মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

আসছে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ভোট

বৃহস্পতিবারের মধ্যে সংসদ নির্বাচনের তফসিল

গোলাম রাব্বানী

আসছে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ভোট

আসছে সবচেয়ে ব্যয়বহুল সংসদ নির্বাচন। চলতি সপ্তাহে তথা বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করার কথা রয়েছে। ইসি সূত্র জানিয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে। এর মধ্যে নির্বাচন পরিচালনা খাতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি। আইনশৃঙ্খলা খাতে হাজার কোটি টাকা চাহিদা এসেছে। নির্বাচনী প্রশিক্ষণ খাতে ব্যয় হবে ১৩১ কোটি টাকার বেশি। এ ছাড়া নির্বাচনী অ্যাপস তৈরিতে ব্যয় হয়েছে ২১ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে এবার ব্যয় ধরা হচ্ছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি। বিগত একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৭০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হলেও এবারের ব্যয় দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে হিসেবে চলতি অর্থবছরে সংসদ নির্বাচনের জন্য দ্বিগুণ ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর বড় অংশ ব্যয় হবে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। সূত্র জানিয়েছে, চলতি ২৩-২৪ অর্থ বছরে নির্বাচন খাতে ১ হাজার ৪৪৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকার সংস্থান রয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ অথবা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করার পরিকল্পনা ধরে কাজ এগিয়ে নিচ্ছে কমিশন।

তফসিলের জন্য দুই দিন অপেক্ষা করতে বললেন ইসি সচিব : চলতি মাসের প্রথমার্ধ শেষ হতে যে দুই দিন বাকি আছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার জন্য সে পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের মুখপাত্র ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম। গতকাল তিনি বলেন, ‘মাননীয় কমিশন বলেছেন, নভেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা হবে। সুতরাং প্রথমার্ধের (১৫ নভেম্বর পর্যন্ত) দিন যেহেতু সামনে আছে, আপনারা অপেক্ষা করুন। নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ শেষ হচ্ছে মঙ্গলবার ১৪ নভেম্বর), তবে মাসের প্রথমার্ধ ধরলে বুধবারও (১৫ নভেম্বর) সময় আছে। ৯ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির কাছে নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি তুলে ধরার পর এখন তফসিল ঘোষণা বাকি রয়েছে। প্রথা অনুযায়ী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারে ভাষণের মাধ্যমে জাতির কাছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের সূচি তুলে ধরেন। সেজন্য তফসিল ঘোষণার দিন নির্বাচন ভবনে ভাষণ রেকর্ডিংয়ের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়। তবে এবার বাংলাদেশ টেলিভিশনের লাইভে এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। ইসির কর্মকর্তারা বলেছেন, সংসদ নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এবার প্রায় হাজার কোটি টাকা চেয়েছে পুলিশ, আনসার, র‌্যাব, বিজিবি ও কোস্টগার্ড। এমন চাহিদার বিপরীতে বরাবরের মতো কতদিনের জন্য নির্বাচনী এলাকায় মোতায়েন থাকছে তা বিবেচনা করেই অর্থ বরাদ্দ দেবে ইসি। তফসিল ঘোষণার পরে সশস্ত্রবাহিনীর চাহিদা দিলে সে অর্থ ছাড় হবে। চলতি সপ্তাহে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি চলছে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ বা জানুয়ারি প্রথম সপ্তাহে ভোটের তারিখ থাকতে পারে বলে ইতোমধ্যে জানিয়েছে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। নির্বাচনকে সামনে রেখে ৩০ অক্টোবর আইনশৃঙ্খলা সভা হয়েছে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে চাহিদা দেওয়া হয়েছে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, প্রায় ৪৩০ কোটি, আনসারের চাহিদা প্রায় ৩৬৬ কোটি, আর বিজিবি, র‌্যাব ও কোস্টগার্ডের আলাদা আলাদা চাহিদা মিলিয়ে শত কোটি টাকার বেশি। সব মিলিয়ে হাজার কোটি টাকা চাহিদা এসেছে। ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কতদিনের জন্য মোতায়েন থাকবে নির্বাচনী এলাকায় তা কমিশন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। কেন্দ্রের নিরাপত্তায় কত সংখ্যক সদস্য থাকবেন তাও চূড়ান্ত হবে। সেই সঙ্গে স্ট্রাইকিং ও মোবাইল ফোর্স রয়েছে। ডেপ্লয়মেন্ট ও সংখ্যা বিবেচনায় করেই চাহিদার বিপরীতে অর্থ ছাড় হবে। গত সংসদ নির্বাচনে যেমন হয়েছে, এবারও প্রায় কাছাকাছি ব্যয় হতে পারে।’ তিনি জানান, ভোটার সংখ্যা বাড়ায় কেন্দ্রও বেড়েছে, সেক্ষেত্রে নিরাপত্তা ব্যয়ও বাড়বে। নির্বাচন পরিচালনা খাতে যেমন ব্যয় তুলনামূলক বেশি হচ্ছে, নিরাপত্তা ব্যয়ও তাই বাড়বে। এ কর্মকর্তা জানান, একাদশ সংসদ নির্বাচনে পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র‌্যাব, কোস্টগার্ড যে পরিমাণ অর্থ চেয়েছিল, এবারও তার কাছাকাছি চাহিদা দিয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীর চাহিদা যখন সময় হবে তখন দিতে পারে। নির্বাচনী ব্যয়ের দুই তৃতীয়াংশই যায় নিরাপত্তা খাতে। সবশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটের দিন প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ১৪ থেকে ১৬ জন নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন। আর র‌্যাব, বিজিবি ও সেনা সদস্যরা ছিল টহলে। ৩০ ডিসেম্বরের ভোটে ভোটের এক সপ্তাহ আগে থেকে ১০ দিনের জন্য মোতায়েন ছিল সশস্ত্রবাহিনী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন খাতে ব্যয় বাড়বে। এবার ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের ভাতা বাড়ছে এবং দুই দিনের ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রায় ৯ লাখ প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তারা ভোট গ্রহণের ভাতা বাবদ গত নির্বাচনের চেয়ে এবার বেশি দিতে পারে ইসি। শুধু ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের ভাতা বাবদ ব্যয় বেড়েছে ২৮০ কোটি টাকা। এগুলোসহ নির্বাচন পরিচালনা খাতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি। আর আইনশৃঙ্খলা খাত মিলিয়ে এবার ব্যয় ধরা হচ্ছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুলিশ ৪৩০ কোটি ২৫ লাখ টাকা চেয়েছে। আনসার ও ভিডিপি চেয়েছে ৩৬৬ কোটি ১২ লাখ টাকা। এবার বিজিবি চেয়েছে ১৪৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। র‌্যাব চেয়েছে ৫০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা; কোস্টগার্ড চেয়েছে ৭৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এবার প্রায় ১২ কোটি ভোটারের এ নির্বাচনে ৩০০ আসনে কেন্দ্র থাকবে ৪২ হাজারেরও বেশি। ইসি কর্মকর্তারা জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে যে পরিমাণ টাকা চাহিদা দেওয়া হয়, সাধারণত তা পুরোপুরি দেওয়া হয় না। নির্বাচনে কোন বাহিনীর কত সংখ্যক সদস্য কয়দিন মাঠে থাকবেন- তার ওপর টাকা বরাদ্দের পরিমাণ নির্ভর করে। তবে এ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের ১৫ দিন পর পর্যন্ত প্রয়োজনে মাঠে পুলিশের টহল রাখতে চায় ইসি।

বিগত তিন নির্বাচনের ব্যয় : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা ও নির্বাচন পরিচালনা- এই দুই খাত মিলিয়ে ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। পরে তা আরও বেড়েছিল।। দশম সংসদ নির্বাচন : ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোটে মোট ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ২৬৪ কোটি ৬৭ লাখ ৪৯ হাজার ৪৬৯ টাকা। এর মধ্যে নির্বাচন পরিচালনায় ৮১ কোটি ৫৫ লাখ ৪১ হাজার ৩৪১ টাকা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পেছনে ব্যয় হয় ১৮৩ কোটি ১২ লাখ ৮ হাজার ১২৮ টাকা। গত নির্বাচনে ১৪৭ আসনে ভোট হয়, ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন একক প্রার্থীরা। অর্ধেক এলাকায় ভোট করতে হওয়ায় বরাদ্দের তুলনায় খরচ অনেক কমে আসে। নবম সংসদ নির্বাচনে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের ভোটে ১৬৫ কোটি ৫০ হাজার ৬৮৭ টাকা ব্যয় হয়; যাতে ভোটার ছিল ৮ কোটি ১০ লাখের বেশি।

সর্বশেষ খবর