বৃহস্পতিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
সম্পাদকদের প্রতি তথ্যমন্ত্রী

সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে গণমাধ্যমের সম্পাদকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে সাংবাদিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছেন। গতকাল সচিবালয়ে তাঁর মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দেশে বিশৃঙ্খল নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরির অপচেষ্টা চলছে। গত ২৮ অক্টোবর ঢাকা মহানগরে বিএনপির সমাবেশের নামে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে, কার্যত রাষ্ট্রের ওপর হামলা হয়েছে। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, হাসপাতালে, জাজেস কমপ্লেক্সে হামলা আগে কখনো ঘটেনি। রাষ্ট্রের ওপর এই হামলাকারীরা চিহ্নিত, তারা বিএনপি জামায়াতের নেতা-কর্মী। এটাকে নিছক রাজনীতি বলে এর দায় আমরা এড়াতে পারব না। তথ্যমন্ত্রী বলেন, সেদিন সাপ পিটিয়ে মারার চেয়েও জঘন্যভাবে একজন পুলিশ কনস্টেবলকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনীর কায়দায় পুলিশ হাসপাতালে হামলা চালিয়ে অ্যাম্বুলেন্সসহ ১৯টি গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ডেমরায় ট্রাক ও বাসের সঙ্গে ঘুমন্ত হেলপারদেরও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। এর পর হরতাল-অবরোধ ডেকেও তারা যানবাহন ও মানুষের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা পরিচালনা করেছে, দেশে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। রাজনীতির নামে এই সন্ত্রাস কোনোভাবেই কাম্য নয়। সাংবাদিক, সম্পাদক, গণমাধ্যম মানুষের ধ্যান-ধারণা তৈরি করে উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপির হামলায় ৩০ জনের বেশি সাংবাদিক আহত হয়েছেন। তাদের হামলার ভয়াবহতা, নির্মমতা, নিষ্ঠুরতা কী রকম ছিল সেটি সারা দেশের জনগণ জানে না, এটা জানানোর দায়িত্ব আপনাদের। এর ওপর প্রত্যেকটি পত্রিকায় রিপোর্টিং হওয়া দরকার যে এতজন সাংবাদিক এভাবে নির্যাতিত হয়েছে। তথ্যমন্ত্রী বলেন, গত কয়েক দশকেও পৃথিবীর কোথাও রাজনীতির নামে মানুষ পোড়ানো হয়নি। আপনারা টেলিভিশনে দেখেছেন একজন গাড়ির মালিক বিলাপ করে করে বলছে যে- ‘বউ আমার গাড়িটা জ্বালাইয়া দিছে’। বিএনপির যে দুষ্কৃতকারী গাড়িটা পুড়িয়ে দিয়েছে তার বুকের বেল্টে ‘প্রেস’ লেখা ছিল। এভাবে সাংবাদিকদের মানহানি করা হয়েছে। এটার বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করতে হবে। তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন বিবৃতি দিয়েছে, সবারই দেওয়া প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, কথায় কথায় যারা মানবাধিকারের কথা বলে, সাংবাদিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিবৃতি দেয়, এখন তাদের কোনো বিবৃতি দেখি না। তারা যে এখন নিশ্চুপ আছে সে জন্য আপনাদের (সাংবাদিক) বিবৃতি দিয়ে মনে করিয়ে দিতে হবে। আপনাদের সম্মিলিতভাবে চিঠি লেখা দরকার- ‘তোমরা এখন নিশ্চুপ কেন।’ সেই চিঠি আবার গণমাধ্যমে প্রকাশ করা দরকার। মন্ত্রী হাছান বলেন, যেসব সাংবাদিক হামলা-নির্যাতন-নির্মমতার শিকার হয়েছেন, যদি আইনগত ব্যবস্থা নিতে হয়, সংশ্লিষ্ট হাউস থেকে মামলা করতে হবে। পাশাপাশি কোনো হাউস যদি চায়, আহত সাংবাদিকদের তালিকা দিলে কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে আমরা চিকিৎসার জন্য সহায়তা করব।  এ সময় সম্পাদকরা রাজনীতির নামে সন্ত্রাসের তীব্র নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এর বিরুদ্ধে তাদের লেখনী অব্যাহত থাকবে বলে জানান। ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ২৮ তারিখ অনেক সাংবাদিক আহত হয়েছেন, গণমাধ্যমের গাড়ি ও যানবাহনও ভাঙচুর হয়েছে। সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণকে আমরা মনে করি সংবাদপত্রের এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপরে আক্রমণ। ভীতিপ্রদ পরিবেশ সৃষ্টি করে সুস্থ সাংবাদিকতা হতে পারে না। সভায় আমাদের নতুন সময়ের ইমেরিটাস সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান, ডেইলি সানের প্রধান সম্পাদক এনামুল হক চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, কালের কণ্ঠের সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী, ভোরের ডাকের সম্পাদক বেলায়েত হোসেন, ডেইলি পিপলস লাইফের সম্পাদক আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া, প্রতিদিনের বাংলাদেশের সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, দৈনিক কালবেলার সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, বাংলাদেশ বুলেটিনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রতন, আজকালের খবরের সম্পাদক ফারুক আহমেদ তালুকদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর