শনিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

একাত্তরের পরম বন্ধু ইন্দিরা

তানভীর আহমেদ

একাত্তরের পরম বন্ধু ইন্দিরা

ভারতের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্ন থেকে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। পাকিস্তানি বাহিনী ২৫ মার্চ গণহত্যা শুরু করলে প্রাণভয়ে মানুষ ভারত সীমান্তে ছুটতে থাকলে সীমান্ত খুলে দেন ইন্দিরা গান্ধী। দীর্ঘ নয় মাস ১ কোটি বাংলাদেশি শরণার্থীকে খাদ্য ও আশ্রয় দিয়ে সর্বোচ্চ সহায়তা করেন। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম সফল করতে ২ লক্ষাধিক মুক্তিযোদ্ধার প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও রসদ দিয়ে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরায় বিভিন্ন শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন ইন্দিরা। শরণার্থীদের দুর্দশা দেখে তিনি বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ সংগ্রামে সাফল্য লাভ করবেই।’ বিশ্ব মিডিয়ায় শরণার্থীদের কষ্টের কথা, এ দেশে গণহত্যার ভয়াল চিত্র তুলে ধরেন ইন্দিরা। একাত্তরের ২৭ মার্চ লোকসভায় (ভারতীয় সংসদ) দেওয়া ভাষণে তিনি বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনার অত্যাচারের বিশদ বিবরণ দেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রস্তাব লোকসভায় তোলা হলে তা সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। মুজিবনগর সরকার গঠন হওয়ার পরপরই ইন্দিরা গান্ধী বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে সোচ্চার হন। মে মাসে বেলগ্রেডের বিশ্বশান্তি কংগ্রেসে ভারতীয় প্রতিনিধিরা ইন্দিরা গান্ধীর যে বাণী পাঠ করেন, তাতে বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত হওয়ায় প্রায় ৮০টি দেশের প্রতিনিধি করতালি দিয়ে সাদরে গ্রহণ করেন।

৮ আগস্ট তিনি বিশ্বের সব রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের কাছে বার্তা পাঠিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। ১১ আগস্ট বিশ্বের ২০টি রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রাণরক্ষার জন্য প্রভাব খাটানোর আহ্বান জানান ইন্দিরা। ৬ ডিসেম্বর লোকসভায় ভাষণ দানকালে ইন্দিরা গান্ধী ঘোষণা করেন, ‘ভারত আজ থেকে বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে।’ ১২ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভারতীয় বাহিনীর যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। সেনাদের পাঠিয়ে দেন বাংলাদেশকে সাহায্য করতে। পাঠান বিমানশক্তিও। এভাবেই বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রাণের বন্ধু হয়ে ওঠেন তিনি। ইন্দিরা গান্ধীর জম্ম ভারতের রাজনীতিতে সবচেয়ে প্রভাবশালী, ঐতিহ্যবাহী নেহরু পরিবারে। ১৯৩৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দেন। ১৯৬৬ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। সব মিলিয়ে প্রায় ১৫ বছর ভারত শাসন করেন তিনি। আন্তর্জাতিক রাজনীতি-বিশ্লেষকের অনেকেই একমত, ইন্দিরা গান্ধী বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী নারী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার ২০১১ সালে ইন্দিরা গান্ধীকে সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘বাংলাদেশ স্বাধীনতা সম্মাননা’য় ভূষিত করে। ওই বছর ২৫ জুলাই ইন্দিরা গান্ধীর পুত্রবধূ সোনিয়া গান্ধীর হাতে তুলে দেওয়া হয় এ মর্যাদাপূর্ণ সম্মাননা।

সর্বশেষ খবর