বুধবার, ১ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

অবরোধের প্রথম দিনেও মাঠে ছিল আওয়ামী লীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি-জামায়াতের ডাকা টানা তিন দিনের অবরোধের প্রথম দিনে রাজধানীতে মাঠে ছিলেন আওয়ামী লীগ, সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। গতকাল সকাল থেকেই অবরোধ কর্মসূচি প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সতর্ক প্রহরায় ছিলেন তারা। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে সমাবেশ, মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা। এদিকে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত দেশব্যাপী শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ২৮ অক্টোবরের ঘটনাপ্রবাহের পর আওয়ামী লীগের রাজপথের শক্তিমত্তা এখন আরও পোক্ত ও একতরফা হয়ে উঠেছে। আগের চেয়েও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। অন্যদিকে, সহিংসতার মামলায় ধরপাকড়ের কারণে আরও চাপে পড়তে যাচ্ছে বিএনপি। ২৮ অক্টোবর সংঘাতের পর বিএনপিকে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ দিতে নারাজ আওয়ামী লীগ। বিএনপি-জামায়াত রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে নাশকতা করতে না পারে সেজন্য সর্বাত্মক সতর্ক অবস্থানে থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার দলীয় নির্দেশনা মেনে দলটির সব ইউনিটের নেতা-কর্মীরা গতকাল দিনভর সতর্ক প্রহরায় ছিল। সকাল থেকেই ঢাকা মহানগরীর পাড়া মহল্লা, ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ে সতর্ক অবস্থান নিতে দেখা যায় তাদের। অবস্থান কর্মসূচি, বিক্ষোভ মিছিল করেছে সহযোগী সংগঠনগুলোও। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে অবস্থান ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ। অংশ নেন মহানগর থেকে শুরু করে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা।

সকাল পৌনে ১০টা থেকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আসতে শুরু করেন নেতা-কর্মীরা। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর নেতৃত্বে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিরাজ হোসেন, মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সারওয়ার কবি, দফতর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাইফুন্নবী সাগর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। দুপুর ১২টার দিকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলির নেতৃত্বাধীন যুব মহিলা লীগ। নেত্রীদের স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে ২৩ নম্বর বঙ্গবন্ধু এভিনিউ প্রাঙ্গণ।

সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউ থেকে শুরু হয়ে জিপিও জিরো পয়েন্ট হয়ে আবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করেছে আওয়ামী যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. তাজউদ্দিন আহমেদ, জসিম মাতব্বর, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জয়দেব নন্দী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইন উদ্দিন রানা, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা, কেন্দ্রীয় কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক হারিজ উদ্দিন সাগর, সদস্য মানিক লাল ঘোষ, আসাদুজ্জামান আজম প্রমুখ।

‘বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে এবং দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচির প্রতিবাদে’ দুপুর ১২টায় পুরান ঢাকার নর্থ-সাউথ রোডে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি থেকে জনগণের জানমালের নিরাপত্তার জন্য প্রিয় নেত্রীর নির্দেশে আমরা রাজপথে আছি এবং রাজপথেই থাকব। পরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এতে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী অংশ নেন। মিছিলটি ইংলিশ রোডের তাঁতীবাজার মোড় ঘুরে আবার নর্থ-সাউথ রোডের সুরিটোলা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সকাল ১০টায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপনের নেতৃত্বে শনির আখড়া দনিয়া কলেজের সামনে থেকে শুরু হয়ে ঢাকা-৫ আসনের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। সকালে ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য কাজী মনিরুল ইসলাম মনুর নেতৃত্বে যাত্রাবাড়ী মোড়ে অবস্থান নেয় যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগ। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হারুনর রশিদ মুন্নার নেতৃত্বে যাত্রাবাড়ী শেখ রাসেল পার্কের সামনে অবস্থান নিতে দেখা যায় নেতা-কর্মীদের।  সেখানে বক্তৃতা করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সারোয়ার কবির, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক চৌধুরী সাইফুন্নবী সাগর।

উপস্থিত ছিলেন ৪৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গিয়াস উদ্দিন গেসু, সাধারণ সম্পাদক ও কাউন্সিল হাজী আবুল কালাম অনু, ডেমরা থানা আওয়ামী মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক নিলুফা ইয়াসমিন লাকী। ডেমরা চৌরাস্তায় বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও প্রয়াত এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার ছেলে আলহাজ মশিউর রহমান মোল্লা সজল। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের নেতৃত্বে উত্তরা, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর, আদাবরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচির নেতৃত্বে সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয় মিরপুর, বাড্ডা, গাবতলী ও পল্লবীতে। এ সময় ঢাকা মহানগর উত্তরের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান, আগা খান মিন্টু এমপি, এবিএম মাজহার আনাম, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক মিজানুল ইসলাম মিজান উপস্থিত ছিলেন। এদিকে, কাফরুলে ঢাকা-১৫ আসনের সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদারের নেতৃত্বে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক উইলিয়াম প্রলয় সমদ্দার বাপ্পি। ক্যান্টনমেন্ট ও ভাসানটেক এলাকায় লে. কর্নেল (অব.) কানিজ ফাতেমা ও খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে সমাবেশ ও মিছিল হয়েছে। রূপনগর থানার উদ্যোগে চলন্তিকা মোড়েও শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানীর অন্যতম প্রবেশদ্বার আবদুল্লাহপুর থেকে বিমানবন্দর সড়ক হয়ে খিলক্ষেত পর্যন্ত শান্তি সমাবেশ ও মিছিল করেছে মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. খসরু চৌধুরীর অনুসারী নেতা-কর্মীরা। শ্যামলী টাওয়ারের নিচে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফোরকান হোসেনের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এদিকে, বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি করেছে শেরেবাংলা নগর থানা আওয়ামী লীগ। এতে নেতৃত্ব দেন ৯৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন সোহেল। বক্তব্য রাখেন শেরেবাংলা নগর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাব্বির হোসেন মাসুদ।

ফার্মগেট-পান্থপথ ও গ্রিনরোডসহ ৫টি পয়েন্টে অবস্থান নেয় স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। মোহাম্মদপুর বাবর রোডে অবস্থান নেওয়া নেতা-কর্মীদের কারও কারও হাতে বাঁশ ও কাঠের লাঠি দেখা যায়। লাঠিতে দলীয় পতাকা বাঁধা। দারুস সালাম থানা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা গাবতলী বাস টার্মিনালের সামনে অবস্থান নেন।

সর্বশেষ খবর