শনিবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

দিনে ৫ শতাধিক ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি

♦ যোগসাজশে সহজ ডটকম ও ট্রেনের অসাধু কর্মচারী ♦ র‌্যাবের হাতে চক্রের হোতাসহ গ্রেফতার ১৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির অভিযোগে ১৪ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। তাদের থেকে উদ্ধার করা হয়েছে অবৈধভাবে সংগ্রহ করা ট্রেনের ১ হাজার ২২৪টি টিকিটসহ নগদ ২০ হাজার টাকা।

র‌্যাব বলছে, রেলস্টেশনে কর্মরত অসাধু কর্মচারী, সহজ ডটকমের অসাধু কর্মকর্তা, সার্ভার রুম ও আইটি সদস্যদের সহযোগিতায় ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করতের গ্রেফতারকৃতরা। তারা প্রতিদিন ৫ শতাধিক টিকিট কালোবাজারির মাধ্যমে সংগ্রহ করার পর বেশি দামে বিক্রি করতেন। গ্রেফতারকৃতরা হলেন কালোবাজারি একটি সিন্ডিকেটের মূলহোতা মো. সেলিম, প্রধান সহযোগী আনোয়ার হোসেন ওরফে কাশেম, অবনী সরকার সুমন, হারুন মিয়া, মো. মান্নান, আনোয়ার হোসেন ওরফে ডাবলু, মো. ফারুক, শহীদুল ইসলাম বাবু, মো. জুয়েল ও আবদুর রহিম। এদের বয়স ৩৫ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে। গতকাল দুপুরে কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের এসব তথ্য দেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত রাজধানীর কমলাপুর ও বিমানবন্দর এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে র‌্যাব জানায়, কমলাপুর রেলস্টেশনে সেলিম ও বিমানবন্দর রেলস্টেশনে উত্তম সিন্ডিকেটের মূলহোতা উত্তম। তাদের নেতৃত্বে এ চক্রটি সংঘবদ্ধভাবে দীর্ঘদিন ধরে মহানগর প্রভাতি, তূর্ণা নিশীথা, চট্টলা এক্সপ্রেস, উপবন এক্সপ্রেস, মহানগর এক্সপ্রেস, পারাবত এক্সপ্রেস, উপকূল এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, কালনী এক্সপ্রেসসহ বিভিন্ন ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করে আসছিল। এরা রেলস্টেশনের কুলি, আশপাশ এলাকার টোকাই, রিকশাওয়ালা ও দিনমজুরদের প্রলোভন দেখিয়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে টিকিট সংগ্রহ করত। এ ক্ষেত্রে তাদের প্রত্যেককে চারটি করে টিকিট সংগ্রহের বিনিময়ে ১০০ টাকা করে দেওয়া হতো।

র‌্যাব আরও জানায়, কাউন্টারের কিছু অসাধু টিকিট বুকিং কর্মচারী দিয়ে টিকিট কাটার সময় সাধারণ যাত্রীর দেওয়া এনআইডি সংগ্রহ করে রাখা হয়। পরে সেগুলো ব্যবহার করে সংরক্ষণকৃত প্রতিটি এনআইডি দিয়ে ট্রেনের চারটি করে টিকিট সংগ্রহ করা হয়। এভাবে তারা প্রতিদিন ৫ শতাধিক টিকিট সংগ্রহ করত। আবার অনেক ক্ষেত্রে টিকিট কাউন্টারে নিজেরা লাইনে দাঁড়িয়ে এবং কৌশলে লাইনে অপেক্ষমাণ টিকিটপ্রত্যাশী সাধারণ যাত্রীর এনআইডি ব্যবহার করে চারটি টিকিট কিনে তিনটি নিজেরা তার কাছ থেকে টাকা দিয়ে কিনে নিত। এ ছাড়া ঈদ, পূজা, সাপ্তাহিকসহ বিশেষ ছুটির দিন উপলক্ষ করে এরা রেলস্টেশনের কিছু অসাধু কর্মচারী এবং অনলাইনে টিকিট কেনার জন্য ব্যবহƒত ভেন্ডার প্রতিষ্ঠান সহজ.কমের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও সার্ভার রুম/আইটির সদস্যের সহযোগিতায় তাদের কাছে সংরক্ষিত জনসাধারণের এনআইডির তথ্য ব্যবহার করে এমনকি সার্ভার ডাউন করে তারা অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করত। পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী দিয়ে অনলাইনে টিকিট কেটে সেগুলো তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করত। খন্দকার মঈন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে সরাসরি ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এ রুটে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ ও ‘পর্যটক এক্সপ্রেস’ নামে দুটি ট্রেন যাত্রা করে। দীর্ঘ এ ভ্রমণে নিরাপদ ও আরামদায়ক যাত্রার জন্য এ রুটে ট্রেনের টিকিটের ব্যাপক চাহিদা দেখা দেয়। আর টিকিটের চাহিদা বেশি থাকায় টিকিট কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্যও বেড়ে যায়। অনলাইনে বা কাউন্টারে টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হয়ে যায় এ রুটের ট্রেনের টিকিট। কিন্তু কালোবাজারিদের কাছে ২-৩ গুণ দামে এ টিকিট বিক্রি হতে দেখা যায়। তিনি বলেন, চাহিদা অনুযায়ী টিকিট না পাওয়া এবং কালোবাজারিদের বেশি দামে টিকিট বিক্রির বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হয়। ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধ ও কালোবাজারিদের আইনের আওতায় আনতে গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে এ অভিযান চালানো হয়।

সর্বশেষ খবর