মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা
হোলি আর্টিজান মামলা

সাত জঙ্গির শাস্তি কমে আমৃত্যু জেল

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর গুলশানের চাঞ্চল্যকর হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালিয়ে দেশি-বিদেশি ২০ জনকে হত্যার দায়ে সাত জঙ্গিকে বিচারিক আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন হাই কোর্ট। গতকাল বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ ডেথ রেফারেন্স খারিজ ও আসামিদের আপিল ও জেল আপিল আংশিক মঞ্জুর করে এ রায় দেন। একই সঙ্গে তাদের ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করেন আদালত। আদালত পুরো রায়টি বাংলায় ঘোষণা করেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে হাই কোর্ট বলেন, দেশি-বিদেশি ২০ নাগরিক এবং দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে যে নিষ্ঠুর ও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, তাতে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। এ ছাড়া এমন নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড জনসাধারণের মনে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে এবং জননিরাপত্তা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত করেছে বলেও উল্লেখ করেন আদালত। রায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া আসা?মিরা হলেন জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র‌্যাশ, আবদুস সবুর খান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, হাদিসুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশিদ।

গতকাল বেলা ১১টা ২৮ মিনিটে বহুল আলোচিত এ মামলার রায় পড়া শুরু করেন বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান। এ সময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নির্মল কুমার দাশ। এ ছাড়া আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট আমিমুল এহসান জুবায়ের এবং আসামিপক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী এস এম শফিকুল ইসলাম আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায়ে আদালত বলেন, ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন-২০০৯-এর ধারা ৬ (১) (ক) (আ) ধারার অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আপিলকারী ১. মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ২. মো. আসলাম হোসেন সরদার ওরফে মোহন ৩. মো. আবদুস সবুর খান (হাসান) ৪. রাকিবুল হাসান রিগ্যান ওরফে রাফিউল ইসলাম ৫. মো. হাদিসুর রহমান ৬. মো. শরিফুল ইসলাম খালেদ এবং ৭. মামুনুর রশিদ রিপনকে আইনের ৬(২)(আ) ধারায় বর্ণিত সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো।’

রায়ের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, রায়ের বিষয়টি অ্যাটর্নি জেনারেলকে জানানো হয়েছে। তিনি সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

অন্যদিকে সাজা কমার বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিমুল এহসান জুবায়ের সাংবাদিকদের জানান, বিচারিক আদালত যে ধারায় আমামিদের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন, সেই ধারায় আসামিদের অপরাধ হয়নি। সন্ত্রাসবিরোধী আইন-২০০৯-এর ধারা ৬-এর (আ)-তে অপরাধ করেছে। এ ধারায় সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন। কিন্তু বিচারিক আদালত ভুল করে ‘অ’ উপধারায় সাজা দিয়েছেন। হাই কোর্ট রায়ে বলেছেন, বিচারিক আদালত ভুল ধারায় সাজা দিয়েছেন, যে কারণে উচ্চ আদালত সেই রায়ে হস্তক্ষেপ করে আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা দিয়েছেন। হাই কোর্টের এ রায়েও সন্তুষ্ট নন বলে জানান আসামিপক্ষের এই আইনজীবী।

সাত বছর আগে ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে রাজধানীর গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে নৃশংস হামলা চালায় জঙ্গিরা। তারা অস্ত্রের মুখে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে। পরে কুপিয়ে এবং গুলি করে তারা দেশি-বিদেশি ২২ নাগরিককে হত্যা করে। নিহতের মধ্যে ইতালির নয়জন, জাপানের সাতজন, ভারতের একজন ও বাংলাদেশি তিনজন ছিলেন। সে রাতে জিম্মিদের মুক্ত করতে অভিযান চালাতে গিয়ে জঙ্গিদের বোমা হামলায় নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তা। ভয়াবহ এ জঙ্গি হামলায় স্তম্ভিত হয়ে পড়ে পুরো দেশ।

এ ঘটনায় করা মামলায় ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর বিচারিক আদালত রায় দেন। রায়ে নব্য জেএমবির উল্লিখিত সাত সদস্যকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। বিচারিক আদালতের রায়ে মিজানুর রহমান নামে একজন খালাস পান। বিচারিক আদালত কোনো আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিলে তা কার্যকরে হাই কোর্টের অনুমোদন লাগে, যা ডেথ রেফারেন্স হিসেবে পরিচিত। নিয়ম হলো, বিচারিক আদালতে কোনো মামলার রায়ের পর মামলাসংক্রান্ত সব কাগজপত্র হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দিতে হয়, যা ডেথ রেফারেন্স হিসেবে নথিভুক্ত হয়। হোলি আর্টিজান মামলার ডেথ রেফারেন্স প্রস্তুত হয় ২০১৯ সালে। ডেথ রেফারেন্সের শুনানির জন্য অগ্রাধিকারভিত্তিতে এ মামলার পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) প্রস্তুত করা হয়। এদিকে দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা পৃথক আপিল ও জেল আপিল করেন। ডেথ রেফারেন্স আসামিদের করা আপিল ও জেল আপিল একসঙ্গে শুনানির জন্য গত ১৫ জানুয়ারি হাই কোর্টের কার্যতালিকায় ওঠে। পরে বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চে মামলার শুনানি হয়। ১১ অক্টোবর শুনানি শেষে রায়ের জন্য গতকালের দিন ধার্য করেন হাই কোর্ট।

 

সর্বশেষ খবর