মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

সংসদ নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু কাল

ব্যালট পাঠানোর সময় নিয়ে ভাবনা

গোলাম রাব্বানী

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। আগামীকাল ১ নভেম্বর সংসদ নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হওয়ায় ৫ নভেম্বরের মধ্যে সাক্ষাৎ শেষ করতে চায় সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসির আনুষ্ঠানিক সাক্ষাতের প্রাথমিক তারিখ ৫ নভেম্বর হবে। এ ছাড়া ১ নভেম্বর প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ইসির সাক্ষাতের সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। ইসির এ-সংক্রান্ত এক চিঠিতে বলা হয়- নভেম্বরের মাঝামাঝিতে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে।

সূত্র জানিয়েছে, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসির সাক্ষাৎ একটা ফরমালিটিজ। সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়। এ জন্য ইতোমধ্যে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। ৫ নভেম্বর ইসির এ সৌজন্য সাক্ষাৎ হতে পারে। সংসদ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে ১ নভেম্বর সরকারের বিভিন্ন বিভাগ, মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করবে ইসি। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এর পরেই ৫/৬ নভেম্বর কমিশন সভা হওয়ার কথা রয়েছে। কমিশন সভা শেষে সংসদ নির্বাচনের জন্য রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ হতে পারে। এরপরে ১৩/১৪ নভেম্বর ভোটের তারিখ ঘোষণা হওয়ার কথা রয়েছে। তবে রিটার্নিং অফিসার নিয়োগের দিন নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার তারিখও জানিয়ে দিতে পারে কমিশন। আর সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ বা জানুয়ারির শুরুতে।

সর্বশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে তৎকালীন সিইসি কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এর এক সপ্তাহ পরে ৮ নভেম্বর সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। দশম সংসদ নির্বাচনের আগে তৎকালীন সিইসির নেতৃত্বে ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। তার এক সপ্তাহের মাথায় ২৫ নভেম্বর ভোটের তফসিল ঘোষণা করা হয়। সাংবিধানিকভাবে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ নির্বাচন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। সে ক্ষেত্রে ১ নভেম্বর শুরু হবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা।

ব্যালট পাঠানোর সময় নিয়ে ভাবনা : দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতির মধ্যে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি ঘিরে গতকাল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন। রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে অবনতি না ঘটে সে বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। বৈঠকসূত্র জানিয়েছেন, সভায় সংসদ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতির মধ্যে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি ঘিরে গতকাল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন। রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে অবনতি না ঘটে সে বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। বৈঠকসূত্র জানিয়েছেন, সভায় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট কখন পাঠানো হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া আলোচ্যসূচিতে ১৯টি বিষয়ও ছিল। এর মধ্যে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ; নির্বাচনকালীন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি; সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা; অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ন্ত্রণ; নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টি; ভোট কেন্দ্র, রিটার্নিং অফিসারসহ নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সিইসি ও নির্বাচন কমিশনাররা বেশকিছু নির্দেশনাও দিয়েছেন।

বৈঠকসূত্র জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা সভার একপর্যায়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ভোটের দিন সকালে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট পৌঁছাতে গেলে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থার প্রয়োজন হবে; এ ক্ষেত্রে জনবল সংকট দেখা দেবে। ইসি বলেছে, পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে নির্বাচন কমিশন বিতর্ক এড়াতে আসন্ন দ্বাদশ জতীয় সংসদ নির্বাচনে দুর্গম এলাকাগুলো বাদে সারা দেশে ভোট কেন্দ্রগুলোয় ভোটের দিন সকালে ব্যালট পেপার পাঠানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল।

ভোট আয়োজনে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই : নভেম্বরের প্রথমার্ধে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতির মধ্যে বিরাজমান পরিবেশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ভালো বলে কমিশনকে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। ভোট আয়োজনে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। গতকাল আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা সভা হয়েছে। সভায় চার নির্বাচন কমিশনার উপস্থিত ছিলেন। বেলা ১১টা থেকে আড়াই ঘণ্টা বৈঠক চলে।

আইনশৃঙ্খলা সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, বিজিব, র‌্যাব, আনসার-ভিডিপি, কোস্টগার্ড, গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তি ও প্রতিনিধিরা অংশ নেন। বৈঠক শেষে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানান, একটি বড় রাজনৈতিক দল হরতাল শেষে সর্বাত্মক অবরোধের কর্মসূচি দিয়েছে। কমিশনের কাছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিবেদনমতে মনে হয়েছে এখন পর্যন্ত পরিবেশ সন্তোষজনক রয়েছে। তিনি বলেন, গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানরা যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাদের যে প্রতিবেদন এখন পর্যন্ত নির্বাচন আয়োজনে বড় ধরনের কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। যেহেতু রবিবার হরতালের পর তিন দিনের অবরোধ দিয়েছে বিএনপি, সে বিষয়ে তারা সতর্ক রয়েছেন যাতে আইনশৃঙ্খলার কোনো অবনতি না ঘটে। ইসি সচিব জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে করণীয় নির্ধারণে বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে এ সভা। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচপূর্ব, নির্বাচনকালীন ও নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ কীভাবে নিশ্চিত করা হবে, কোন পদ্ধতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে, নির্বাচনে সম্পৃক্ত বিষয় ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের সার্বিক বিষয় এ সভায় আলোচনা হয়েছে। ভোটের আগে আরও অনেক সভা হবে।

ইসি সচিব বলেন, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তাদের তথ্য উপস্থপান করেছে, বিভিন্ন বাহিনী প্রধান তাদের ক্যাপাসিটি কী আছে, অতীতে তাদের জনবল কীভাবে কেন্দ্রে ও অন্য কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে; দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কীভাবে দায়িত্ব পালন করবে তা তুলে ধরা হয়েছে। তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলা সভায় ইসি বক্তব্য শুনেছে এবং কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। এ আলোকে পরবর্তীতে পরিপত্র জারি, কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কীভাবে মোতায়েন করা হবে, পরবর্তীতে সেখানে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হবে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানরা যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাদের যে প্রতিবেদন এখন পর্যন্ত নির্বাচন আয়োজনে বড় ধরনের কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। তিনি জানান, নির্বাচনের যেসব ধাপ রয়েছে ভোটের তফসিল ঘোষণা থেকে প্রতীক বরাদ্দ, তফসিলের আগে-পরে, ভোটের তারিখে যখন যে পরিস্থিতি হবে তা কমিশনকে অবহিত করবে এবং পদক্ষেপ নিতে স্ট্র্যাটেজি, সিদ্ধান্ত নেবে। ভোট কেন্দ্রে ব্যালট পেপার কবে পাঠানো হবে, সকালে নাকি আগের রাতে তা নিয়ে পরে সিদ্ধান্ত হবে। এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘নভেম্বরের প্রথমার্ধের যে কোনো সময় তফসিল হবে তা কমিশন ইতোমধ্যে অবহিত করেছে। এখনো অনেক সময় রয়েছে। এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মিটিং হবে, পরিপত্র জারি হবে, ওই সময়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় কমিশন আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।

সর্বশেষ খবর