সোমবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ

ওভার ইনভয়েসিংয়ে অর্থ পাচার চলছেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

ওভার ইনভয়েসিংয়ে অর্থ পাচার চলছেই

প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচার চলছেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে আমি এটা বন্ধ করতে বলেছিলাম। কিন্তু তারপরও কেন পারে না। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ওভার ইনভয়েসিংয়ের কারণে সবচেয়ে বেশি টাকা বিদেশে রয়ে যাচ্ছে। অনেক দিন আগে আমার সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈঠক হয়েছিল। তখন আমি বলে এসেছিলাম আমদানি পণ্যের দাম চেক করেন, দেখেন যেগুলোতে বড় বৈষম্য আছে, সেগুলো বন্ধ করেন। কিন্তু তারপরও কেন পারে না। এগুলো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।  তিনি বলেন, আমদানি হয়, সরাসরি কোথা থেকে হয়, দাম কি রকম হচ্ছে, সবই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভালো করেই জানে। তিনি বলেন, সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে রেমিট্যান্স সংগ্রহে বিদেশে কিছু এক্সচেঞ্জ হাউস খোলার অনুমতি দিয়েছিলেন। সেগুলো কত সংগ্রহ করছে আর কত দেশে পাঠাচ্ছে, তার ওপর এখন কোনো সুপারভিশন নেই। তাই রিজার্ভ যতদূর নেমেছে সেখানেই ধরে রাখার চেষ্টা করতে হবে। রিজার্ভ কমে গেলে সবার মনে শঙ্কার সৃষ্টি হয়। ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আসল সমস্যা ব্যাংকিং খাতে। এখানে কোনো নিয়মনীতি নেই। আগে যখন অনিয়ম হতো তখন পরিচালকদের ব্যাংক থেকে সরিয়ে দেওয়া হতো। এখন শেয়ার হোল্ডার ও স্বতন্ত্র পরিচালকরা মিলে অনিয়ম করছেন। ব্যাংকগুলো তারপরও টিকে আছে। কারণ মানুষের টাকা রাখার আর কোনো জায়গা নেই। ভিসানীতির বিষয়ে তিনি বলেন, ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক স্যাংশনে অর্থনীতির কিছু যায় আসে না। তবে সরকারের উচিত জ্বালানি, সার ও তেলের মজুদ বাড়ানো। তিনি বলেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের খরচ ঠেকাতে দুই মাস প্রিন্টিং প্রেস বন্ধ করে দেওয়া উচিত। প্রার্থীরা নির্বাচনের ব্যয় সারা দেশের ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন। অবশ্য নির্বাচনের সময় দেশের গরিব মানুষ কিছু টাকা পায়। অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ নিয়ে নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) আয়োজিত এই মতবিনিময় সভা গতকাল অনুষ্ঠিত হয়। নোয়াব সভাপতি এ কে আজাদের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, এসওএএস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুশতাক খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়্যারম্যান ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর। নোয়াবের সদস্যদের মধ্যে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, করতোয়া সম্পাদক মোজাম্মেল হক, বণিক বার্তার প্রকাশক ও সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ। এ সময় নোয়াবের সদস্য বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রায় পঁচিশজন সংবাদকর্মী উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভায় অর্থনীতিবিদরা দেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ গতিপ্রকৃতি নিয়ে আলোকপাত করেন। তাদের আলোচনায় মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ সংকট, রপ্তানিসহ সরকারি বিভিন্ন তথ্যে গরমিল, শিক্ষা ব্যবস্থা ও গুণগত মান, ব্যাংকিং সমস্যা ও সংকট, বিদেশি ঋণ, ডলারের বিনিময় মূল্য, অর্থনীতি ও বাণিজ্যের ওপর বিধিনিষেধ, পশ্চিমা বাজারে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা, প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি, অন্যান্য দেশের অর্থনৈতিক ইতিহাস, উন্নয়ন আলোচনার মতো বিষয়গুলো উঠে আসে। মতবিনিময় সভার সূচনা বক্তব্যে নোয়াব সভাপতি এ কে আজাদ অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি নিয়ে অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ প্রত্যাশা করেন। তিনি বলেন, আরও নিবিড়ভাবে বোঝার জন্য নোয়াবের এই আয়োজন। অর্থনীতির সঠিক খবর যেন সংবাদমাধ্যম তুলে ধরতে পারে সে জন্য তাদের জানা-বোঝার প্রয়োজন আছে।

 

 

 

সর্বশেষ খবর