শিরোনাম
বুধবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

মা বাবা মেয়েকে গলা কেটে হত্যা

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

মা বাবা মেয়েকে গলা কেটে হত্যা

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্র বারোয়ারী বটতলা মহল্লায় মা-বাবা ও মেয়েকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। গত শনিবার সন্ধ্যার পর কোনো এক সময় দুর্বৃত্তরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে পুলিশ ধারণা করছে। সোমবার দুপুরে পুলিশ নিহত বিকাশের তিনতলা বাড়ির ফ্ল্যাট থেকে লাশ তিনটি উদ্ধার করে হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে। নিহতরা হলেন- তাড়াশ পৌর এলাকার কালিচরণ সরকারের ছেলে বিকাশ সরকার (৪৫), তার স্ত্রী স্বর্ণা রানী সরকার (৪০) ও মেয়ে তাড়াশ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী পারমিতাসরকার তুষি (১৫)। বিকাশ সরকার হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ তাড়াশ উপজেলা শাখার কোষাধ্যক্ষ ও তাড়াশ গোপাল জিউ বিগ্রহের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হতবাক হয়ে পড়েছে তাড়াশবাসী। শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো এলাকায়। বিকাশের ভাগ্নে লিপন জানান, শনিবার রাত থেকে মামা বিকাশ সরকারকে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেন না। এ নিয়ে দুশ্চিন্তা শুরু হয়। একপর্যায়ে রবিবার রাতে বগুড়ার শেরপুর থেকে মাইক্রো নিয়ে মামার বাড়ি সিরাজগঞ্জের তাড়াশে রওনা হই। রাত ১২টার দিকে বাসায় এসে দরজায় তালা দেখে মামাকে পুনরায় কল করি। কিন্তু ঘরের ভিতর থেকে ফোনের আওয়াজ শোনা গেলেও ফোন রিসিভ না করায় সন্দেহ হয়। পরে স্থানীয় বাসিন্দা তপন গোস্বামীকে ডেকে নিয়ে আসি। তার পরামর্শে রাত ২টার দিকে তাড়াশ থানায় বিষয়টি অবহিত করে পুলিশের সহায়তায় তালা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে দেখি মামার ক্ষতবিক্ষত লাশ একটি রুমের মেঝেতে পড়ে আছে। পাশের রুমের মেঝেতে মামি স্বর্ণা রানী ও খাটের ওপর বোন তুষির লাশ পড়ে আছে।

স্থানীয় বাসিন্দা তপন গোস্বামী জানান, বিকাশ সরকার শনিবার বিকালে তাড়াশ পূজা উদযাপন কমিটির একটি সভা করতে দেশীগ্রাম যান। ওই সময় একটি ফোন এলে বিকাশ সরকার দ্রুত বাসায় চলে আসেন। এরপর থেকে বিকাশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। সোমবার রাত ১২টার দিকে বিকাশ সরকারের ভাগ্নে ফোন দিলে তার সঙ্গে বাসায় গিয়ে তালা দেখার পর পুলিশ সঙ্গে নিয়ে তালা ভাঙা হয়।

বিকাশের দুই বোন আরতি ও প্রমীলা বলেন, হত্যাকাণ্ডের কারণ জানি না তবে আমার ছোট বোনের এক মেয়েকে রাজশাহীর পুঠিয়াতে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার স্বামী তাকে জ্বালাতন করে এ জন্য বিকাশ ভাগ্নির জন্য মামলা করেছে। সেই মামলায় ভাগ্নি জামাই জেলহাজতে রয়েছে। এ ছাড়াও জমিজমা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে স্বজনদের মধ্যে ঝামেলা রয়েছে। এসব কারণেই ভাই-ভাবি ও ভাতিজাকে হত্যা করা হতে পারে। তারা দ্রুত হত্যার রহস্য উদঘাটন পূর্বক হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবি জানান। বিকাশ সরকারের বয়োবৃদ্ধ মা শান্তি বেলা জানান, পারিবারিকভাবে আলাদা হওয়ায় এক মাস করে দুই ছেলের ফ্ল্যাটে থাকি। তিন-চার দিন আগে ওই ছেলের ফ্ল্যাট থেকে আমি বড় ছেলের ফ্ল্যাটে এসেছি। ঘরে তালা দেখে ভেবেছিলাম ওরা মেয়ের বিয়ের জন্য হয়তো পাত্রপক্ষের বাড়িতে গেছে। পাশাপাশি ফ্ল্যাট কিন্তু একটু শব্দও শুনতে পাইনি। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ৩টা বুকের ধনকে হত্যা করেছে আমি ওদের শাস্তি দাবি করছি।

সিরাজগঞ্জ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সন্তোষ কুমার কানু নৃশংস হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের গ্রেফতারপূর্বক শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।

তাড়াশ পৌর মেয়র আবদুর রাজ্জাক জানান, তাড়াশ পৌর এলাকায় এই প্রথম এত বড় নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তিনজন মানুষকে নির্মমভাবে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। তিনি হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। সিরাজগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) সামিউল আলম জানান, হত্যাকাণ্ডের কোনো ক্লু এখনো পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, কোনো লুট বা ডাকাতির উদ্দেশে নয়, বড় ধরনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটানোর পর ফ্ল্যাটের দরজায় তালা লাগিয়ে পালিয়ে যায়। হত্যাকাণ্ডের সব আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি সিআইডি, ডিবি, র‌্যাব ও পিবিআই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলামত যাচাই-বাছাইসহ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন এবং হত্যাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা করছে। আশা করছি দ্রুত আসামিদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। সিআইডি পরিদর্শক মোহাইমিনুল জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। আমরা ছায়া তদন্ত করছি। এখনো হত্যার কারণ উদঘাটন হয়নি। পিবিআইয়ের পরিদর্শক গোলাম কিবরিয়া জানান, আমরাও ছায়া তদন্তে নেমেছি। তদন্তে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। সন্দেহভাজন হিসেবে একজনকে শনাক্ত করতে পেরেছি। তবে তদন্তের স্বার্থে নাম বলা যাচ্ছে না। তাড়াশ থানার ওসি নজরুল ইসলাম জানান, নিহতদের লাশ উদ্ধার করে হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এখনো মামলা হয়নি।

বারোয়ারী বটতলা মহল্লায় তিনতলা ফ্ল্যাটে বাবা-মা ও মেয়েকে জবাই করে হত্যার ঘটনার থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যার পর হত্যাকাণ্ডের শিকার বিকাশ সরকারের স্ত্রীর ভাই সুকমল সাহা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি দিয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এর আগে দুপুরে পুলিশ নিহত বিকাশের তিনতলা বাড়ির তিনতলার একটি ফ্ল্যাট থেকে লাশ তিনটি উদ্ধার করে হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে তাড়াশ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, তিন জনকেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। দুপুরে লাশ উদ্ধারের পর মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর