগর প্রবাসী সরকার। প্রবাসী সরকারের ঠিকানা ছিল ৮ নম্বর থিয়েটার রোড। যা এখন শেকসপিয়র স্মরণী নামে পরিচিত। ঐতিহাসিক থিয়েটার রোডের একটি বাড়ির অরবিন্দ ভবন। ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম বীর অরবিন্দ ঘোষের এই ভবন থেকে সৈয়দ নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রবাসী সরকার মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করতেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরিয়েছে। ইতিহাসখ্যাত বাড়িটি আগের মতোই আছে। শুধু নেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কোনো স্মৃতি। এমনকি নামফলকও নেই। অরবিন্দ ভবনের নাম হঠাৎ উঠে আসার কারণ পাকিস্তান। দেশটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা কলকাতায় আজ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলবে বাংলাদেশ। অরবিন্দের বাড়ি থেকে ‘নন্দনকানন’ ইডেন গার্ডেনের দূরত্ব মাত্র ২ কিলোমিটার। বিশ্বকাপে সাকিব বাহিনীর এটা সপ্তম ম্যাচ। যদিও নন্দনকাননে এর আগেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলেছে। ২০১৬ সালের টি-২০ বিশ্বকাপে হেরেছিল টাইগাররা। কিন্তু আজকের ম্যাচটির গুরুত্ব একেবারেই ভিন্ন। সেমিফাইনাল খেলার সম্ভাবনাকে আড়াল করে আলোচনায় উঠে এসেছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলবে বিশ্বকাপের শীর্ষ ৮ দল। আসরে সরাসরি খেলবে স্বাগতিক পাকিস্তান। বাকি ৭ দলে থাকতে আজ জয়ের বিকল্প নেই সাকিবদের। জিততেই হবে। পাকিস্তানকে হারানোর জন্যই খেলবে দল। টাইগার অধিনায়ক সাকিব বলেন, ‘চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি অবশ্যই মুখ্য বিষয়। তবে পয়েন্ট টেবিলের একটু ওপরের দিকে থাকতে পারাটাও অনেক। আমরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয়ের জন্যই খেলব।’

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচ সবসময়ই মর্যাদার। এবার পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। ১৯৯২ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সাকিবরা খেলবেন পয়েন্ট টেবিলের নয় নম্বরে থেকে। পয়েন্ট টেবিলের ছয় নম্বরে পাকিস্তান। দুই দলেরই বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন প্রায় ফিকে হয়ে এসেছে। আসরে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের জয় একটি এবং পাকিস্তান জিতেছে দুটি। দুই দল পরস্পরের বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলেছে ৩৫টি। বাংলাদেশের ৫ জয়ের বিপরীতে পাকিস্তানের জয় ৩৩টি। পরিসংখ্যান, ঐতিহ্য ও শক্তিমত্তায় সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা অনেক এগিয়ে। তারপরও দিনের খেলা ক্রিকেট বলে স্বপ্ন দেখছে সাকিবরা। বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয়ের রেকর্ড রয়েছে বাংলাদেশের। ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানকে ৬১ রানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই ম্যাচের আত্মবিশ্বাস নিয়ে আজ খেলবে সাকিব বাহিনী। যদিও টানা পাঁচ ম্যাচ হেরে খাদের কিনারায় এসে দাঁড়িয়ে আছে ক্রিকেটাররা। তারপরও জয়ই টার্গেট সাকিবের, ‘আমি কোনো দলকেই আলাদা করে রেট করতে চাই না। আমরা বিশ্বকাপ খেলতে এসেছি। প্রতিটি ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ। কালকের (আজ) ম্যাচ আলাদা কিছু নয়। আগে যেভাবে খেলেছিলাম সেভাবেই নিচ্ছি।’ নেদারল্যান্ডস ম্যাচ দেখতে প্রায় ২০ হাজার দর্শক আসেন কলকাতায়। বাজে ব্যাটিং ব্যর্থতায় ডাচ বাহিনীর কাছে হেরেছে ৮৭ রানে। আইসিসি সহযোগী দেশের বিরুদ্ধে হারের ধাক্কা সামলাতে পারেননি ক্রিকেটপ্রেমীরা। তাই আজকের ম্যাচ নিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখতে আসা অনেকেই ফিরে গেছেন দেশে। যারা রয়ে গেছেন, তারাও টাইগারদের পারফরম্যান্সে হতাশ হয়ে খেলা না দেখার কথা ভাবছেন। আজ একাদশে পরিবর্তন আসতে পারে। শেখ মেহেদির জায়গায় খেলতে পারেন বাঁ-হাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ। ব্যাটিং অর্ডারেও পরিবর্তন আসতে পারে। ৭ নম্বর থেকে চারে খেলতে পারেন ‘সেঞ্চুরিম্যান’ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।

সর্বশেষ খবর