শুক্রবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

পাকিস্তানে ভোট ফল আগেই তৈরি করার অভিযোগ

প্রতিদিন ডেস্ক

পাকিস্তানে ভোট ফল আগেই তৈরি করার অভিযোগ

পাকিস্তানে আরও পাঁচ প্রাণহানি ও নানা আশঙ্কার মধ্য দিয়ে গতকাল বিকালে শেষ হয়েছে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। ভোট চলাকালে সারা দেশে ইন্টারনেট, মোবাইল, ফেসবুকসহ সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ রাখা হয়। এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত ভোটের ফলাফল সম্পর্কে জানা না গেলেও অনেক মহল থেকেই বলা হচ্ছে, ফলাফল পূর্ব নির্ধারিত রয়েছে এবং বিজয়ী হতে যাচ্ছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নওয়াজ শরীফের দল পিএমএল-এন। সূত্র : আলজাজিরা, রয়টার্স, বিবিসি, ডন, জিও নিউজ, এনডিটিভি। খবরে বলা হয়, এবারের নির্বাচনে অংশ নিয়েছে নওয়াজ শরিফের দল পিএমএল-এন, বিলাওয়াল ভুট্টোর পিপিপিসহ ছোট-বড় প্রায় ১৪টি রাজনৈতিক দল। তবে নির্বাচনের মাঠে নামতে দেওয়া হয়নি আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ পিটিআইকে। কয়েকটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে কারাগারে বন্দি রয়েছেন ইমরান। এসব মামলার কারণে তাকে নির্বাচনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কেড়ে নেওয়া হয়েছে তার দলের প্রতীক ব্যাটও। ফলে তার দলের অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোটে অংশ নিয়েছেন। প্রায় ২৩৬ জন প্রার্থী বিভিন্ন প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে লড়েছেন। খবরে আরও বলা হয়, গতকালের ভোটের আগে বুধবারও রক্তে ভেসেছে পাকিস্তান। দুটি পৃথক বিস্ফোরণে এদিন অন্তত ২৮ জনের মৃত্যু হয়। এই আবহেই গতকাল ভোট চলাকলীন খাইবার পাখতুনখোয়ায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। সেখানে চার পুলিশসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন।

 সেখানে গুলিও চলেছে। এ বিষয়ে ডেরা ইসমাইল খান জেলার পুলিশপ্রধান রউফ কাইসরানি বলেন, কুলাচি এলাকায় পুলিশের একটি টহল দলকে লক্ষ্য করে গুলি ও বোমা হামলা চালানো হয়। এতে চার পুলিশ সদস্য নিহত হন। প্রায় ৪০ কিলোমিটার উত্তর দিকের শহরে নিরাপত্তা বাহিনীর একটি গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছে বন্দুকধারীরা। এতে একজন নিহত হয়েছেন। মাকরান ডিভিশনের কমিশনার সাইদ আহমেদ উমরানি বলেন, বেলুচিস্তান প্রদেশের বিভিন্ন জায়গায়ও গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। পাকিস্তান সময় সকাল ৮টা থেকে সাধারণ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। স্থানীয় সময় বিকাল ৫টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানজুড়ে মুঠোফোন সেবা সাময়িক স্থগিত রাখা হয়। পাকিস্তানের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) সিকান্দার সুলতান রাজা বলেছেন, বুধবারের সহিংসতার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো ইন্টারনেট ও মুঠোফোন সেবা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। খবরে বলা হয়, নিরাপত্তা উদ্বেগ এবং প্রচণ্ড ঠান্ডা উপেক্ষা করে ভোট গ্রহণ শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই ভোট কেন্দ্রগুলোর বাইরে ভোটারদের লম্বা লাইন ছিল।

নির্বাচন কমিশন সূত্রের তথ্যানুযায়ী, এই নির্বাচনে জাতীয় আইনসভার আসন সংখ্যা ২৬৬টি। এর মধ্যে পাঞ্জাব প্রদেশে আছে সবচেয়ে বেশি, ১৪১টি আসন। সিন্ধু প্রদেশে আছে ৬১টি, খাইবার পাখতুনখোয়ায় ৪৫টি, বেলুচিস্তানে ১৬টি ও রাজধানী ইসলামাবাদ অঞ্চলে ৩টি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও কারারুদ্ধ অন্য বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতারা আদিয়ালা কারাগার থেকে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে তাদের ভোট দিয়েছেন। কিন্তু ইমরানের স্ত্রী বুশরা বিবি ভোট দিতে পারেননি, কারণ তাকে গ্রেফতারের আগেই পোস্টাল ভোটের প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গিয়েছিল।

ফলাফল সম্পর্কে বিভিন্ন মহলের মন্তব্য : এই নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে নানা মত রয়েছে। পাঞ্জাব প্রদেশে জয়ী দলই সাধারণত পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়। তবে অনেক বিশ্লেষকের বিশ্বাস, কোনো দলই হয়তো একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। অন্যদিকে বেশির ভাগ পর্যবেক্ষকই বলেছেন, ভোটের ফলাফল আগেই তৈরি হয়ে আছে। নওয়াজ শরীফ আবারও ক্ষমতায় আসছেন- এটাই নির্ধারিত। এ বিষয়ে গতকালের ওয়াশিংটন পোস্ট মন্তব্য করে, ভোটে যদি নওয়াজ শরিফ ক্ষমতায় না আসেন, তাহলে এটি খুবই ‘বিস্ময়কর’ হবে। চতুর্থবার ক্ষমতায় এলে নওয়াজ যেসব অভিযোগের কারণে ২০১৭ সালে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন, তা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারবেন। তবে তাকে ইমরান খানের সমর্থকদেরও মুখোমুখি হতে হবে। ব্লুমবার্গ লিখেছে, গত সপ্তাহে করাচিতে পাকিস্তানের ব্যবসায়ীদের এক সমাবেশে অনেকেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, এবারের নির্বাচন ঝুলন্ত সংসদ এবং তারপর একটি দুর্বল জোট সরকার গঠন হতে পারে। তাদের বেশির ভাগই আশা করছেন, সেই জোট সরকার নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বেই হবে অথবা তার ভাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজের নেতৃত্বেও হতে পারে। ব্লুমবার্গ আরও বলেছে, নওয়াজ শরিফ ক্ষমতায় এলে তাকে দুটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে বলে মনে করেন ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটের ফরেন পলিসি ফেলো মাদিহা আফজাল। এর একটি পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবিলা করা, আরেকটি শক্তিশালী সামরিক বাহিনীকে ম্যানেজ করে চলা। এদিকে সিএনএন জানিয়েছে, পাকিস্তানের নির্বাচনের প্রচারে এগিয়ে ছিলেন ইমরান খানের প্রতিদ্বন্দ্বী নওয়াজ শরিফ। স্বেচ্ছায় নির্বাসনের পর ৭৪ বছর বয়সী এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় এলে তা একটি ‘স্মরণীয় ফিরে আসা’ হবে। সাবেক সিনিয়র ব্রিটিশ কূটনীতিক ও কিংস কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক টিম উইলাসি-উইলসির মতে, ‘নওয়াজ শরিফ অভিজ্ঞ। তিনি সবসময়ই যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারদর্শী। তিনি ভারতের সঙ্গেও সুসম্পর্ক রাখতে চাইবেন।’

মার্কিন থিঙ্কট্যাংক ব্রুকিংস ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, নওয়াজ শরিফ ও তার দল পিএমএল-এন ক্ষমতায় আসতে পারে। মার্কিন থিঙ্কট্যাংক ‘কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস’ বলছে, ‘পাকিস্তানের রাজনীতিতে টিকে থাকা, নওয়াজ শরিফের প্রধানমন্ত্রী হওয়া এবং তার দলের পক্ষে সশস্ত্র বাহিনী সমর্থন তার সংসদে নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার পথ সহজ করেছে। নওয়াজ নীতিগত দৃষ্টিভঙ্গি এবং সামরিক বাহিনীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিতে নমনীয়।’ স্পুটনিক জানিয়েছে, নির্বাচনের পর নতুন প্রধানমন্ত্রীকে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংকট ও বাড়তে থাকা সন্ত্রাসবাদের মুখোমুখি হতে হবে। এসব সমস্যা পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতিকে বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অংশীদারদের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

টেলিগ্রাফ লিখেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী (নওয়াজ শরিফ) এবারের নির্বাচনে জোরালো লড়াইয়ের পরিবর্তে নতুন করে সরকার গঠনের আশা করছেন বলে মনে হচ্ছে। কারণ তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ইমরান খানকে শাস্তির আওতায় ফেলে আটকে রাখা হয়েছে। যদি বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে নওয়াজ শরিফ ক্ষমতায় আসেন, তাহলে তিনি দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রধানমন্ত্রী হবেন।

এদিকে পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ জানিয়েছেন, পিএমএল-এন যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে তাহলে নওয়াজ শরিফই হবেন প্রধানমন্ত্রী। তবে যদি ত্রিশঙ্কু ফলাফল হয়, সেই ক্ষেত্রে যাদের সঙ্গে জোট গঠন করা হবে, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে নেতা বেছে নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর