সোমবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

কপাল পুড়ল ৩১ মাঝির

নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকায় উঠতে পারলেই সংসদ সদস্য (এমপি) হওয়া অনেকটা নিশ্চিত- এমনটিই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সহজ জয়ের আশায় চলচ্চিত্র অভিনেতা, ক্রিকেটার থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের জোট শরিক এবং মিত্ররা নৌকা প্রতীক পেতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। তবে ভোটে জোটের আসন ভাগাভাগির বলী হয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েও কপাল পুড়েছে নৌকার ৩১ মাঝির। দলীয়  সিদ্ধান্তে নৌকায় চড়লেও মাঝপথে বৈঠা ছেড়ে দিতে হয়েছে তাদের। নির্বাচন সামনে রেখে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন ৩ হাজার ৩৬২ জন। দুটি আসন বাকি রেখে ২৯৮টিতে প্রার্থী দেয় ক্ষমতাসীনরা। গতকাল মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে ১৪ দলীয় জোটকে ক্ষমতাসীনরা ছেড়েছে ছয়টি আসন। মহাজোটের শরিক ও বর্তমান সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকেও ২৫টি আসনে ছাড় দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ফলে ৩১টি সংসদীয় আসনে নৌকা পেয়েও শেষ পর্যন্ত কপাল পুড়ল আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্তদের।

এর মধ্যে রংপুর বিভাগে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের কাছে নৌকার বৈঠা ছাড়তে হয়েছে সর্বোচ্চ নয়জনকে। তারা হলেন- ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের মো. ইমদাদুল হক, নীলফামারী-৩ আসনের মো. গোলাম মোস্তফা, নীলফামারী-৪ আসনের মো. জাকির হোসেন বাবুল, রংপুর-১ আসনের মো. রেজাউল করিম রাজু, রংপুর-৩ আসনের তুষার কান্তি ম-ল, কুড়িগ্রাম-১ আসনের মো. আছলাম হোসেন সওদাগর, কুড়িগ্রাম-২ আসনের মো. জাফর আলী, গাইবান্ধা-১ আসনের আফরুজা বারী ও গাইবান্ধা-২ আসনের মাহবুব আরা বেগম গিনি।

রাজশাহী বিভাগে কপাল পুড়েছে চার মাঝির। তারা হলেন- বগুড়া-২ আসনের তৌহিদুর রহমান, বগুড়া-৩ আসনের মো. সিরাজুল ইসলাম খান, বগুড়া-৪ আসনের হেলাল উদ্দিন কবিরাজ ও রাজশাহী-২ আসনের মোহাম্মদ আলী। বগুড়া-২ ও ৩ আসন ছাড়া হয়েছে জাতীয় পার্টির শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ ও মো. নুরুল ইসলাম তালুকদারকে। এ ছাড়া বগুড়া-৪ আসনে মশাল ছেড়ে নৌকায় উঠেছেন জাসদের এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন। রাজশাহী-২ আসনে হাতুড়ি ফেলে নৌকা নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে থাকবেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা।

খুলনা বিভাগে নৌকা হারিয়েছেন সাতক্ষীরা-২ আসনের মো. আসাদুজ্জামান। আসনটি জাতীয় পার্টির মো. আশরাফুজ্জামানকে ছেড়েছে ক্ষমতাসীনরা।

বরিশাল বিভাগে নৌকাবঞ্চিত হয়েছেন পাঁচজন। তারা হলেন- পটুয়াখালী-১ আসনের মো. আফজাল হোসেন, বরিশাল-২ আসনের তালুকদার মো. ইউনুস, বরিশাল-৩ আসনের সরদার মো. খালেদ হোসেন, পিরোজপুর-২ আসনের কানাই লাল বিশ্বাস ও পিরোজপুর-৩ আসনের মো. আশরাফুর রহমান। এদের মধ্যে বরিশাল-২ আসনে লড়বেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন আর পিরোজপুর-২ আসনের নৌকার মাঝি করা হয়েছে জাতীয় পার্টি (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে। বাকি তিনটি আসনে নৌকার বৈঠা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে জাতীয় পার্টিকে।

জোট শরিকদের ভোটের মাঠে রাখতে ময়মনসিংহ বিভাগে নৌকা থেকে নামানো হয়েছে দুজনকে। এখন নৌকা প্রতীকে লড়বেন ময়মনসিংহ-৫ আসনে মো. আবদুল হাই আকন্দ এবং ময়মনসিংহ-৮ আসনে মো. আবদুছ ছাত্তার।

ঢাকা বিভাগেও নৌকা হারিয়েছেন তিন প্রার্থী। তারা হলেন- কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের মো. নাসিরুল ইসলাম খান, মানিকগঞ্জ-১ আসনের মো. আবদুস সালাম ও ঢাকা-১৮ আসনের হাবিব হাসান। তিনটি আসনই ক্ষমতাসীনরা ছেড়ে দিয়েছে জাতীয় পার্টিকে। এর মধ্যে ঢাকা-১৮ আসনে লড়বেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদের।

সিলেট বিভাগে নৌকা পেয়েও কপাল পুড়েছে হবিগঞ্জ-১ আসনের ডা. মো. মুশফিক হুসেন চৌধুরীর। সেখানে লড়বেন জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ আবদুল মুমিন চৌধুরী।

নির্বাচনি দৌড়ের মাঝপথে চট্টগ্রাম বিভাগে নৌকাবঞ্চিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের পাঁচজন। তারা হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের মো. শাহজাহান আলম, ফেনী-৩ আসনের মো. আবুল বাশার, লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের ফরিদুন্নাহার লাইলী, চট্টগ্রাম-৫ আসনের মোহাম্মদ আবদুস সালাম এবং চট্টগ্রাম-৮ আসনের নোমান আল মাহমুদ। লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের ফরিদুন্নাহার লাইলীর আসন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে জাসদের মোশারফ হোসেনকে। বাকি চারটি আসন ছাড়া হয়েছে জাতীয় পার্টিকে।

সর্বশেষ খবর