মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে শুনানিতে আইনমন্ত্রী

জাতিসংঘের ৯০ শতাংশ দেশের প্রশংসা

নিজস্ব প্রতিবেদক

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বাংলাদেশের মানবাধিকারের প্রশংসা করেছে জাতিসংঘের ৯০ শতাংশ দেশ। আর মানবাধিকার সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ। গতকাল জেনেভায় অনুষ্ঠিত ইউনিভার্সেল পিরিয়াডিক রিভিউ (ইউপিআর) সর্বজনীন নিয়মিত পর্যালোচনায় বাংলাদেশের পক্ষে এসব বলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় আইনমন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরিনসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আনিসুল হক বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ৯০ শতাংশ দেশ বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির প্রশংসা করে আরও শক্তিশালী করতে গঠনমূলক সুপারিশ করেছে। গুম, হত্যা, নিপীড়ন কিংবা খালেদা জিয়ার বিষয়ে যেসব দেশের প্রশ্ন ছিল বাংলাদেশের উত্তর ও ব্যাখ্যা শোনার পর তাদের প্রশ্ন করার সুযোগ ছিল, কিন্তু কোনো প্রশ্ন করেনি। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের বিষয়টি তুলে ধরে আইনমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন নিয়ে কয়েকটি দেশের প্রশ্ন ছিল। স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে নির্বাচন সময়মতো সংবিধান অনুযায়ীই হবে।

জেনেভায় ইউনিভার্সেল পিরিয়াডিক রিভিউ (ইউপিআর) গ্রুপের ৪৪তম সেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটি বাংলাদেশের চতুর্থ ইউনিভার্সেল পিরিয়াডিক রিডিউ। এর আগে ২০০৯, ২০১৩ ও ২০১৮ সালে বাংলাদেশের পূর্ববর্তী রিভিউ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। গত আগস্টে ইউপিআর উপলক্ষে বাংলাদেশের জাতীয় প্রতিবেদন জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে প্রেরণ করা হয়েছিল।

আইনমন্ত্রী বলেন, এবারের রিভিউতে ১১২টি দেশ অংশগ্রহণ করেছে। অধিকাংশ দেশ তাদের বক্তব্যে মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে। সভায় নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্য দূরীকরণ, আর্থসামাজিক উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, খাদ্যনিরাপত্তা, সবার জন্য আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা বহুল প্রশংসিত হয়েছে। ১১ লাখের অধিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয়দানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো। মানবাধিকার রক্ষায় আমাদের উদ্যোগ এগিয়ে নিতে রিভিউতে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো বেশ কিছু গঠনমূলক সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কার্যক্রম এবং ব্যবস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা জোরদারকরণ, জাতীয় পর্যায়ে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে বিভিন্ন ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ, মানবাধিকার কমিশন শক্তিশালীকরণ, প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা দূর করার উদ্যোগ অব্যাহত রাখা, শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির জন্য প্রচেষ্টা জোরদারকরণ, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণ, অভিবাসী শ্রমিকের সুরক্ষাব্যবস্থা উন্নয়ন, গ্রাম পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ, বাল্যবিয়ে রোধকরণে জোরদার প্রচেষ্টা গ্রহণ, মানব পাচার বন্ধকরণ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা সম্পর্কিত সুপারিশ। আমরা সুপারিশগুলোর ওপর বিভিন্ন জাতীয় স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে যথাযথ পরামর্শ করব এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান মানবাধিকার পরিষদকে জানাব।

আইনমন্ত্রী বলেন, রিভিউকালে আমার বক্তব্যে একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে মানবাধিকার সুরক্ষা এবং প্রসারে বাংলাদেশ সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বে সরকারের জনকল্যাণমূলক নীতির উল্লেখযোগ্য দিক আমি উপস্থাপন করি। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামো নির্মাণে সরকারের প্রচেষ্টা তুলে ধরি। স্ব-অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের সফলতার কথা তুলে ধরেছি। তিনি বলেন, গত রিভিউর পর থেকে বাংলাদেশ মানবাধিকার সম্পর্কিত বেশ কিছু আইন প্রণয়ন করেছে বলে সভায় অবহিত করেছি। দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেছি। এজন্য সহযোগিতার পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালীকরণের জন্য সরকার গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে উপস্থিত সবাইকে অবহিত করেছি। নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আইনি ব্যাখ্যা আমি সভায় উপস্থাপন করেছি।

আনিসুল হক বলেন, বাংলাদেশ গত কয়েক বছরে ইউএন স্পেশাল প্রসিডিউর ম্যান্ডেট হোল্ডারদের ১০টি সফর আয়োজন করেছে উল্লেখ করে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ এবং তার বিভিন্ন মেকানিজমের সঙ্গে সরকারের চলমান সহযোগিতার কথা বিশেষভাবে অবহিত করেছি। কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের রিভিউ উপলক্ষে অগ্রিম প্রশ্ন প্রেরণ করেছিল। এসব প্রশ্নের মধ্যে ছিল শ্রমিক অধিকার, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, মানবাধিকার সম্পর্কিত কিছু ইনস্ট্রুমেন্টে আমাদের সম্ভাব্য র‌্যাটিফিকেশন, মানবাধিকার সম্পর্কিত জাতিসংঘের বিভিন্ন স্পেশাল র‌্যাপোর্টিয়ার/মেকানিজমের বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার, বৃদ্ধ ব্যক্তির অধিকার রক্ষায় সরকার গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কিত।

আইনমন্ত্রী বলেন, আমি যথাযথভাবে প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েছি। বিভিন্ন প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সুশাসন, আইনের শাসন, ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকার কাজ করে যাবে বলে আমি কাউন্সিলকে অবহিত করেছি। দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে একটি সমৃদ্ধ জাতি গঠনের লক্ষ্যে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে যেখানে প্রত্যেক নাগরিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সম্পূর্ণরূপে উপভোগ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছি। এ উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনারের অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ এবং সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বলে অবহিত করেছি।

সর্বশেষ খবর