বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে বাড়ল নীতি সুদহার

নিজস্ব প্রতিবেদক

বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে এবং নীতি সুদহার বাড়িয়ে চলতি অর্থবছরে দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে

অর্থের জোগান কমিয়ে সংকোচনমূলক এ মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান কর্মকর্তা, চিফ ইকোনমিস্ট, গবেষণা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও সহকারী মুখপাত্ররা উপস্থিত ছিলেন। নতুন মুদ্রানীতিতে বাজারে অর্থের জোগান কমাতে মুদ্রানীতির সব লক্ষ্যমাত্রা অবনমন করা হয়েছে। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। নীতি সুদহার ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশের সঙ্গে ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে। মূলত মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে নীতি সুদহার বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণের সুদ বাড়বে, ঋণের চাহিদা কমে যাবে। অর্থনীতিতে টাকার প্রবাহ কমে গেলে মূল্যস্ফীতি কমতে থাকবে।

অনুষ্ঠানে গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, জুন মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ লক্ষ্যে নতুন মুদ্রানীতিতে নীতি সুদহার ২৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে। নতুন মুদ্রানীতিতে টাকার চাহিদা কমাতে নীতি সুদহার বাড়ানো হয়েছে। ঋণের সুদহারের যে ৯ শতাংশ ক্যাপ ছিল, তা তুলে দেওয়া হয়েছে। নীতি সুদহার করিডরের ঊর্ধ্বসীমা স্পেশাল রেপো বা এসএলএফের (স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি) সুদহার ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। গভর্নর বলেন, মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নেমে না আসা পর্যন্ত সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অব্যাহত থাকবে। এবারের মুদ্রানীতিতে ৪টি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে মনিটরিং পলিসি করা হয়েছে। সরকারের নির্বাচনি ইশতেহারের সঙ্গে এই মুদ্রানীতি সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশ কমলে অসুবিধা নেই বলেও মন্তব্য করেন গভর্নর।

সংবাদ সম্মেলনে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতির একটি খসড়া পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন আকারে উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. হাবিবুর রহমান। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, চাহিদাজনিত মূল্যস্ফীতির চাপ প্রশমন, বিনিময় হারের চাপ নিয়ন্ত্রণ, সরকারের কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় অর্থের সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী খাতে ঋণ সরবরাহ নিশ্চিত করার বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে মুদ্রানীতিতে। জানানো হয়, ৪ শতাংশের ব্যাংক রেটে পরিবর্তন আনা হয়নি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বাজারে টাকার জোগান বাড়তি হয়নি বরং মুদ্রাস্ফীতিকে লাগাম দেওয়া গেছে। সুদের হার বেড়েছে ঋণের, আমানতেও সুদ হার বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে এখন দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৫ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার। ডলারের দাম ১১০ টাকায় রাখা গেছে। বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় এখনো সেভাবে ডলারের দাম বাড়েনি। অতি নমনীয় বা কম নমনীয় হয়নি টাকা। নতুন মুদ্রানীতিতে বিদেশি মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি ব্যবহারের চিন্তা করা হচ্ছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়। তবে এ পদ্ধতিতে ডলারের বিনিময় হার কত হবে, তা বলা হয়নি। পরে তা জানানো হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়।

 

সর্বশেষ খবর