বৃহস্পতিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
গার্মেন্টস সংকটের সমাধান কোথায়

কাজ না করলে বেতন পাবে না শ্রমিকরা

বিজিএমইএ

নিজস্ব প্রতিবেদক

পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা বিশৃঙ্খলায় অংশ নিয়ে কাজ বন্ধ রাখলে কিংবা বিশৃঙ্খলার কারণে কারখানা বন্ধ রাখতে হলে শ্রম আইনের ১৩(১) ধারা অনুযায়ী ‘নো ওয়ার্ক, নো পে’ বা ‘কাজ নেই, মজুরি নেই’- এই নিয়ম কার্যকরের কথা বলেছেন তৈরি পোশাক কারখানার মালিকেরা। ইতোমধ্যে কিছু কারখানায় তা করা শুরু হয়েছে। এখন আন্দোলনের নেপথ্যে প্ররোচনা দিচ্ছেন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন চক্র। হেলমেট পরে কারা কারখানায় অসন্তোষ সৃষ্টি করছে তা খুঁজে বের করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান পোশাক কারখানার মালিকরা।

পোশাকশিল্পে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর আলোচনা সভায় ঐক্যবদ্ধভাবে শ্রম আইনের ১৩(১) ধারা বাস্তবায়নের কথা জানান তারা। রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে তৈরি পোশাকের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, আবদুস সালাম মুর্শেদী, এ কে আজাদসহ পোশাক কারখানার মালিকরা। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ফারুক হাসান। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, আমাদের কারখানাগুলোতে অশ্রমিকরা ভাঙচুর করছে। এখন বেতন নিয়ে এসব হচ্ছে। কিন্তু আমরা শ্রম আইন অনুযায়ী বেতন দিয়ে যাচ্ছি। যে বিশৃঙ্খলা চলছে তা মেনে নেওয়া যায় না। যারা আন্দোলন করছেন, তারা আমাদের শ্রমিক নন। আন্দোলন না থামালে আমরা ১৩ এর ১ ধারা অনুযায়ী কারখানা বন্ধ করে দেব। ফারুক হাসান বলেন, ইতোমধ্যে আমরা নতুন বেতন কাঠামো ক্লিয়ার করেছি। বেতন বাড়ানোর কথা বলছে শ্রমিকরা। কিন্তু ভাঙচুরের সঙ্গে আমাদের কোনো শ্রমিক নেই। যারা এসব উসকানি দিচ্ছেন অধিকাংশই বাইরের লোক। অবিলম্বে তাদের গ্রেফতার করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালিয়ে আন্দোলনের উসকানি দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে এ ব্যবসায়ী নেতা বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানি দেওয়া হচ্ছে।

সেখানে অপপ্রচার চালিয়ে ফ্যাক্টরিগুলোতে ভাঙচুর চালানো হচ্ছে। যেসব শ্রমিক নেতা ভাঙচুরে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি। তিনি বলেন, এ বিশৃঙ্খলার কারণে এখন পর্যন্ত শতাধিক গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা বারবার বলেছি, সরকার মজুরি কাঠামো নিয়ে যে ঘোষণা দেবে সেটিই আমরা মেনে নেব। সেটির বাস্তবায়ন ডিসেম্বরের শুরু থেকে। এখন যা হচ্ছে এটি ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন হতে পারে না। কারখানায় আগুন দেওয়ার কারণে একজন শ্রমিক মারা গেছেন, সেজন্য কি মালিকেরা দায়ী নয়? নিরাপত্তার কারণে যে কারখানায় কাজ করা যাবে না শ্রম আইনের ধারা অনুযায়ী সে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হবে। ফারুক হাসান বলেন, আমরা প্রতিটি শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে বসেছি। তারা জানিয়েছে শ্রমিকরা কেউ ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত নয়। এখন সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ। ২০২৩ সালে সব দেশেই নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি। আলোচনা সভায় এফবিসিসিআই সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে আজাদ বলেন, কারখানা ভাঙচুর হলে বা শ্রমিকেরা কাজে না গেলে ১৩(১) ধারা বাস্তবায়নে সবাইকে একমত হতে হবে। এ বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত হবে, সবাই তা মানবে। এ ছাড়া শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় এলাকাভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যে এলাকায় সমস্যা হবে, সেখানে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। ইতোমধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে কিছু ভিডিও ফুটেজ হস্তান্তর করা হয়েছে। এসব ভিডিওতে কারখানায় হামলার প্রমাণ আছে। এফআইআরও করা হয়েছে কিন্তু এখনো আসামি গ্রেফতার হয়নি। তিনি জানান, আশুলিয়ায় হা-মীম গ্রুপের চারটি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এই অস্থির সময়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া খুবই কঠিন। তুসুকা গার্মেন্টসের মালিক আরশাদ জামাল দীপু বলেন, কাজ নাই, মজুরি নাই এ বিষয়ে সবার একমত হওয়া প্রয়োজন। বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কারখানা খোলা রাখা যাচ্ছে না আবার বন্ধ রাখলেও আক্রান্ত হতে হচ্ছে। তিনি সরকারের কাছে কারখানার নিরাপত্তা দাবি করেন।

বিজিএমইএর সিনিয়র সহ সভাপতি এস এম মান্নান কচি বলেন, আজকে শ্রমিকদের নিয়ে যে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে সে সব বিষয়ে শ্রমমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে। কামরুল নামের এক শ্রমিক নেতা এটা শুরু করেছেন। আর আমাদের শ্রমিকরা কখনো হেলমেট পরে না। শ্রমিকদের আন্দোলনে হেলমেট পরা এরা কারা। তিনি বলেন, এ আন্দোলনের নেপথ্যে প্ররোচনা দিচ্ছেন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন চক্র। আমরা আমাদের জান মালের নিরাপত্তা চাই। আমাদের শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও কারখানার নিরাপত্তা চাই।

সর্বশেষ খবর