বৃহস্পতিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

কালো পতাকা বনাম শান্তি সমাবেশ

♦ সতর্ক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ♦ নেতা-কর্মী চাঙা করতে বিএনপির ধারাবাহিক কর্মসূচি শুরু ♦ কোথাও ছাড় দেবে না আওয়ামী লীগ

শফিকুল ইসলাম সোহাগ ও শরিফুল ইসলাম সীমান্ত

নেতা-কর্মীদের চাঙা করতে আগামীকাল শুক্র ও পরদিন শনিবার এক দফা দাবিতে কালো পতাকা কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠে নামছে বিএনপি। নির্বাচনের পর আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামছে দলটি। অন্যদিকে, কোথাও ছাড় দেবে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। শান্তি ও গণতন্ত্র সমাবেশের মাধ্যমে তারাও নামছে মাঠে। ফলে রাজপথে আবারও মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। তবে এসব কর্মসূচি ঘিরে সতর্ক অবস্থানে থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি বিএনপির : জাতীয় নির্বাচনের নেতা-কর্মীদের চাঙা ধারাবাহিক কর্মসূচিতে যাচ্ছে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ‘কালো পতাকা’ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি। আগামীকাল শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) জেলায় জেলায় ও পরের দিন শনিবার (২৭ জানুয়ারি) মহানগরগুলোয় ‘কালো পতাকা’ মিছিলের কর্মসূচি পালন করা হবে। বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে থাকা দল ও জোটগুলোও একই দিনে একই কর্মসূচি পালন করবে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতি, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি, সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, অবৈধ সংসদ বাতিলসহ ‘এক দফা’ দাবি আদায়ে এ কালো পতাকা মিছিল করা হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার দুই সপ্তাহ পর বিএনপি কর্মসূচি দিল। তারা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ভোট বর্জন করে। এখন কালো পতাকা মিছিলের এ কর্মসূচির ক্ষেত্রে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়কে প্রধান ইস্যু হিসেবে এনেছে দলটি।

নেতা-কর্মীরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের এক দফার আন্দোলনে অবরোধ-হরতালের মতো কর্মসূচি দিয়েও পেরে উঠছে না বিএনপি। মামলা, হামলায় জর্জরিত দলটির লাখ লাখ নেতা-কর্মী। কারাবন্দির সংখ্যাও প্রায় ২৫ হাজার ছাড়িয়েছে। এরপরও রাজনীতির ময়দানে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখছে বিএনপি। নেতা-কর্মীদের চাঙা রাখতে নেওয়া হচ্ছে নানা পরিকল্পনা। গত বছরের ২৮ অক্টোবরের সহিংসতা কাটিয়ে উঠতে নানা কৌশল গ্রহণ করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। সংগঠনকে শক্তিশালী করে কঠোর কর্মসূচিতে যেতে চান তারা। গত ৯ জানুয়ারি থেকে প্রতিদিনই বিএনপি ও তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে দলীয় কেন্দ্রীয় নেতাদের বৈঠক চলছে। এসব বৈঠকে আন্দোলনে নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন হয়েছে। পাশাপাশি সাংগঠনিক দুর্বলতাগুলো শনাক্ত হচ্ছে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি দিয়েছি। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি কালো পতাকা মিছিলে হামলার হুমকি এসেছে। বলেছে, পতাকা মিছিল করলে নাকি গত ২৮ অক্টোবরের মতো আমাদের ওপর ক্র্যাকডাউন করা হবে। তিনি বলেন, আমরা কোন দেশে বাস করছি। ৭ জানুয়ারির ভোট বর্জনের আহ্বানে লিফলেট বিতরণের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পর্যন্ত এই সরকার বাধা দিয়েছে। এটি একটি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি। আমরা নব্য বাকশাল পদ্ধতির মূলোৎপাটন করতে চাই। এখন আমাদের প্রতিবাদ করার সময়। আমরা ১৫ মাস ধরে লাগাতার কর্মসূচি পালন করে আসছি। আমরা চাই বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে। মানুষের ন্যায়ের শক্তির কাছে বন্দুকের শক্তি টিকতে পারে না।

শান্তি ও গণতন্ত্র সমাবেশ কর্মসূচি আওয়ামী লীগের : মাঠের রাজনীতিতে বিএনপিকে কোথাও ছাড় দিতে নারাজ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ২৭ জানুয়ারি মহানগরগুলোতে বিএনপির কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচির বিপরীতে পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি। ওইদিন রাজধানীতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ব্যানারে শান্তি ও গণতন্ত্র সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। দলীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে ২৭ জানুয়ারি, শনিবার বেলা ৩টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশে দলের পক্ষ থেকে দুস্থ মানুষদের মধ্যে বিতরণ করা হবে শীতবস্ত্রও। নির্দলীয় সরকারের অধীনে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে ২০২২ সাল থেকে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ করেছিল বিএনপি। প্রথম দিকে বিএনপির পাল্টা কর্মসূচি না দিলেও ওই বছরের ১০ ডিসেম্বর থেকে গত বছরের ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত বিএনপির কর্মসূচির বিপরীতে পাল্টা কর্মসূচি পালন করে এসেছে আওয়ামী লীগ। ওই সময়ে রাজধানীতে বিএনপির কর্মসূচির দিন পাল্টা শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করেছিল ক্ষমতাসীনরা। এরপর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে বিএনপি লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করলেও আওয়ামী লীগ পাল্টা কোনো কর্মসূচি দেয়নি। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ২৭ জানুয়ারি বিএনপি রাজধানীতে জনসমাগম ঘটানোর চেষ্টা করছে। এমন অবস্থায় ওই দিন রাজপথ নিজেদের দখলে রাখতে পাল্টা সমাবেশ করবে তারা। এ জন্য ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ব্যানারে শান্তি ও গণতন্ত্র সমাবেশের ডাক দিয়েছে তারা। এ সমাবেশ সফল করতে বর্ধিত সভাও করবে সংগঠনটি।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতির চাকা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে গতিতে এগিয়ে চলছে, সেই গতি যাতে বৃদ্ধি পায় সেজন্য দেশে শান্তি, শৃঙ্খলা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে বিএনপি-জামায়াত যেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বাংলাদেশের সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রার পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে না পারে সে জন্য সতর্ক প্রহরায় থাকবে আওয়ামী লীগ।

বিএনপি ধীরে ধীরে জনবিচ্ছিন্ন হচ্ছে

আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত জনগণ

সন্ত্রাসীর জায়গা নেই রাজনীতিতে

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর