শুক্রবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
রাজেকুজ্জামান রতন

অন্যায়ের বিরোধিতা করে এগিয়ে যাওয়াই লক্ষ্য

হাসান ইমন

অন্যায়ের বিরোধিতা করে এগিয়ে যাওয়াই লক্ষ্য

বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেছেন, নির্বাচনের আগেও মানুষের জন্য রাজনীতি করেছি। মানুষের অধিকার আদায়ের কথা বলেছি। নির্বাচনের পরও এসব বিষয় নিয়ে কথা বলছি। আজকেও (মঙ্গলবার) পানির দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে সে বিষয়ে মানববন্ধন, প্রতিবাদসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছি। মানুষের অধিকার আদায়ে কাজ করে যাচ্ছি। অন্যায়ের সঙ্গে আপস নয়, এর বিরোধিতা করে রাজনীতিকে এগিয়ে নেওয়ায় আমাদের লক্ষ্য। মঙ্গলবার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, একসময় যে যুবক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে বুক চিতিয়ে দিয়েছে, স্বাধীনতা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে, অথচ আজ সেই যুবক ভয়ে মাথা নিচু করে থাকছে। অথবা কোনো দুর্বৃত্তের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। এই যুবকদের আমরা জাগিয়ে তুলতে চাই এবং তাদের নীতিগত বোধটাকে জাগিয়ে তুলতে আমরা কাজ করছি। তিনি বলেন, কখনো মনে হবে রাজনীতিতে আমরা দুর্বল শক্তি। কারণ আমাদের সাফল্য অনেকে দেখছে না। এই দলে সংসদ সদস্য দেখছে না। বিভিন্ন জায়গায় কর্তৃত্ব এবং দলীয় শক্তি দেখছে না। কিন্তু আমরা যে কাজ করছি সেটাকে মানুষ সমর্থন দিচ্ছে। কিন্তু মানুষের ভিতরে ভিতরে আকাক্সক্ষার শক্তি আছে যে আমরা এরকম চাই না। এরকম শিক্ষা, চিকিৎসাব্যবস্থা আমরা চাই না। মানুষের এই আকাক্সক্ষার জায়গাটা আমরা জাগিয়ে তুলতে চাই। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে চাই। তিনি আরও বলেন, জাতীয় নির্বাচনের পর উপজেলা নির্বাচনে সরকার কৌশল অবলম্বন করেছে। আগের নির্বাচনগুলোতে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হয়েছে। এবার দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচন হচ্ছে, কারণ জাতীয় নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থীর বিপক্ষে স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড় করিয়ে অভ্যন্তরীণ যে দ্বন্দ্ব তৈরি করেছে তা নিরসন করবে। সে কৌশলে এগোচ্ছে সরকার। তাদের পরিস্থিতির ফয়সালা হোক, তারপর আমরা দেখব। যেভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে, সেভাবে উপজেলা কিংবা ইউপি নির্বাচন যেটাই হোক না কেন সেটা নিয়ে ভাবতে হবে- এই পচনশীল নির্বাচনে আমরা যাব কি না। কারণ নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে একটা নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। বাসদের এই নেতা আরও বলেন, টিসিবির একটা ট্রাক যখন কোথাও দাঁড়ায় তখন মানুষের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। কারণ মানুষের সামর্থ্য কমে যাচ্ছে। মানুষের মধ্যে যন্ত্রণা তৈরি হচ্ছে। মানুষের এসব দুঃখ-দুর্দশার কথায় আমরা রাজপথে বলি। এসব কথা যখন ট্রাকের পেছনের লাইনের মানুষ, পথচারী, রিকশা ও বাসে চলাচলকারী মানুষ শোনে তখন তারা বলে ঠিক বলেছে। আমরা মানুষের মনস্তাত্বিক সমর্থন পাচ্ছি। মানসিক সমর্থনকে সাংগঠনিক শক্তিতে রূপ দিতে গেলে কিছু বিষয় থাকে। প্রশাসন ও পুলিশ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে এমন জায়গায় নিয়ে এসেছে, মানুষের মধ্যে এক ধরনের ভয়ের সংস্কৃতি বিরাজ করছে। মানুষ মনে করে প্রতিবাদ করতে গেলে জীবন হারাতে হতে পারে। এই প্রতিবাদ করে কি জেলে যাব নাকি! আর নয়তো এমন মামলা দেবে যার ঘানি টানতে টানতে জীবন শেষ হয়ে যাবে। মানুষ মনে করে, পণ্যের দাম বেড়েছে, দরকার হলে একটু কম খাব, তবু তো জেলে যাওয়া লাগবে না। সরকারি দলের দমনপীড়ন এমন যে, মানুষ মনে মনে বললেও প্রাণের ভয়ে দলের সঙ্গে যুক্ত হয় না। আপাতদৃষ্টিতে দলে লোকসংখ্যা কম হলেও জনগণ ভিতরে ভিতরে পুড়ছে। আর এই পোড়াটা একসময় বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, সরকার পরিবর্তন হয় দুই নিয়মে। একটি নিয়মতান্ত্রিক নির্বাচন পদ্ধতি, অন্যটি গণ-অভ্যুত্থান। নিয়মতান্ত্রিক নির্বাচন পদ্ধতি বিভিন্ন সময় বাধাগ্রস্ত হয়েছে। কারণ ক্ষমতায় যে সরকারই এসেছে তারা ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তন করেছে। এরশাদ, বিএনপি ও শেখ হাসিনার সরকারের সময় পরিবর্তন হয়েছে। সেজন্য আমরা নির্বাচনব্যবস্থায় কিছু পরিবর্তনের দাবি করেছি। নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার চাই। জবাবদিহিতা চাই। সম্পদের বিবরণী এবং কীভাবে সম্পদ বাড়ল সেটার জবাবদিহিতা চাই। রাইট টু রিকন অর্থাৎ যাদের ভোটে সরকার গঠন হয়েছে, আবার তাদের ভোটে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে দেবে এরকম আইন চাই। তাহলে নির্বাচনব্যবস্থা সুষ্ঠু হবে এবং যারাই নির্বাচিত হয়ে আসবে জনগণের স্বার্থে কাজ করবে। আর গণ-অভ্যুত্থানের বিষয়টা হঠাৎ করে হয় না।

সর্বশেষ খবর