দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের দেওয়া সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করে ছয় দিনে ২৮০ জন প্রার্থিতা ফিরে পেলেন। এর মধ্যে ১২৬ জনই স্বতন্ত্র; বাকি ১৫৪ জন দলীয় প্রার্থী। দলীয় প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের দুজন ও জাতীয় পার্টির ২৩ জন; বাংলাদেশ কংগ্রেস ১২; তৃণমূল বিএনপি ১৬; সুপ্রিম পার্টি ৭; বিএনএফ ১২; বিএনএম ৭; বিকল্পধারা ১; জাকের পার্টি ৬; ইসলামী ফ্রন্ট ২; সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট ১৯; জাসদ ৮; গণফোরাম ৫; ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) ৫; কল্যাণ পার্টি ৩ এবং ন্যাপ দুজন। গত ১০ ডিসেম্বর শুরু হয়ে গতকাল পর্যন্ত ছয় দিন নির্বাচন কমিশনে আপিল শুনানিতে এসব প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। মনোনয়নপত্র যাচাইবাছাইয়ে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা তাদের প্রার্থিতা বাতিল করেছিলেন।
আপিলে আওয়ামী লীগের তিনজন প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। তারা হলেন- ফরিদপুর-৩ শামীম হক, যশোর-৪ এনামুল হক বাবুল, ময়মনসিংহ-৯ আবদুস সালাম। এ ছাড়া বরিশাল-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহসহ দুজন বৈধ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে।
এদিকে গতকাল শেষ দিনের শুনানিতে আপিল মঞ্জুর হয়েছে ২২টি। এর মধ্যে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন ২০ জন। আর দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে বরিশাল-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ও ফরিদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম হকের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে। নামঞ্জুর হয়েছে ৬২ প্রার্থীর আপিল আবেদন। এদিকে গতকাল নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেছেন, ৩৫টি আপিল দায়ের হয়েছিল রিটার্নিং অফিসারের বাছাইয়ে মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছিল তার বিরুদ্ধে, বাতিলের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল হয়েছিল ৫২৫টি। এই মিলিয়ে মোট ৫৬০টি আপিল দায়ের হয়েছিল। আপিল শুনানিতে মনোনয়নপত্র বাতিল আদেশের বিরুদ্ধে ২৮০টি আপিল আবেদন কমিশন মঞ্জুর করেছেন। আর রিটার্নিং অফিসারের বাছাইয়ে যে ৩৫টি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল হয়েছিল তার ভিতরে পাঁচটি মঞ্জুর বা পাঁচজনের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে, দুটি আপিল আবেদন খারিজ করা হয়েছে, ২৮টি নামঞ্জুর করা হয়েছে।বৈধ প্রার্থী বাতিল হওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থীকে বা জোটের প্রার্থীকে দলীয় প্রতীক দিতে পারবে কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইনগতভাবে যিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থীর আইনের আলোকে তার মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। সেখানে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ১ শতাংশ ভোটারের সংখ্যা দিয়ে প্রার্থী হয়েছেন। সুতরাং সেখানে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই বৈধ হয়েছেন। উনি যদি কোনো দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করতেন, সেটি যদি বৈধ হতো ওই জোটের জন্য নির্দিষ্ট প্রতীক ছিল তারা সেই প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারতেন।
ঝালকাঠি-১ আসনে টিকে গেলেন শাহজাহান ওমর : বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহজাহান ওমরের প্রার্থিতা বহাল রেখেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল নির্বাচন ভবনে আপিল আবেদন শুনানি করে তার প্রার্থিতা বহাল রাখে কমিশন। হলফনামায় মামলার তথ্য গোপনের অভিযোগে শাহজাহান ওমরের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আপিল করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মনিরুজ্জামান মনির। শুনানি করে তার আবেদন নামঞ্জুর করে ইসি। প্রার্থিতা টিকে যাওয়ার রায় পেয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহজাহান ওমর।
এ সময় নির্বাচনী পরিবেশসহ নানান বিষয়ে কথা বলার সময় এক সাংবাদিক প্রশ্ন করে বসেন, আপনি তো ‘ডিগবাজি’ দিয়ে এসেছেন? সাংবাদিকের এ প্রশ্নে তাৎক্ষণিক ক্ষেপে গিয়ে শাহজাহান ওমর বলে ওঠেন, ডোন্ট সে দিস ওয়ার্ড... ডিগবাজি। সেই সাংবাদিকের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনি ভদ্রভাবে কথা বলুন। দল পরিবর্তন করেছি, এটা আমার সাংবিধানিক অধিকার। আপনি এখন একটি মিডিয়াতে আছেন, তবে আপনি চাইলে চাকরি পরিবর্তন করে অন্য মিডিয়াতে যেতেই পারেন।