বৃহস্পতিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

হাসান সারওয়ার্দীর আট দিনের রিমান্ড

প্রতিদিন ডেস্ক

হাসান সারওয়ার্দীর আট দিনের রিমান্ড

প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ‘ভুয়া উপদেষ্টা’ কান্ডে গ্রেফতার সাবেক সেনা কর্মকর্তা চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আট দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। পুলিশের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের শুনানি করে ঢাকার মহানগর হাকিম শফি উদ্দিন গতকাল সারওয়ার্দীকে হেফাজতে  নেওয়ার অনুমতি দেন। বিডিনিউজ

মঙ্গলবার গ্রেফতার সারওয়ার্দীকে এদিন রিমান্ড শুনানির জন্য আদালতে হাজির করা হয়। অন্যদিকে তার আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে সারওয়ার্দীকে আট দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ‘উপদেষ্টা’ পরিচয় দিয়ে বিএনপি কার্যালয়ে মিয়া জাহিদুল ইসলাম আরেফী নামের এক মার্কিন নাগরিকের সংবাদ সম্মেলন করার ঘটনায় মঙ্গলবার বিকালে সাভার মডেল টাউন থেকে সারওয়ার্দীকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। আরেফীর বিরুদ্ধে দুই দিন আগে পল্টন থানায় যে মামলা করা হয়, সারওয়ার্দী এবং বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন সেই মামলার আসামি। মহিউদ্দিন শিকদার নামের এক সাবেক ছাত্রলীগ নেতার করা থানার ওই মামলায় বলা হয়েছে, শনিবার বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের পর বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক আরেফীকে বিএনপি অফিসে নিয়ে গিয়েছিলেন হাসান সারওয়ার্দী এবং বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, শনিবার বিএনপি কার্যালয়ে ওই সংবাদ সম্মেলনে নিজেকে বাইডেনের ‘উপদেষ্টা’ দাবি করা আরেফী বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার দিনে ১০-১৫ বার যোগাযোগ হয় এবং মার্কিন সরকারের সবাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইন ও বিচার বিভাগের ওপরও ‘নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে’ বলে দাবি করেন আরেফী। তাকে ‘মিথ্যা বক্তৃতা দিতে সহযোগিতা করেন’ সারওয়ার্দী ও ইশরাক। বিএনপি নেতা-কর্মীদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে উসকানি দেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়। এও বলা হয়েছে, আরেফীর বক্তব্য শুনে ও ভিডিও দেখে দেশের আইনশৃঙ্খলায় ব্যাপক ‘অবনতি ঘটে’। রাষ্ট্রপক্ষের অন্যতম আইনজীবী তাপস পাল জানান, রিমান্ড ও জামিন শুনানির সময় বিচারকের অনুমতি নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেন সারওয়ার্দী। সারওয়ার্দী বলেন, তিনি একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। নবম ডিভিশনে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। আশুলিয়ার তাজরীন ও সাভারের রানা প্লাজা দুর্ঘটনার সময় অনেক আহত-নিহতের পরিবারকে সাহায্য করেছেন, এ কথা দেশের মানুষ জানে।

বিচারকের এক প্রশ্নের উত্তরে সারওয়ার্দী বলেন, বাইডেনের উপদেষ্টা হিসেবে নিজেকে দাবি করা আরেফী যখন বিএনপি  অফিসে গিয়েছিলেন, তিনি তখন সেখানে গিয়েছিলেন সমাবেশে আহতদের দেখতে। আরেফীকে তিনি চিনতেন না। আরেফী সংবাদ সম্মেলন করবে বা সেখানে বক্তব্যে কী বলবে আমি বুঝে উঠতে পারিনি। এমনকি আরেফী সেখানে বক্তব্য  দেবে, তাও জানতাম না।

বিচারক তখন বলেন, আপনার সামনে যখন আরেফী সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলল, তাতে আপনি কেন বাধা দিলেন না? এসব বিষয়ে তো আপনাদের ট্রেনিং রয়েছে। উত্তরে সারওয়ার্দী বলেন, আমি বুঝে ওঠার আগেই এসব হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ এর আগে জানিয়েছিলেন, আরেফী তার বড় ভাইয়ের মাধ্যমে ১৯৮৪ সালে আমেরিকা চলে যান। ১৯৮৬ সালে আবার দেশে আসেন। পরে ২০২২ সালে দেশে এসে খুলনার এক নারীকে বিয়ে করেন। ছয় মাস বারিধারায় তিনি বসবাস করেছেন। ওই সময় হাঁটাচলা করতে গিয়ে সারওয়ার্দীর সঙ্গে পরিচয় হয়। তারপর তাদের মধ্যে কথাবার্তা এবং একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। হারুন বলেন, আরেফী আমেরিকা চলে গেলে সোহরাওয়ার্দী তাকে বলেন, ২৮ অক্টোবর বিএনপির একটি সমাবেশ আছে, আপনি একটু আগে আসেন। তিনি (আরেফী) এক মাস আগে বাংলাদেশে আসেন। আবার চলে যান এবং ২৬ অক্টোবর আবার দেশে আসেন। তাকে বিএনপির বড় র‌্যালি আছে এটা বলে নিয়ে যায় পার্টি অফিসে।

আরেফীকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অতিরিক্ত কমিশনার হারুন বলেন, উনি বলেছেন, সারওয়ার্দী ও বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট বেলাল ও ইশরাক উনাকে যেভাবে উপস্থাপন করেছেন, এটা সত্য নয়। তারা মিথ্যাভাবে উপস্থাপন করেছেন। এর আগে, আরেফীর সংবাদ সম্মেলনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় আলোচনা। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়, ওই ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কেউ নন। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস থেকে কারও যাওয়ার তথ্য পুরোপুরি ‘মিথ্যা’।

সর্বশেষ খবর