বুধবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
অপহরণের ঘটনায় জিডি

নিখোঁজ শিশুর লাশ তিন দিন পর মিলল নদীতে

নিজস্ব প্রতিবেদক

অপহরণের তিন দিন পর লাশ মিলল রাজধানীর পার্শ্ববর্তী রূপগঞ্জের নয় বছরের শিশু ওসমান গণি স্বাধীনের। খিলগাঁও এলাকার নৌপুলিশের সদস্যরা খবর পেয়ে সোমবার সন্ধ্যায় বালু নদী থেকে তার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এলাকায় অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে একটি মহল নৃশংসভাবে খুন করে থাকতে পারে। সুষ্ঠু তদন্ত করলে থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসবে বলে মন্তব্য তাদের। নিহতের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, মেলায় যাওয়ার কথা বলে তিন দিন আগে ঘর থেকে বেরিয়েছিল স্বাধীন। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় গত শনিবার রূপগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার বাবা শাহিনুর রহমান। জিডি নম্বর-৬৯। তবে একটি অজ্ঞাত নম্বর থেকে কয়েক দফায় টাকা চাওয়া হয়েছিল। গতকাল বিকালে সরেজমিন নাওড়াপাড়ায় গেলে দেখা যায়, শাহিনুর রহমানের বাড়ির সামনে বহু মানুষের ভিড়। তার দুই ছেলের মধ্যে বড় ছিল স্বাধীন। এমন ফুটফুটে শিশুর মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছিলেন না। অনেকের চোখ থেকে গড়িয়ে পানি ঝরছিল। সবার চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ। জানাজার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলছিলেন, কিছুদিন আগে মোজাম্মেল, রুবেল এবং বিল্লাল হতভাগা শিশুটির বাবা শাহিনুরের কাছে চাঁদা দাবি করেছিলেন। তিনি চাঁদা দিতে কালক্ষেপণ করেন। এর মধ্যেই স্বাধীনকে অপহরণ করা হয়। নিহত শিশুর ফুপা আবদুর রহিম জানান, ১ ডিসেম্বর বিকালে তাদের পাশের এলাকায় বসুলিয়ায় মেলা দেখতে যাওয়ার কথা বলে বের হয়ে আর বাসায় ফেরেনি। তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করে কোথাও না পেয়ে পরদিন ২ ডিসেম্বর রূপগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে রাসেল নামে ভ্যানচালক পরিচয় দিয়ে অজ্ঞাত পরিচয়ের এক ব্যক্তি স্বাধীনের বাবাকে ফোন করে জানায়, আপনাদের কোনো শিশু হারিয়েছে কি না। আমি তাকে দেখেছি নতুন বাজার এলাকায়, এই বলে ৮০০ টাকা বিকাশে পাঠাতে বলে এবং টিটিপাড়ায় যেতে বলে। আমরা সেখানে গিয়ে তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করি। তখন তিনি বলেন, আমি এখন সদরঘাটে চলে আসছি। আপনারা দেখেন আসাদ নামে একজনের কাছে শিশুটি আছে। আমরা সেই এলাকায় অনেক খোঁজাখুঁজি করি, পাইনি। পরে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করি, ফোন বন্ধ পাই। পরে আরেকবার ফোন করে জানায়, আপনারা ৮০০ টাকা দিতে পারেন না। আবার সন্তানের খোঁজ নেন! ওই সময় হতাভাগা শিশুটির বাবা শাহিনুর বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। তিনি বলছিলেন, আমার পোলা তো কোনো দোষ করেনি। নিষ্পাপ শিশুটিকে ওরা মেরে ফেলল!! থানায় না। আমি ঢাকার ডিবির কাছে অভিযোগ দেব। তারা যেন খুনিকে শাস্তি দেয়। জানা গেছে, নিহত স্বাধীনের বাবা শাহিনুরের দোকান নাওড়া পশ্চিমপাড়ায়। তার দোকানের সীমানা ঘেঁষা একজন প্রভাবশালীর অফিস। তার কথাই আইন সেই গ্রামে। প্রতি শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে তিনি নিয়মিত আড্ডা দেন ওই অফিসে। গতকাল সন্ধ্যায় এ বিষয়ে কথা হয় স্থানীয় তিনবারের সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, এই গ্রামে রীতিমতো রাজতন্ত্র চলছে। একটি মহলের কথাই এখানে সবকিছু। আমার মতো কিছু লোক প্রতিবাদ করার কারণে ওই মহলের জিঘাংসার শিকার হয়েছি বিভিন্ন সময়।  তিনি আরও বলেন, রুবেল, মোজাম্মেল এবং বিল্লাল ওই মহলের হয়ে এলাকায় রীতিমতো ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে দীর্ঘদিন ধরে। কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস করে না। তাদের নির্যাতনের শিকার হয়ে খোদ সরকারদলীয় সমর্থক অন্তত ২০০ পরিবার এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। আবার তারা চাচ্ছে এলাকা অস্থির করতে। প্রশাসন সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করলে সবকিছুই বেড়িয়ে আসবে বলে মন্তব্য তার।

যেভাবে লাশের খবর : সোমবার সন্ধ্যায় বালু নদীতে এক শিশুর (ডি-কম্পোজ) লাশ ভেসে থাকতে দেখে স্থানীয়রা খবর দেন নৌপুলিশকে। পরে নৌপুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থল গিয়ে শিশুটির অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে। পরে আইনি প্রক্রিয়া শেষে ময়নাতদন্তের জন্য জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হয় বলে জানিয়েছেন, খিলগাঁওয়ের রাজাখালী নৌপুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) আসাদুজ্জামান।

সর্বশেষ খবর