রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

ইরান সমর্থিত ৮৫ স্থাপনায় মার্কিন হামলায় নিহত ১৮

প্রতিদিন ডেস্ক

ইরান সমর্থিত ৮৫ স্থাপনায় মার্কিন হামলায় নিহত ১৮

ইরাক ও সিরিয়ায় ইরানের বিপ্লবী গার্ড সমর্থিত ৮৫টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা শুরু করেছে মার্কিন সামরিক বাহিনী। সিরিয়া সীমান্তের কাছে জর্ডানে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলার প্রতিশোধ নিতে শুক্রবার এ অভিযান শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ অভিযানে বেসামরিক নাগরিকসহ অন্তত ১৮ জন নিহত হয়েছেন। গত রবিবার টাওয়ার টোয়েন্টি টু নামে পরিচিত ওই মার্কিন ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের তিন সেনা নিহত হন, আহত হন আরও অন্তত ৪১ জন। ওই হামলার জন্য ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী সমর্থিক একটি মিলিশিয়া গ্রুপকে দায়ী করে প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে ইরান বলে আসছে, টাওয়ার টোয়েন্টি টুতে হামলা পরিকল্পনায় তাদের কোনো ভূমিকা ছিল না। মার্কিন বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড জানিয়েছে, সিরিয়া ও ইরাকে থাকা ইরানের বিপ্লবী গার্ড কোরের এলিট বাহিনী কুদস ফোর্স এবং তাদের সমর্থিত বিভিন্ন মিলিশিয়া গ্রুপের সাতটি জায়গায় বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এর মধ্য চারটি জায়গা সিরিয়ায়, তিনটি ইরাকে। এসব স্থাপনায় সব মিলিয়ে ৮৫টি স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে মিলিশিয়া গ্রুপগুলোর কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার; রকেট, মিসাইল ও ড্রোন স্টোরেজ ইউনিট এবং গোলাবারুদ ও রসদ সরবরাহ কেন্দ্র রয়েছে। রয়টার্স জানিয়েছে, দূরপাল্লার বি১ বোমারু বিমান এই হামলায় অংশ নেয়, সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়িয়ে নেওয়া হয় সেগুলো। ৩০ মিনিট সময়ের মধ্যে সব স্থাপনায় একযোগে এ হামলা ‘সফল’ হয়েছে বলে দাবি করেছেন মার্কিন জেনারেল ডগলাস সিমস। প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, ‘মধ্যপ্রাচ্য বা বিশ্বের অন্য কোথাও সংঘাত চায় না যুক্তরাষ্ট্র।

তবে যারা আমাদের ক্ষতি করতে চায়, তাদের এটা জেনে রাখতে হবে, যদি একজন আমেরিকানেরও ক্ষতি করা হয়, আমরা তার জবাব দেব।’ এদিকে এ হামলার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সিরিয়া ও ইরাক। সিরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম বলেছে, তাদের দেশের মরুভূমি অঞ্চলে এবং সিরিয়া-ইরাকি সীমান্তের বেশ কয়েকটি স্থাপনায় ‘আমেরিকান আগ্রাসনে’ বহু লোক হতাহত হয়েছে। আর ইরাকের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ইয়াহইয়া রসুল বলেছেন, তাদের সীমান্তবর্তী এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের এ হামলার মাধ্যমে তাদের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করা হয়েছে, যা পুরো অঞ্চলের অস্থিরতা বাড়িয়ে দিতে পারে।

এদিকে ইরাক এবং সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার ঘটনাকে ইরানের চিরশত্রু দেশটি আরেকটি ‘কৌশলগত ভুল করেছে’ বলে আখ্যা দিয়ে এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে তেহরান। তবে শুক্রবারের এ হামলায় ইরানের কোনো হতাহত হয়েছে কি-না সে বিষয়ে কিছু জানায়নি ইরান। গতকাল ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন বিমান হামলাকে উভয় দেশের ‘সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার লঙ্ঘন’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি বলেছেন, ‘সিরিয়া ও ইরাকে গত রাতের হামলা একটি হঠকারী পদক্ষেপ এবং মার্কিন সরকারের আরেকটি কৌশলগত ভুল। এতে এ অঞ্চলে উত্তেজনা ও অস্থিতিশীলতা বাড়ানো ছাড়া আর কোনো সুফল মিলবে না।’ সিরিয়া-ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর প্রথমবারের মতো শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাল ইরান। গত সপ্তাহে সিরিয়ার সীমান্তবর্তী জর্ডানের একটি সামরিক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলার জবাবে যুক্তরাষ্ট্র ইরাক-সিরিয়ায় এ হামলা চালিয়েছে। প্রাণঘাতী সে হামলায় ৩ মার্কিন সেনা নিহত এবং আরও ৪০ জনেরও বেশি সেনা আহত হয়েছিলেন। হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এর আগে ইরান-সমর্থিত বাহিনীকে দায়ী করেছিল। পরে সৈন্যদের মৃত্যুর প্রতিক্রিয়ায় ওয়াশিংটন থেকে ব্যাপক বিমান হামলার নির্দেশ দেওয়া হয়। মার্কিন সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) এক বিবৃতিতে বলেছে, হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর অভিজাত শাখা কুদস ফোর্স এবং তাদের সংশ্লিষ্ট মিলিশিয়া গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে আমেরিকান বাহিনী ৮৫টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করেছে। এ হামলায় বহু যুদ্ধবিমান অংশ নিয়েছে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়ে আসা দূরপাল্লার বোমারু বিমানও রয়েছে। -রয়টার্স

সর্বশেষ খবর