সোমবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

অপেক্ষায় জোটের শরিকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

অপেক্ষায় জোটের শরিকরা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এককভাবে ২৯৮ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। জোট শরিক জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর কুষ্টিয়া-২ আসন এবং জাতীয় পার্টির এ কে এম সেলিম ওসমানের নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন রাখা হয়েছে ফাঁকা। আরেক বড় শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের আসনে দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী। অন্য শরিকদের জন্য বিগত সংসদ নির্বাচনে ৭০ আসন ফাঁকা রেখে ২৩০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু এবার তা করা হয়নি।

শরিক জোটের এ নেতাদের কী হবে তা নিয়ে চলছে জোর আলোচনা। শরিক নেতারা বলছেন, ১৪ দলের বৈঠকে আসন ভাগাভাগি কীভাবে হবে তার আভাস মিলবে। তাই এখন জোট নেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন শরিকরা।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জোটগতভাবে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত বিষয়ে ১৪-দলীয় জোটের বৈঠকের অপেক্ষায় আছেন। দ্রুতই এ বৈঠক হবে বলেও জানান তিনি।’ মতিঝিল, রমনা, পল্টনের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ঢাকা-৮ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪-দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে জয়ী হন তিনি। এবার এই আসনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমকে প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতির আসনে প্রার্থী দেওয়ায় নানা গুঞ্জন ডালপালা মেলেছে।

রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ) জানিয়েছেন এই প্রার্থী ঘোষণা শেষে যে কোনো দিন ১৪ দলের সঙ্গে বসবে। বসলে কী হয় সেটি দেখা যাবে, বৈঠকের আগে কিছু বলা যাচ্ছে না। বৈঠকের এখনো দিনক্ষণ ঠিক হয়নি বলেও জানান তিনি। আওয়ামী লীগ দুটি আসন প্রার্থী দেয়নি তবে আপনার আসনে প্রার্থী দিয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রার্থী ঘোষণা করেছেন এটা জানি, এর বেশি কিছু জানি না, বলতে পারব না। আমরা জোটের অর্থাৎ ১৪ দলের বৈঠকের জন্য অপেক্ষায় আছি।’ জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ঘোষিত প্রার্থী তালিকায় ফাঁকা রাখা দুই আসনের একটি কুষ্টিয়া-২ এবং নারায়ণগঞ্জ-৫। কুষ্টিয়া-২ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু। নারায়ণগঞ্জ-৫ এ বর্তমান সংসদ সদস্য হিসেবে আছেন জাতীয় পার্টির এ কে এম সেলিম ওসমান। জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওয়ার্কার্স পার্টি ৩০টি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় মিডিয়া বিভাগের আহ্বায়ক মোস্তফা আলমগীর এর আগে জানিয়েছেন, দলের মধ্যে জোটগতভাবে যাঁরা নির্বাচন করবেন, তাঁরা নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়বেন। আর বাকি প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক হাতুড়ি নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

১৪-দলীয় জোটের শরিক দল- জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব ও সাবেক মন্ত্রী শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, আমরা নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিলাম। আওয়ামী লীগ ২৯৮ আসনে দলের মনোনয়ন ঘোষণা করেছে। তবে এটাই শেষ নয়। সামনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জোট নেতাদের বৈঠক হবে। সেখানেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। এ ছাড়া নৌকা বাদেও জেপির অনেকে আমাদের দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন।

শরিক দল হিসেবে জেপি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে বলে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিল। ২৯৮ আসনে আওয়ামী লীগ দলের মনোনয়ন ঘোষণার পর সেই সুযোগ আছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ কথা বলেন। শহীদুল ইসলাম বলেন, আমরা আশাবাদী। সব সুযোগ শেষ হয়ে গেছে বলে মনে করছি না। ১৪ দলের বৈঠকে অনেক কিছু পরিবর্তন হতে পারে। শরিকদের মধ্যে যাদেরকে শেখ হাসিনা নৌকা প্রতীক দেবেন, তাদের নিশ্চয়ই পাস করিয়ে আনার চেষ্টা করবেন।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, ‘প্রতিপক্ষ জোট থাকুক আর না থাকুক, বিএনপি নির্বাচনে আসুক কিংবা না আসুক, ১৪ দল জোটবদ্ধভাবেই নির্বাচন করবে। ওবায়দুল কাদের কী বলেছেন, সেটা তিনিই ভালো জানেন। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, ১৪ দল জোটবদ্ধভাবেই নির্বাচন করবে। এ ছাড়া ওই চিঠিতে বলা আছে, প্রয়োজন হলে আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা শরিক দলের প্রার্থীরা ব্যবহার করতে পারবেন। আমরা এখন পর্যন্ত জোটবদ্ধভাবে খুব শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে নির্বাচনের মাঠে আছি। ১৪ দলের প্রার্থী হিসেবে কুষ্টিয়া-২ আসন থেকে আবারও নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেব আমি।’ গতকাল দুপুরে কুষ্টিয়ার মিরপুরে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জহুরুল ইসলামের কাছে নিজের মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।

অন্যদিকে জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে কথা বললে তারা এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি। তবে তারা জানান, ‘আসন ভাগাভাগির ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা চলছে। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ তারিখ পর্যন্ত যে কোনো কিছু ঘটতে পারে। আমরা আশাকরি, সমঝোতার পর নির্দিষ্ট আসনে নৌকা অথবা লাঙ্গল যে কোনো একটি প্রতীক থাকবে।’ আওয়ামী লীগসহ ৯টি রাজনৈতিক দল ‘নৌকা’ প্রতীক ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে ইসিকে চিঠি দিয়েছে। এগুলো হলো- জাতীয় পার্টি (মঞ্জু), বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী পার্টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (ইনু) ও তরিকত ফেডারেশন। তবে বিকল্প ধারা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক দল হিসেবে অংশগ্রহণ করবে, নির্বাচনে দলীয় প্রতীক কুলা নিয়ে তারা লড়বেন।

সর্বশেষ খবর