বুধবার, ১ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

মেসির হাতে অষ্টম ব্যালন ডি’অর

ক্রীড়া প্রতিবেদক

মেসির হাতে অষ্টম ব্যালন ডি’অর

ফুটবল পায়ে একেকটি জাদুকরী মুহূর্ত উপহার দিচ্ছেন লিওনেল মেসি। সেই দৃশ্য দেখে সারা বিশ্ব তার পদচুম্বনের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠছে। গত দেড় যুগ এমনই হয়েছে ফুটবলে।

গত বছর যা ছাড়িয়ে গেছে অতীতের সব মুহূর্তকে। কাতারে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে লাখো দর্শক স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে কুর্ণিশ করেছেন ফুটবলের মহারাজাকে। বিশ্বকাপের মহামঞ্চে প্রতিটা ম্যাচেই তিনি আলো ছড়িয়েছেন। তার বাম পায়ের স্পর্শে ফুটবল গতি পেয়েছে। সেই গতি তৈরি করেছে এক মায়াজাল। মোহিত করেছে পুরো বিশ্বকে। প্রতিপক্ষের সব রণকৌশল একাই ব্যর্থ করে দিয়েছেন লিওনেল মেসি। জয় করেছেন বিশ্বকাপ। জয় করেছেন ফুটবলপ্রেমিকদের মন। এবার জয় করলেন ব্যালন ডি’অরের অষ্টম ট্রফি।

অনেক বছর আগে এক ফুটবলবোদ্ধা বলেছিলেন, মেসির হাতে বিশ্বকাপ ট্রফি উঠলে তিনিই হবেন ফুটবলের পঞ্চম রাজা। আর্জেন্টিনার আলফ্রেডো ডি স্টেফানো, হাঙ্গেরির পুসকাস, ব্রাজিলের পেলে এবং নেদারল্যান্ডসের ইয়োহান ক্রুইফ ছিলেন ফুটবলের চার রাজা। গত বছর বিশ্বকাপ জয়ের পর কেবল রাজাই নন, মহারাজার খেতাব পেয়ে গেছেন লিওনেল মেসি। সেই রাজারই যেন অভিষেক হলো প্যারিসের ব্যালন ডি’অর মঞ্চে। ডেভিড বেকহ্যামের কাছ থেকে ব্যালন ডি’অর ট্রফি নিয়ে ‘মহারাজ মেসি’ স্মিত হাস্যে এগিয়ে যান সামনের দিকে।

মঞ্চ তখন পুরোটাই তার। দিদিয়ের দ্রগবা ও বেকহ্যাম পেছনে সরে দাঁড়ান। চারদিক আলোকিত করে তোলেন মেসি।

অষ্টম ব্যালন ডি’অর। সংখ্যাটা শুনতে বড় সহজ মনে হতে পারে। এ আর এমন কী! লিওনেল মেসিই এমনটা ভাবতে সাহায্য করেছেন। ২০০৯ সালে শুরু। এরপর ২০১০, ২০১১, ২০১২ সালে টানা ব্যালন ডি’অর জয় করেন তিনি। দুই বছর বিরতির পর ২০১৫ সালে আবারও মেসির হাতে ওঠে এই সোনালি ট্রফি। অনেকেই ভেবেছিলেন, এটাই হয়তো মেসির শেষ। কিন্তু অতীতকে ছাড়িয়ে যাওয়ার এক অদম্য নেশায় যেন পেয়ে বসেছিল মেসিকে। একের পর এক রেকর্ড গড়লেন তিনি। ২০১৯ সালে ফের জয় করলেন এই ট্রফি। ২০২১ সালে আর্জেন্টিনাকে উপহার দেন কোপা আমেরিকা। সেবারও ব্যালন ডি’অর লড়াইয়ে মেসি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দী। ২০২৩ সালে মেসিকে ছাড়া অন্য কাউকে ভাবাও তো যায়নি! এমন একটা বিশ্বকাপ জয়ের পর আর কেই বা দাবি করতে পারত ট্রফিটা!

অষ্টম ব্যালন ডি’অর সংখ্যাটা তাই মেসির নামের পাশে খুবই সহজ একটা সংখ্যা। কিন্তু অন্যদের জন্য! মিশেল প্লাতিনি, ইয়োহান ক্রুইফ এবং মারকো ফন বাস্তেন। তিনজনই ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা। তিনবার করে ব্যালন ডি’অর জয় করেছেন তিনজনেই। মেসি-রোনালদো যুগ শুরুর আগে ভাবা হতো, তিনবার কী ব্যালন ডি’অর জয় করা সম্ভব হবে কোনো ফুটবলারের পক্ষে! সেই সংখ্যাটা এখন বড্ড ছোট করে দিয়েছেন এ দুজন। রোনালদোর ঝুলিতেও যে পাঁচটা ব্যালন ডি’অর ট্রফি আছে। তিনি ২০০৮ সালে প্রথমবার এই সোনালি ট্রফি হাতে তোলেন। এরপর ২০১৩, ২০১৪, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে আরও চারবার ব্যালন ডি’অর জয় করেন রোনালদো। পর্তুগিজ তারকার সংখ্যাটা স্পর্শ করাই এক দুঃসাধ্য ব্যাপার। মেসি তো তার চেয়েও তিন ধাপ ওপরে দাঁড়িয়ে বিজয়ীর হাসি হাসছেন!

আর কতদূর যাবেন মেসি! এটাই কী শেষ ট্রফি! ব্যালন ডি’অরের আলোকিত মঞ্চে দাঁড়িয়ে মেসি সোজা গলায় বলে দিলেন, ভবিষ্যৎটা ভবিষ্যতের হাতেই তোলা থাক। আপাতত বর্তমানটা নিয়েই পড়ে আছেন তিনি। খেলতে চান সামনের বছরের কোপা আমেরিকা। সেখানে বিজয়ী হলে, মেসির হাতে হয়তো নবম ব্যালন ডি’অরও দেখা যেতে পারে!

সর্বশেষ খবর