বুধবার, ১ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

আত্মগোপনে সিনিয়র নেতারা

শফিউল আলম দোলন ও শফিকুল ইসলাম সোহাগ

২৮ অক্টোবর রাজধানীতে এক দফা দাবিতে মহাসমাবেশ কেন্দ্র করে সংঘর্ষের পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। রবিবার মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আটকের পর থেকেই সিনিয়র নেতারা গ্রেফতার এড়াতে কৌশলী অবস্থানে আছেন। এ অবস্থায় আগামীতে আন্দোলন কর্মসূচির নেতৃত্ব দেবেন কারা? কোথা থেকেই বা আসবে দিকনির্দেশনা? শেষ পর্যন্ত কি পিছু হটবে বিএনপি- এমন নানা প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলে। তবে দলটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে গ্রেফতার এড়াতে কৌশলগত কারণে দলের সিনিয়র নেতারা আত্মগোপনে রয়েছেন। সিনিয়ররা আত্মগোপনে থেকেই চলমান আন্দোলন অব্যাহত রাখতে চান। তাদের দাবি-আন্দোলন চলমান রাখার জন্য কয়েক স্তরের নেতৃত্ব প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ৭২ ঘণ্টার কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর ঘোষণা করা হবে নতুন কর্মসূচি। এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন বন্দি। তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে দেশান্তরি করে রাখা হয়েছে। তাতে কি বিএনপি শেষ হয়ে গেছে। আন্দোলন থেমে গেছে? মির্জা ফখরুলকে আটক করেও আন্দোলন স্তব্ধ করা যাবে না। যে আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা থাকে সে আন্দোলন বৃথা যায় না। বিএনপির সব নেতা-কর্মীদের আটক করলেও জনগণই বিএনপির হয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন সফল করবে। জানা গেছে, আত্মগোপনে থেকেই দলের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন সিনিয়র নেতা আন্দোলন সমন্বয় করছেন। তাদের কৌশলগত অবস্থানে থেকে গ্রেফতার এড়াতে হাইকমান্ড থেকে বলা হয়েছে। নেতৃত্বের প্রথম সারিতে থাকবেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। তারা গ্রেফতার হলে অথবা তাদের অনুপস্থিতিতে নেতৃত্ব দেবেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান বা চেয়ারপারসনের উপদেষ্টারা। তৃতীয় সারিতে আছেন দলের যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক, নির্বাহী কমিটির বিভিন্ন পর্যায়ের সম্পাদক ও কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যরা। অথবা অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা। একই নিয়ম তৃণমূলের নেতৃত্বের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। গত শনিবারের সংঘটিত সংঘর্ষে পুলিশসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এতে রাজধানীতেই ২৮ মামলা হয়। এসব মামলায় বিএনপির শীর্ষ নেতাসহ আসামি করা হয় অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের। ২৯ অক্টোবর সারা দেশে হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। ওইদিনই বিএনপির সিনিয়র নেতাদের গ্রেফতারে বাসায় বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ প্রশাসন। শীর্ষ নেতাদের বাসায় পুলিশি অভিযানের পর হরতাল কর্মসূচিতেও তাদের দেখা মেলেনি। প্রশ্ন উঠেছে, মাঠ কাঁপানো বিএনপির নেতারা এখন কোথায়? এ বিষয়ে বিএনপির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, এই মুহূর্তে গ্রেফতার এড়িয়ে থাকাটাই সমীচীন। তাদের বক্তব্য হলো ২৮ তারিখের ঘটনায় চলমান আন্দোলনে এতটুকু ছেদ পড়েনি। সরকার পুলিশ দিয়ে সমাবেশ প- করে, নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে আন্দোলন দমিয়ে রাখার যে কৌশল করছে তা সফল হবে না। ঢাকাসহ দেশব্যাপী ধারাবাহিক আন্দোলন চলতে থাকবে বলে দলের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। নেতারা বলছেন, বিএনপি এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে তা আগে থেকেই জানত দলটির হাইকমান্ড। তাই পর্যায়ক্রমে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। আন্দোলন চলাকালে লন্ডন থেকে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যোগাযোগ রাখছেন। রবিবার ভার্চুয়ালি বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আন্দোলন কর্মসূচি প্রণয়ন ও পরবর্তী করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দলটির নীতিনির্ধারণী ফোরামের এক নেতা বলেন, চলমান ৭২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচিও আরও কঠোরভাবে পালনে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৭২ ঘণ্টার কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর নতুন কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির প্রধান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তা চলবে। আর পিছনে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাহলে দেশও বাঁচবে না, মানুষও বাঁচবে না। সমগ্র জাতি অস্তিত্বের সংকটে পড়ে যাবে। তিনি দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষকে এই ‘দেশ রক্ষার আন্দোলনে’ সক্রিয় হওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর