শুক্রবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভোটে ফেরার লড়াই চলছেই

♦ রিয়াজ-ওয়াহেদের প্রার্থিতা ফিরেছে ♦ শামীম বাবুলের বহাল ♦ শাম্মী ও সাদিক আবদুল্লাহর আবেদনের শুনানি ২ জানুয়ারি

নিজস্ব প্রতিবেদক

দ্বৈত নাগরিকত্ব, খেলাপি ঋণ ও ১ শতাংশ ভোটার জটিলতায় আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতা হারিয়ে অনেক প্রার্থীই দ্বারস্থ হচ্ছেন উচ্চ আদালতের। এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত তিন প্রার্থীর পাশাপাশি বেশ কিছু স্বতন্ত্র প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন হাই কোর্ট ও আপিল বিভাগের আদেশে। ভোটে ফেরার এ লড়াই চলছেই। গতকালও চট্টগ্রাম-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী এবং ময়মনসিংহ-১১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করে তাদের প্রতীক বরাদ্দের নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। পৃথক আবেদনের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন। অন্যদিকে প্রার্থিতা ফিরে পেতে বরিশাল-৪ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাম্মী আহমেদ এবং বরিশাল-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর আবেদনের ওপর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আগামী ২ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন চেম্বার জজ আদালত। দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগে ফরিদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শামীম হকের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদের করা আবেদনের শুনানির জন্য ২ জানুয়ারি দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে তার প্রার্থিতা বহালই থাকল বলে জানিয়েছেন আইনজীবী। এ ছাড়া যশোর-৪ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এনামুল হক বাবুলের প্রার্থিতা বাতিলের আবেদনে সাড়া দেননি চেম্বার জজ আদালত। ফলে তার প্রার্থিতাও বহাল রয়েছে।

রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী : চট্টগ্রাম-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। একই সঙ্গে তাকে প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে নির্বাচনের সুযোগ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল হাই কোর্টের আদেশ স্থগিত করে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন। এর আগে বুধবার তার রিট খারিজ করেছিলেন হাই কোর্ট। ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন জটিলতায় প্রার্থিতা হারিয়ে হাই কোর্টে রিট করেছিলেন তিনি।

মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ : ময়মনসিংহ-১১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। এর আগে বুধবার তার রিট খারিজ করেছিলেন হাই কোর্ট। ১ শতাংশ ভোটার জটিলতায় তার প্রার্থিতা বাতিল করেছিলেন নির্বাচন কমিশন। পরে তিনি হাই কোর্টে রিট করেন।

শামীম হক : দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগে ফরিদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শামীম হকের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদের আবেদনের ওপর শুনানির জন্য ২ জানুয়ারি দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। গতকাল আপিল বিভাগের অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন। ওইদিন আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে এ আবেদনের শুনানি হবে। এর আগে মঙ্গলবার আপিল বিভাগের অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের আদালত শামীম হককে নির্বাচনে অংশ নিতে সুযোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগ এনে শামীম হকের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আপিল করেছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যবসায়ী এ কে আজাদ। এরপর শুনানি শেষে ১৫ ডিসেম্বর আপিল মঞ্জুর করে শামীম হকের মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেয় নির্বাচন কমিশন। পরে কমিশনের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে রিট করেন শামীম। ১৭ ডিসেম্বর শামীমের রিট খারিজ করে দেন হাই কোর্ট। এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যান তিনি। ১৮ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত তার প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করেন। পরে গতকাল শামীম হকের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আপিল বিভাগে যান এ কে আজাদ।

এনামুল হক বাবুল : যশোর-৪ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এনামুল হক বাবুলের প্রার্থিতা বাতিলের আবেদনে সাড়া দেননি চেম্বার জজ আদালত। ফলে তার প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করে দেওয়া আদেশ বহাল রয়েছে। এর আগে এনামুল হক বাবুলের প্রার্থিতা বাতিলের আবেদন করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সুকৃতি কুমার মন্ডল। ঋণখেলাপের অভিযোগে নির্বাচন কমিশন প্রার্থিতা বাতিল করলে হাই কোর্টে রিট করেন বাবুল। হাই কোর্টে তার রিট খারিজ হয়। পরে আপিল বিভাগে আবেদন করেন তিনি।

শাম্মী আহমেদ : প্রার্থিতা ফিরে পেতে বরিশাল-৪ আসনের নৌকার প্রার্থী শাম্মী আহমেদের আবেদন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আগামী ২ জানুয়ারি দিন ঠিক করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক।

শাম্মী আহমেদ ও একই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী পঙ্কজ দেবনাথ পরস্পরের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আপিল করেছিলেন ইসিতে। শাম্মী আহমেদ অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক হলেও তা গোপন করেছেন বলে অভিযোগ ছিল পঙ্কজের। ১৫ ডিসেম্বর শাম্মী আহমেদের মনোনয়ন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। তবে পঙ্কজ দেবনাথের প্রার্থিতা বহাল রাখা হয়। পরে শাম্মী আহমেদ হাই কোর্টে রিট করেন। যেটি ১৭ ডিসেম্বর খারিজ হয়ে যায়। পরদিন তিনি আপিল বিভাগে আবেদন করেন। শুনানি শেষে চেম্বার আদালত ‘নো অর্ডার’র আদেশ দেন। ফলে হাই কোর্টের আদেশ বহাল থেকে যায়। ওই আদেশের ফলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ হারান শাম্মী। পরে গতকাল ফের আপিল বিভাগে যান তিনি।

সাদিক আবদুল্লাহ : প্রার্থিতা ফিরে পেতে বরিশাল-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর আবেদনের ওপর শুনানির জন্য আগামী ২ জানুয়ারি দিন রেখেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। ওইদিন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এ আবেদনের শুনানি হবে। দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগে তার প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আপিল করেছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহিদ ফারুক। ১৫ ডিসেম্বর নির্বাচন ভবনে আপিল শুনানি শেষে বরিশাল-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সিটির সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর প্রার্থিতা বাতিল করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পরে এ আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে রিট করেন সাদিক আবদুল্লাহ। হাই কোর্ট তার প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করে আদেশ দেন। তবে পরদিন চেম্বার জজ আদালত হাই কোর্টের আদেশ স্থগিত করায় নির্বাচন থেকে ছিটকে পড়েন সাদিক আবদুল্লাহ। গতকাল আবারও চেম্বার জজ আদালতে যান তিনি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর