বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

১০ ট্রাক নিয়ে ফেরি ডুবল পদ্মায়

সবাইকে তুলে নিখোঁজ মাস্টার

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি

১০ ট্রাক নিয়ে ফেরি ডুবল পদ্মায়

ঘন কুয়াশার কারণে নোঙর করে রাখা ফেরি পণ্যবোঝাই ১০টি ট্রাক নিয়ে পাটুরিয়া ঘাটের অদূরে ডুবে গেছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ‘রজনীগন্ধা’ নামে ফেরিটি দৌলতদিয়া ঘাট থেকে পণ্যবাহী ট্রাক নিয়ে পাটুরিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে আসে। কুয়াশার তীব্রতা বাড়লে ঘাটের কাছাকাছি স্থানে নোঙ্গর করে রাখা হয় ফেরিটি। গতকাল সকালে আস্তে আস্তে ফেরিটি ডুবে যায়। এ সময় ফেরিতে থাকা ট্রাকের চালক, হেলপার ও জাহাজের লোকদের জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তবে, ফেরির সেকেন্ড মাস্টার হুমায়ুন কবীর এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। ফেরিডুবির কারণ নিয়ে ধূম্রজাল তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) কর্তৃপক্ষ বলছেন, বালুবাহী বাল্কহেডের ধাক্কায় ফেরিডুবির ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে নৌ-পুলিশ বলছে, ফেরিটি বেশ পুরনো। ডুবোচরের ধাক্কা লেগে ফেরির তলা ফেটে গিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। ফেরি উদ্ধারে হামজা নামে একটি উদ্ধারকারী ঘটনাস্থলে কাজ শুরু করেছে। ‘রুস্তুম’ নামে আরেকটি উদ্ধারকারী জাহাজ মুন্সীগঞ্জ থেকে ঘটনাস্থলে আসছে। প্রত্যক্ষদর্শী ভাঙারি ব্যবসায়ী নাজমুল বলেন, ভাঙারি মাল নিয়ে ট্রাকের সঙ্গে ঢাকা যাচ্ছিলাম। ঘন কুয়াশার কারণে পাটুরিয়া ঘাটের কাছাকাছি আমাদের ফেরিটি নোঙ্গর করে রাখা ছিল। রাত ৩টার দিকে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়। এ সময় দেখা যায় ফেরিতে আস্তে আস্তে পানি ডুকছে আর তলিয়ে যাচ্ছে। পরে নৌ কর্তৃপক্ষ আমাদের উদ্ধার করে। তিনি আরও বলেন, ফেরিতে ছোট বড় মিলে মালামাল বোঝাই নয় ট্রাক ছিল। খৈমুদ্দিন নামে এক ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ী বলেন ফেরিতে আমার ভুট্টাভর্তি দুটি ট্রাক ডুবে গেছে। এতে ১৭ লাখ টাকার ভুট্টা ছিল। ভুট্টার মালিক তো আমাকে ছাড়বে না। আমি কীভাবে কী করব ভেবে পাচ্ছি না। উদ্ধারকারীদের একজন ফেরিতে আর কোনো লোক নেই অনুমান করে বলেন, লোক থাকলে স্বজনরা ঘাটে এসে আহাজারি করতেন।’ দুর্ঘটনার পর নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তফা কামাল, মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক রেহেনা আকতার, ফরিদপুর অঞ্চলের নৌ-পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল বলেন, দুর্ঘটনার কারণ জানতে দুটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটি রিপোর্ট পেশ করবে।

সবাইকে ট্রলারে তুলে দিয়ে নিখোঁজ হলেন হুমায়ুন : মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটের অদূরে ফেরি রজনীগন্ধা ডুবির ঘটনায় সহকারী মাস্টার হুমায়ুন কবির এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। তিনি বিআইডব্লিউটিসি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের আরিচা আঞ্চলিক কমিটির দক্ষিণ (পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া) শাখার সভাপতি ছিলেন। গতকাল সকাল ৮টার দিকে ফেরিটি ডুবে যায়। হুমায়ুনের গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরে। তার স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।

তিনি ২০১১ সালে বিআইডব্লিউটিসিতে চাকরি শুরু করেন। সাত মাস আগে এখানে যোগদান করেন।

বিআইডব্লিউটিসির আরিচা ঘাটের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রুবেলুজ্জামান বলেন, আমরা শুনেছি, যখন ফেরিটি ডুবতে থাকে তখন হুমায়ুন সবাইকে সতর্ক করেন। একে একে সবাইকে ট্রলারে তুলে দেন। শেষে আর তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পাটুরিয়া ঘাট এলাকার বাসিন্দা রিয়াজ উদ্দীন মেম্বার বলেন, ঘাটে এসে দেখলাম ফেরি থেকে ট্রলারে করে কয়েকজনকে নিয়ে এলো। সেখানে একজন ফেরির স্টাফ বলতেছিলেন, তিনি হুমায়ুনকে নিচে (ফেরির নিচতলা) মোবাইল আনতে যেতে দেখেছেন। হুমায়ুন নিচে গেছেন আর ফেরি ডুবে গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ফেরি সেক্টরের ম্যানেজার সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত ফেরিতে থাকা সবাই আত্মরক্ষার চেষ্টা করেছেন। ফেরিটি যখন ডুবছিল হয়তো কোনো কিছুর চাপায় (হুমায়ুন) নিচে ফেরির মধ্যে আটকে আছেন।

সর্বশেষ খবর