রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

রূপগঞ্জে শিশুসহ গুলিবিদ্ধ ২১

চতুর্থবারের মতো রক্তাক্ত নাওড়া

নিজস্ব প্রতিবেদক

জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের নাওড়া গ্রামবাসীর ওপর চার দফায় হামলা করেছে স্থানীয় সন্ত্রাসী গ্রুপ রফিক বাহিনী। এসব হামলায় এখন পর্যন্ত ছররা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ২১ জন। গতকাল সন্ধ্যায় রফিক বাহিনীর হামলায় শিশুসহ আরও পাঁচজন ছররা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ সময় আরও প্রায় ২২ জন বিভিন্নভাবে আহত হয়েছেন। জানা গেছে, রফিক বাহিনীর প্রধান রফিকুল ইসলামের ছোটভাই মিজানুর রহমানের নেতৃত্ব শনিবার জসু, আলেক, শাহ আলম, এমদাদুল, রহমান, নাজমুলসহ প্রায় ১৫০ জন সন্ত্রাসী নাওড়া গ্রামে হামলা করে। এ সময় তারা কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী মোতালেব ভূঁইয়ার বাড়ির সীমানা প্রাচীর ভেঙে হামলা চালায়। এ সময় সন্ত্রাসীদের হাতে দেশি-বিদেশি পিস্তল, রামদা, চাইনিজ কুড়ালসহ ধারালো অস্ত্র ছিল। সূত্র জানায়, ওই হামলার ঘটনায় পাঁচজন ছররা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন- স্থানীয় আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটির সদস্য জাকির হোসেন জাগু পিতা আবুল পাশা, আবুল হোসেন পিতা মৃত শাহাবুদ্দিন, মোহাম্মদ আল-আমিন পিতা মনির হোসেন, মারুফা আক্তার পিতা নজরুল ইসলাম, ১১ বছর বয়সী শিশু মোহাম্মদ জুম্মন হোসেন পিতা মোজাম্মেল। আহতদের চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এ প্রসঙ্গে আহত জাকির হোসেন জাগুর পিতা আবুল পাশা বলেন, রফিক বাহিনীর প্রধান রফিকের ছোটভাই মিজানের নেতৃত্বে সন্ধ্যায় প্রায় ১৫০ জন সন্ত্রাসী আমাদের বাড়িঘরে হামলা করে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার ছেলেকে গুলি করে। সে আহত হলে তার মাথায় আঘাত করা হয়। কেন বারবার আপনাদের ওপর হামলা হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের জমি দখল করতে সন্ত্রাসীরা একজোট হয়েছে। তারা আমাদের এলাকাছাড়া করে জমির দখল নিতে চায়। অতর্কিত হামলায় ছররা গুলিবিদ্ধ শিশু মোহাম্মদ জুম্মন হোসেনের বাবা মোজাম্মেল আর্তনাদ করতে করতে বলেন, আমার ১১ বছর বয়সী ছেলেটার কী দোষ? হঠাৎ করে রফিকের সন্ত্রাসীরা বাড়িতে ঢুকে গুলি চালায়। আমার ছেলের পুরো শরীর রক্তে ভিজে গেছে। তিনি বলেন, রফিক জমি দখল করতে গত ১০-১২ দিনে আমাদের গ্রামবাসীর ওপর চার দফায় হামলা করেছে। আমাদের অনেকে এখনো আহত হয়ে বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিচ্ছে। এখন আবারও হামলা করেছে। এ গ্রামের কাউকে বাঁচতে দেবে না সে। ছররা গুলিবিদ্ধ মোহাম্মদ আল-আমিন বলেন, গত কয়েক বছর ধরে রফিক বাহিনীর সদস্যরা আমাদের ওপর বিভিন্নভাবে অত্যাচার করছে। সম্প্রতি তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। নাওড়া মধ্যপাড়ার মোতালেব ভূঁইয়া ও প্রধানের বাড়ির কাউকে একা পেলেই কারণে অকারণে মারধর করে। তিনি বলেন, আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে বাজারের দিকে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে গুলি ছুড়তে ছুড়তে সন্ত্রাসীরা বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার পা অবশ হয়ে যায়। দৌড়ও দিতে পারছিলাম না। পরে দেখি পা দিয়ে রক্ত পড়ছে। কায়েতপাড়া যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন বলেন, পূর্বাচলের নিকটবর্তী হওয়ায় কায়েতপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দাদের জমি দখল করতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন ইউনিয়নটির সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম। গত শুক্রবার কায়েতপাড়ায় উপস্থিত হয়ে প্রকাশ্যে ভুক্তভোগীদের মেরে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেয় সে। এ সময় জনসম্মুখে তাদের বাড়িঘর ভেঙে সব জায়গাজমি দখলে নেওয়ার ঘোষণা দেয় রফিক। তিনি বলেন, রফিক বাহিনীর ভয়ে অনেক পরিবার এখন গ্রামছাড়া। গত তিনবারের হামলার ঘটনায় আহত অনেকেই এখনো গ্রামে ফিরে আসেনি। তাই তারা কয়েক দিন পরপর হামলা করছে। ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. বাচ্চু মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ থেকে জমি-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে একই পরিবারের নারী ও শিশুসহ ছয়জন গুলিবিদ্ধ হয়ে জরুরি বিভাগে আসেন। বর্তমানে জরুরি বিভাগের অবজারভেশনে তাদের চিকিৎসা চলছে। দায়িত্বরত চিকিৎসক জানিয়েছেন, তাদের সবার অবস্থা আশঙ্কাজনক। আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে জানিয়েছি।’

সর্বশেষ খবর