শিরোনাম
শনিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগ জাপায় সমঝোতা

ছাড় দেওয়া হলো ২৬ আসনে ক্ষোভ ১৪ দলের শরিকদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪-দলীয় জোটের আসন ভাগাভাগির বিষয় এখনো পুরোপুরি সমাধান হয়নি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪-দলীয় জোটকে ১৬টি আসন ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এবার আপাতত সাতটি আসন ছাড় দেওয়া হয়েছে। তারা সবাই নৌকা নিয়ে ভোট করবেন। এ ‘সীমিত’ আসনে সন্তুষ্ট নন শরিক দলের নেতারা। তারা পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সমঝোতা হয়েছে ২৬ আসনে। কোন কোন আসন ছাড় দেওয়া হবে, আজ গণমাধ্যমে জানাবে আওয়ামী লীগ। গত রাতে সংসদ ভবনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমের অফিসে বৈঠকে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে আজ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানোর সময় আসন সংখ্যা দু-একটি বাড়তে-কমতে পারে। বৈঠকের একাধিক সূত্র এ তথ্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছেন। বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষে ছিলেন দলটির সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম। জাতীয় পার্টির পক্ষে ছিলেন সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। এ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বৈঠক হয়েছে। আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। কাল (আজ) আমরা আবারও বৈঠকে বসব। এরপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাব।’

এদিকে ১৪-দলীয় জোটের শরিকরা আসন পুনর্বিবেচনার কথা জানালেও কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ নিয়ে শরিক দলের নেতাদের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাঁরা বলছেন, জোটের শরিকদের প্রত্যাশিত চাওয়া পূরণ করা হয়নি। বিগত সময়ের চেয়ে আসন সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া জোট নেতাদের ‘প্রয়োজনীয়তা’ শেষ করার ইঙ্গিত দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। আজকের মধ্যে জোটের আসন আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সবকিছু নির্ভর করছে জোটের প্রধান, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর। কাল রবিবার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। সোমবার দেওয়া হবে প্রতীক। সে কারণে আজই হতে পারে ভাগাভাগির শেষ দিন। কী হচ্ছে, দেখার অপেক্ষায় সবাই।

জানা গেছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার জন্য অনেক দিন আগে থেকে তাগিদ দিয়ে আসছিলেন শরিক জোটের নেতারা। কিন্তু সময় হয়ে ওঠেনি। ৪ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন ১৪ দলের শরিক নেতারা। ওইদিন আসন সমঝোতায় তেমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এজন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় জোটের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, ওবায়দুল কাদের, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমকে। এরপর আমির হোসেন আমুর বাসায় একাধিক বৈঠক হয়। দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার শরিকদের সাতটি আসন ছাড়ের কথা জানানো হয়। সে আসন নিয়ে সন্তুষ্ট নয় শরিকরা। তারা পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে গতকাল জোটের শরিক জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘বিনয়ের সঙ্গে আসন বণ্টনের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি করেছি। যে সাতটি আসনের প্রস্তাব করা হয়েছে, তা আরেকটু বাড়ানো দরকার। পুনর্বিবেচনার কী ফলাফল হয় দেখা যাক। তারপর আমরা উত্তর দেব।’ এদিকে গতকাল দুপুরে ধানমন্ডিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘১৪ দলে কয়েকটি নৌকা দেব। সাতটি নির্বাচনি এলাকায় আমরা নৌকার ছাড় দিতে পারব। এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন শরিক দলের যত নেতা আছেন, তাঁদের সন্তুষ্ট-অসন্তুষ্ট হওয়ার কিছু নেই। যাঁর যাঁর প্রতীকেই নির্বাচন করতে পারবেন সবাই। তাঁদের কেউ বাধা দেয়নি, দেবেও না। তাঁদের সবার এবার নির্বাচন করার সুযোগ আছে। কারও ব্যাপারে কোনো বাধা নেই।’

বৃহস্পতিবার রাতে যে সাতটি আসন ভাগাভাগির কথা জানানো হয়, সেখানে নেই শরিক জোটের তরিকত ফেডারেশনের নাম। এ নিয়ে গতকাল সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন দলটির চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী। চট্টগ্রাম-২ আসনে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টিকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ওই আসনের বর্তমান এমপি নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, আমি নৌকা পেয়েছি, সেটা আগেই আমাকে নিশ্চিত করা হয়েছে। সুপ্রিম পার্টি সম্পর্কে তিনি বলেন, তিন মাস আগে নিবন্ধন পেয়ে যদি কেউ মনোনয়ন পায়, তাহলে রাজনীতির অবস্থান কোথায় যাবে? সুপ্রিম পার্টি তো ১৪-দলীয় জোটে নেই। তারা জোটবদ্ধভাবে ভোট করবে, নৌকা প্রতীক নেবে এমন চিঠিও ইসিতে দেয়নি। নজিবুল বশর বলেন, তাদের রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড কী? ক্যারিয়ার কী? হঠাৎ কেউ এলো, দু-চারটা প্রোগ্রাম করল, বলে দিলেন আছে! এটা দেশের জন্য, আগামী রাজনীতির জন্য অশনিসংকেত। জোটের আসন ভাগাভাগি নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আসন ভাগাভাগি নিয়ে আমরা মোটেও সন্তুষ্ট নই। আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। এর আগেও আমাদের সাতটি, পাঁচটি আসন দেওয়া হয়েছিল। এখন তিনটি আসন দিচ্ছে। এটা যুক্তিযুক্ত হয়নি বলে মনে হচ্ছে।’ জাতীয় পার্টি-জেপি মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যেভাবে আসন বণ্টন করল, সেখানে বৈষম্য করা হয়েছে। অনেক দল বৈষম্যের শিকার হয়েছে। আমরা শেখ হাসিনার সঙ্গে আবারও বৈঠক চেয়েছি। একই সঙ্গে আসন বণ্টন পুনর্বিবেচনার দাবি করেছি।’

জাতীয় পার্টি : পঞ্চম দফার বৈঠকে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন সমঝোতা হলো আওয়ামী লীগের। ২৬ আসনে ছাড় পাচ্ছে বর্তমান সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। কোন কোন আসন ছাড় দেওয়া হবে তা আজ গণমাধ্যমে জানাবে আওয়ামী লীগ। আগের বৈঠকগুলোয় জাতীয় পার্টি এককভাবে ভোট করার পক্ষে থাকলেও গতকালের বৈঠকে জোটগত বা সমঝোতার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন দুই দলের নেতারা। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ছাড়ে জাতীয় পার্টি জিতেছে, এমন আসনগুলোয় এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থী আছে। জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেওয়া আসনগুলোয় নৌকার কোনো প্রার্থী থাকবে না।

আজ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সঙ্গে কথা বলে দুই দলের নেতারা আবার বৈঠক করে সমঝোতা হওয়া আসনগুলোর নাম ঘোষণা করবেন বলে সূত্র জানান।

রাশেদ খান মেননের আসন পরিবর্তন : ১৪-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননকে বরিশাল-৩ আসন ছেড়েছিল আওয়ামী লীগ। এক দিনের ব্যবধানে তাঁর আসন পরিবর্তন করা হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মেনন নৌকা প্রতীকে লড়বেন বরিশাল-২ আসনে। এ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তালুকদার মো. ইউনুছ তাঁর প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেবেন। গতকাল রাতে রাশেদ খান মেননকে টেলিফোনে এ তথ্য জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। রাশেদ খান মেনন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

সর্বশেষ খবর