সোমবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
নরসিংদীতে বিশাল জনসভায় শেখ হাসিনা

চোরাগোপ্তা হামলায় হটানো যাবে না

দেশের জনগণের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত ♦ যুগ যুগ ধরে বিএনপি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে ♦ ভোট চুরি করে খুনিদের সংসদে বসিয়েছিল খালেদা জিয়া

নরসিংদী প্রতিনিধি

চোরাগোপ্তা হামলায় হটানো যাবে না

নরসিংদীর মোসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে গতকাল এক বিশাল জনসভায় ভাষণ দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা -পিআইডি

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চোরাগোপ্তা হামলা, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে সরকার হটানো যায় না। তিনি তারেক রহমানকে সাহস থাকলে দেশে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সে অস্ত্র চোরাকারবারি, মানি লন্ডারিংয়ে যুক্ত। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, তারেক লন্ডনে বসে এত টাকা কোথায় পায়।

গতকাল নরসিংদী মোসলেহ উদ্দিন ভূইয়া স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী নৌকা মার্কার পক্ষে ভোট চাইলে উপস্থিত জনতা হাত তুলে তাঁর প্রতি সমর্থন জানান। শেখ হাসিনা বলেন, ইসরায়েলের হামলার মতো আমাদের দেশেও হাসপাতালে হামলা করা হচ্ছে। এরা তারেকের জারজ সন্তান কি না সে প্রশ্ন রাখেন তিনি। আগুনসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই নভেম্বর মাস যেখানে পরীক্ষা হচ্ছে। বিএনপি অবরোধ দেয়, সামনে আসার সাহস তাদের নেই। প্রধান বিচারপতির বাসভবন, জাজেস কমপ্লেক্স, হাটবাজার, দোকানপাট কিছুই রক্ষা পাচ্ছে না তাদের হাত থেকে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি দেশের জনগণের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। প্রয়োজনে বাবার মতো রক্ত দেব দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য। তিনি জনতার উদ্দেশে বলেন, একটা প্রত্যয় নিয়ে দেশে ফিরেছিলাম। সেটা মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন। আপনাদের ১০টি প্রকল্প উপহার দিয়েছি। এক সময় দুর্ভিক্ষ লেগে থাকত এই দেশে। কথা বলার স্বাধীনতা ছিল না। ভোট ও ভাতের আন্দোলন করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি। প্রতিটি ছেলেমেয়ে যেন স্কুলে যায় সে ব্যবস্থা নিয়েছি। খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি নিরাপত্তায় জোর দিয়েছি। মানুষের আয় বেড়েছে। প্রাইমারিতে মায়ের নামে মোবাইলে টাকা চলে যায়। উচ্চ শিক্ষায় বৃত্তি দিচ্ছি। শিক্ষায় আমরা অনেক গুরুত্ব দিয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান- এসব আওয়ামী সরকার করে দিয়েছে। সামাজিক সুরক্ষা দিচ্ছি। কমিউনিটি ক্লিনিকে মানুষ বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা, ওষুধ পাচ্ছে। প্রত্যেকটি মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। জিনিসের দাম বেড়েছে তাই আমরা প্রত্যেক পরিবারে কার্ড করে দিয়েছি। আমরা সারা দেশে বিদ্যুৎ দিতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসা মানেই দেশ পেছনের দিকে যাওয়া। আওয়ামী লীগ সরকার ৮০০ টাকা থেকে মজুরি বাড়িয়ে ১২ হাজার টাকা করেছে। অন্য কোনো সরকার গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরি বাড়ায়নি। প্রতিটি গ্রাম যেন শহর হয়, শহরের সুবিধা যেন গ্রামের মানুষ পায় এ জন্য ব্যবস্থা নিয়েছি?আইটি ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছি। এতে ৬ লাখ ফ্রিলান্সার কাজ করছে। ঘরে বসে আয় করছে। সরকারি চাকরির বাইরে যারা আছেন তাদের সবার জন্য সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা করেছি। ১০৯টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি যেন আমাদের ছেলেমেয়েরা কাজ করতে পারে। তিনি বলেন, আমরা জনগণের জন্য কাজ করি। বিএনপির কাজ ধ্বংস করা। ১৫ বছরে কত পরিবর্তন তা আপনারা নিজেরাই দেখছেন। নরসিংদীর তাঁত, সবজি, বিখ্যাত সাগর কলা যেন দ্রুত ঢাকা যায় সে ব্যবস্থা করেছি। শেখ হাসিনা বলেন, নৌকায় ভোট দিয়েছেন, দেশের উন্নয়ন হয়েছে। আমি বাবা-মা, ভাই, স্বজনদের হারিয়েছি। আমরা দেশে আসতে পারিনি। আমার অবর্তমানে আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয়। এক প্রকার জোর করেই দেশে ফিরেছিলাম। দেশে ফিরেছিলাম একটা প্রত্যয় নিয়ে। তা হলো, যে দেশ আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন, তা ব্যর্থ হতে দেব না। এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাই ছিল আমার লক্ষ্য।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, যে বৃহত্তম সার কারখানা উদ্বোধন হলো তা নরসিংদীবাসীর জন্য গৌরবের। শেখ হাসিনা ভূমিহীন মানুষকে ঠিকানা দেওয়ার কথা দিয়েছিলেন এবং তিনি ঠিকানা দিয়েছেন। বিএনপি মুখ থুবড়ে পড়া বাংলাদেশ রেখে গিয়েছিল, সেখান থেকে আমাদের নেত্রী এ দেশকে বিশ্বে এক মর্যাদার স্থানে নিয়ে গেছেন।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, আজকের দিনটি আমাদের নরসিংদীবাসীর জন্য আনন্দের। ১৯ বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনে গোটা জেলায় খুশির জোয়ার বইছে। তিনি বলেন, আমাদের নেত্রীকে বিশ্ব নেতারা অবাক হয়ে দেখেন। বিশ্ব নেতারা আগ্রহ নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চান। আজ তাঁর ছোঁয়ায় টানেল, নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতু হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক হয়েছে। লাখ লাখ মানুষকে ভাতা দিচ্ছে সরকার। এই যে চারপাশে এত উন্নয়ন এটি ধরে রাখতে হলে বারবার দরকার এই শেখ হাসিনার সরকার। সামনে নির্বাচন, তাই অনেক ধরনের ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আমাদের নেত্রী মনোনয়ন যাঁকেই দেবেন আমরা ঐক্যবদ্ধ থেকে নরসিংদীর প্রত্যেক আসনে নৌকার বিজয় উপহার দেব সেই প্রত্যাশা করি, সেই অঙ্গীকার করি।

নরসিংদীতে উৎসবের আমেজ, জনসমুদ্র : ১৯ বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নরসিংদী আগমনকে কেন্দ্র করে গোটা জেলায় উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ জনসভায় যোগ দেয়। সকাল থেকেই বিভিন্ন উপজেলা থেকে দলে দলে নেতা-কর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে, রঙিন গেঞ্জি ও টুপি পরে যোগ দেন জনসভায়। ৩টা ২৫ মিনিটে জনসভাস্থলে পৌঁছেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগেই দুপুর ১২টায় জনসভাস্থল জনসমুদ্রে রূপ নেয়। স্টেডিয়ামে মানুষের সংকুলান না হওয়ায় শহরের অলি-গলিতে হাজার হাজার মানুষ দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শোনেন। নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জি এম তালেব হোসেনের সভাপতিত্বে জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক পীরজাদা কাজী মোহাম্মদ আলীর সঞ্চালনায় জনসভায় আরও বক্ত্য দেন দলীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আবদুর রহমান, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ হুমায়ুন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, নজরুল ইসলাম হিরু এমপি, জহিরুল হক ভূইয়া এমপি, নজরুল ইসলাম বাবু এমপি, মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি, সংরক্ষিত আসনের এমপি তামান্না নুসরাত বুবলি, ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন প্রমুখ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর