সোমবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

শ্রমিকরা চাইলে বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়া হবে : বিজিএমইএ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেছেন, শ্রমিকরা চাইলে আজ থেকেই বন্ধ পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া হবে। গতকাল রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কার্যালয়ে পোশাকশিল্পে ন্যূনতম মজুরি ও বর্তমান শ্রম পরিস্থিতি-বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি এস এম মান্নান কচি, সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম, এবিএম ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনামুল হক খান বাবুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ফারুক হাসান মজুরি বৃদ্ধির ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, ২০১৮ সালে ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা করা হয়। ২০১৩ সালেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ন্যূনতম মজুরি ৫ হাজার ৩০০ টাকা করা হয়। ২০১০ সালে যা ছিল ৩ হাজার টাকা। সেই হিসেবে তিনি বলেন, ২০১০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পোশাকশিল্পে মজুরি বৃদ্ধির হার ৩১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। সংবাদ সম্মেলনে ফারুক হাসান বলেন, তৈরি পোশাক খাতে চলমান অস্থিরতা নিয়ে বিদেশি ক্রেতারা উদ্বিগ্ন। তারা আপাতত নতুন অর্ডার দিচ্ছে না। ক্ষতি যেটা হলো, ক্রেতারা অর্ডার বন্ধ করে রেখেছে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে তারা নতুন করে অর্ডার দেবে না। আমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি যে, শুধু ৫ শতাংশ কারখানা বর্তমানে বন্ধ আছে। আর ৯৫ শতাংশই খোলা রয়েছে। এ ছাড়া কারখানা চালাতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা চেয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, পোশাকশিল্পকে ঘিরে যারা চক্রান্ত করছে তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। সেই সঙ্গে কারখানা চালানোর জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে তিনি সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান। সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, মজুরি বৃদ্ধির পরও আন্দোলনের নামে বিভিন্ন জায়গায় কারখানা ভাঙচুর করা হচ্ছে। মজুরি ঘোষণার পর থেকে বেশ কয়েকটি কারখানায় অজ্ঞাতনামা কিছু উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিক অযৌক্তিক দাবিতে বেআইনিভাবে কর্মবিরতি পালন করে কর্মকর্তাদের মারধর করেছে। কারখানার ভিতরে ব্যাপক ভাঙচুর ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, অতীতেও ক্রেতারা বলেছিল দাম বাড়াবে। আমরা আবার তাদের চিঠি দেব। তাদের সঙ্গে বসব। কেস টু কেস আলোচনা করে দেখব তারা কোন কোন কাজ ও কারখানায় মূল্য বাড়ায়। তিনি বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আশুলিয়া, কাশিমপুর, মিরপুর ও কোনাবাড়ী এলাকার প্রায় ১৩০টি কারখানার কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। এসব কারখানার মালিকরা মূলত কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং কারখানার সম্পত্তি রক্ষার স্বার্থে কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এখন পর্যন্ত ২৫টি ফ্যাক্টরিতে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। যেসব কারখানায় শ্রমিকরা কাজ করতে আগ্রহী, সেগুলোতে কাজ চলছে। তাদের কাজ চলমান থাকবে। শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি প্রসঙ্গে ফারুক হাসান বলেন,  আমরা ঘোষিত মজুরি মেনে নিয়েছি। যত কষ্টই হোক, এই মজুরি বাস্তবায়ন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। যদিও বর্তমান প্রেক্ষাপটে পোশাকশিল্পের বাস্তবতায় এই মজুরি বাস্তবায়ন করা অনেক উদ্যোক্তার জন্যই অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হবে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, নানা সংকটে কারখানা বন্ধ হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৬ হাজার ৮৮৫টি পোশাক কারখানা বিজিএমইএর সদস্যপদ গ্রহণ করলেও কালের পরিক্রমায় ৩ হাজার ৯৬৪টি সদস্য কারখানা বিভিন্ন কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। বাকিদের মধ্যে ২ হাজার ৩৩৯টি কারখানা সদস্য নবায়ন করছে। শুধু করোনা মহামারির কারণে ২০২০-২১ অর্থবছরে বন্ধ হওয়া কারখানার সংখ্যা ৩১৭টি এবং পরে অন্য কারণে প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখতে না পারার কারণে ২৬০টি কারখানা বন্ধ হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর