মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

তফসিলের অপেক্ষায় বিএনপি

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

টানা আন্দোলন নাকি নির্বাচনের প্রস্তুতি তফসিল ঘোষণার পর চূড়ান্ত করবে বিএনপি। ইতোমধ্যে ২৮ অক্টোবরের সংঘর্ষের ঘটনায় দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র অনেক নেতা কারাগারে। এ অবস্থায় গ্রেফতার এড়াতে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে মাঠের নেতাদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। বিএনপির দায়িত্বশীলরা বলছেন, মাঝে বিরতি দিয়ে ৪৮ ঘণ্টা করে অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যেতে থাকলেও কোন পথে যাবে বিএনপি, চূড়ান্ত হবে তফসিল ঘোষণার পর। তফসিলের অপেক্ষায় বিএনপি। জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সব প্রতিকূলতা-প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে নেতা-কর্মীরা বুকে বুলেট বরণ করে নিয়ে রাজপথে দাঁড়াচ্ছে। তারা রাজপথে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত দেশের হারানো গণতন্ত্র ফিরে না আসে, অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন না হয়। আমাদের এ সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। আমাদের ঠিকানা হয় কারাগার, না হয় রাজপথ। বিএনপি নেতাদের ধারণা, ১৪ নভেম্বর বা তার কাছাকাছি সময়ে তফসিল ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন। তফসিল কেন্দ্র করে আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি বাড়াতে পরিকল্পনা করে এগোচ্ছে দলটি। চলমান আন্দোলন দীর্ঘায়িত হতে পারে বিবেচনায় এ কৌশল নেওয়া হয়েছে। যার কারণে নভেম্বরের প্রথম ১০ দিনের অবরোধ কর্মসূচিতে রাজপথে তেমন দেখা যায়নি বিএনপি নেতা-কর্মীদের। এ সময় সবাই গ্রেফতার বা কর্মসূচি পালনে শক্তি হারানোর পক্ষে নয় দলটি। এ কারণেই চলমান হরতাল-অবরোধে রাজপথ থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছেন অনেকে। গত কয়েকদিনে সারা দেশে ৮ হাজারের বেশি নেতা-কর্মী গ্রেফতার হয়েছেন বলে দাবি দলটির। এমন পরিস্থিতিতে গ্রেফতার এড়িয়ে আন্দোলন জোরদারে কৌশলী বিএনপি। তবে সাময়িক গা ঢাকা দেওয়া নেতারা তফসিলকেন্দ্রিক আন্দোলনে মাঠে নামবেন। মূলত গ্রেফতার এড়িয়ে আন্দোলন একটা পর্যায়ে নিতে চায়। তফসিলের পরদিন ‘অসহযোগ’ আন্দোলনের ঘোষণা নিয়ে আলোচনা চলছে। দলটির নেতারা বলছেন, সামনে আন্দোলন জোরদার হবে। তখন সম্মিলিতভাবে নেতা-কর্মীদের মাঠে দেখা যাবে। সূত্রমতে, দলটির সকল পর্যায়ের নেতাকে তফসিলের আগ পর্যন্ত গ্রেফতার এড়িয়ে চলার নির্দেশনা রয়েছে। তাই চলমান হরতাল-অবরোধে নেতা-কর্মীরা মাঠে কম থাকলেও তফসিল ঘোষণার পর তারা মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তফসিলের আগে ও পরে কর্মসূচি নির্ধারণে দলটির হাইকমান্ড নিজ দলের পাশাপাশি সমমনা দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে মতামত নিচ্ছেন। তফসিল ঘোষণা-পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ জেলের বাইরে থাকা সিনিয়র নেতারা দলের কেন্দ্রীয়, জেলা, উপজেলা এমনকি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের নেতাদের পরামর্শ নিচ্ছেন। এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামী, গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২-দলীয় জোট, সমমনা জোট, এলডিপি, গণ অধিকার পরিষদসহ যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে বিএনপি হাইকমান্ডের। পাশাপাশি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ কয়েকটি ইসলামী দলকে তফসিলকেন্দ্রিক আন্দোলনে পাশে চায় বিএনপি। এ বিষয়ে কাজ করছেন বিএনপি নেতারা। জানতে চাইলে মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বাধীন ১২-দলীয় জোট নেতা জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য নওয়াব আলী খান আব্বাস বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকলে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না। তাই সরকারের পদত্যাগের জন্য আমাদের এক দফার আন্দোলন চলছে এবং চূড়ান্ত দাবি আদায় পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে। সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, অনির্বাচিত আজ্ঞাবহ সরকারের নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার নেই নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার। জানা যায়, এবার কর্মসূচির ব্যাপারে কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করছে বিএনপি। তফসিল ঘোষণা কেন্দ্র করে বিএনপিতে নানা ধরনের আলোচনা রয়েছে। সে সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইসির আওতায় থাকবে। তবে তফসিল ঘোষণার মুহূর্ত থেকেই মাঠে নামতে প্রস্তুত বিএনপি। তফসিলের পরদিন ‘অসহযোগ’ আন্দোলন ছাড়াও পর্যায়ক্রমে সচিবালয় ঘেরাও, ইসি ঘেরাও কর্মসূচি আছে আলোচনায়। পাশাপাশি জেলা ও উপজেলায় হরতাল-অবরোধ পালনে কঠোর নির্দেশনা দেবে দলটি। সারা দেশ থেকে রাজধানীকে বিচ্ছিন্ন করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে বিএনপি। ঘরে বসে গ্রেফতার না হয়ে তখন রাজপথে গ্রেফতার হওয়ার ব্যাপারেও নির্দেশনা আসবে দলের হাইকমান্ডের। এ ছাড়া বড় শোডাউন দেওয়ার পরিকল্পনা নিতে পারে তারা।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর