বুধবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

নির্বাচনের বাইরে সব দলকে মাঠে নামাতে চায় বিএনপি

টার্গেট ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারি

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

রাজপথের আন্দোলনে শক্তি বাড়াতে নির্বাচনের বাইরে থাকা সব বিরোধী দলগুলোকে এক জায়গায় এনে সর্বদলীয় ঐক্য গড়ে তুলতে কাজ শুরু করেছে বিএনপি। এজন্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য ও একজন ভাইস চেয়ারম্যান ভোট বর্জনকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। দলটির নীতিনির্ধারকদের মতে, নির্বাচন বর্জনকারী সব রাজনৈতিক দল এক জায়গায় এসে আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখলে ৭ জানুয়ারি ভোট ঠেকানো যাবে। এজন্য মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন আগামী ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি পালন শেষে ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত আন্দোলনের নতুন ছক করছে দলটি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, সরকারবিরোধী সব দলকে এক জায়গায় এনে সর্বদলীয় ঐক্য গড়ে সরকার পতনের নতুন কর্মসূচি দেওয়া হবে।

জানা যায়, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে এক দফার আন্দোলনে আছে বিএনপিসহ সমমনা জোটগুলো। বিরোধী এ জোটে ডানপন্থি দলের পাশাপাশি আছে কয়েকটি বাম ঘরানার রাজনৈতিক দল। ইতোমধ্যেই এই জোট আসন্ন নির্বাচন বর্জন করেছে। পাশাপাশি ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি ইসলামী দলও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেয়নি। চলমান আন্দোলনে রাজপথে শক্তি বাড়াতে ডান, বাম ও ইসলামী দলগুলোকে মাঠে নামাতে চায় বিএনপি। ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের পর থেকে এক মাসের বেশি সময় ধরে রাজপথে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো সরকার পতনের দাবিতে হরতাল-অবরোধের মতো ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে চলেছে। এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে বিএনপির সঙ্গে জামায়াত ও যুগপৎ আন্দোলনে থাকা ৩৬টি ছোট দলও পৃথকভাবে রাজপথে রয়েছে। ডান, বাম ও ইসলামী দলগুলোকে এক ছাতার নিচে এনে শক্তি বাড়ানোর কাজটিই এখন করছে বিএনপি। জামায়াত প্রকাশ্যে বিএনপির সঙ্গে একমঞ্চে না উঠলেও দলটির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করে যাচ্ছে। এবার রাজপথে আন্দোলনে শক্তি বাড়াতে জামায়াতের পাশাপাশি ইসলামীকেও পাশে চায় বিএনপি। সেজন্য দলটির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে এক ধরনের সমঝোতা  বিএনপির হয়েছে বলে জানা গেছে। এক দফা আন্দোলনের পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের মূল টার্গেট এবার নির্বাচন ঠেকানো। শান্তিপূর্ণ সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না। দাবি আদায়ে আমাদের হরতাল-অবরোধ চলছে। ভোট ঠেকানোর আন্দোলন জোরদার করতে আগামীতে আরও ভিন্ন ধাঁচের কঠোর কর্মসূচি আসবে। বিএনপির সিনিয়র নেতাদের ভাষ্য হলো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিএনপি ভাঙার তৎপরতায় কোনো মহলই সফল হয়নি। ফলে সরকারের পরিকল্পনা হোঁচট খেয়েছে। এটিই বিএনপির বড় সাফল্য। দল ভাঙার তৎপরতায় যাতে কাউকে ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য গুরুত্বপূর্ণ নেতারা আত্মগোপনে ছিলেন। এখন তারা প্রকাশ্যে আসবেন। সূত্র জানান, ভোট ঠেকানোর কর্মকৌশল ঠিক করতে কয়েকদিন ধরেই ম্যারাথন বৈঠক করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। এসব বৈঠকে ২৮ অক্টোবরের পর থেকে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দেশজুড়ে অসংখ্য নেতা-কর্মী আটক হওয়ার পরবর্তী পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে কর্মসূচি নির্ধারণের পরামর্শ এসেছে। অর্থাৎ ঘেরাও বা অবস্থানের মতো কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য নেতা-কর্মীদের জমায়েত করানোর চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। যদিও কেউ কেউ মনে করছেন ‘সরকারবিরোধী অবস্থানে থাকা সব দল’ একমত হলে ‘যে কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়নের পরিস্থিতি’ তৈরি হবে। তবে, ১৮ ডিসেম্বরের আগে এ ছাড়া ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে কর্মসূচি দেওয়া হবে। এর আগে ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবসে বিদেশিদের কাছে দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরা হবে। ওইদিন রাজধানীতে সমাবেশ করার পরিকল্পনাও রয়েছে। এ ছাড়া যুগপতে থাকা দলগুলোর অঙ্গসংগঠনকে নিয়ে ঢাকায় নারী সমাবেশ, যুব সমাবেশ, শ্রমিক সমাবেশ, ছাত্রসমাবেশের কথাও ভাবছে বিএনপি। একই সঙ্গে বিএনপির কারাবন্দি, গুম-খুন ও নির্যাতনের শিকার নেতা-কর্মীর স্বজনদের নিয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে। ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত হরতাল-অবরোধের পাশাপাশি পরিস্থিতি বিবেচনায় জনসম্পৃক্ত এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চায় দলটি। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপির চলমান আন্দোলন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করেই শেষ হবে। এ জন্য যা যা করা প্রয়োজন বিএনপি নিয়মতান্ত্রিকভাবে তাই করবে।

সর্বশেষ খবর