সোমবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

রাতে শান্ত সকালে গোলাগুলি, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক

মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ চলমান সংঘাত পরিস্থিতিতে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে গোলাগুলির শব্দে আতঙ্ক কমেনি। শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তে থেমে থেমে গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসছে। শনিবার রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত টেকনাফের হোয়াইক্যং কানজরপাড়া-খারাংখালী এলাকায় গোলার বিকট শব্দ শুনেছেন সীমান্তের বাসিন্দারা। এরপর রাতের বাকি সময়ে অনেকটা শান্ত ছিল পরিস্থিতি। গতকাল সকালে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তে আবারও গোলাগুলির শব্দ পায় সীমান্তের লোকজন। তবে শান্ত রয়েছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত। আমাদের কক্সবাজার ও বান্দরবান প্রতিনিধি এ খবর জানিয়েছে।

এদিকে সীমান্তের ওপারে যুদ্ধ তীব্র হওয়ায় মিয়ানমারের নাগরিকদের অনুপ্রবেশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। নাফ নদীতে অসংখ্য ছোট ছোট নৌকায় রোহিঙ্গারা ভাসছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে সীমান্তে বিজিবি ও নাফ নদীতে কোস্টগার্ড টহল অব্যাহত রেখেছে। সীমান্তের বাসিন্দারা বলছেন, শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তের ওপারে কাদিরবিল, নলবনিয়া, নয়াপাড়া, নুরুল্লাপাড়া, বাঘগুনা, পংদা ও পাতনজা এলাকায় আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর তুমুল যুদ্ধ চলছে। তাই সেসব গ্রামের বসবাসকারী রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে।

কোস্টগার্ড চট্টগ্রাম পূর্ব জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা বলেন, অনুপ্রবেশ রোধে নাফ নদীতে আমাদের টহল জোরদার করা হয়েছে। আমরা জানুয়ারি ২৫ থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দুই শতাধিকের বেশি রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ প্রতিহত করেছি। সর্বশেষ গত শনিবার তিনজনকে শাহপরীর দ্বীপ থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

টেকনাফের হোয়াইক্যং সীমান্তের বাসিন্দা মো. রাসেল বলেন, শনিবার রাতে আমাদের সীমান্তে দুই ঘণ্টা থেমে থেমে গোলাবর্ষণ চলছিল। ওপারে বলিবাজারে আরাকান আর্মির সঙ্গে সেনাবাহিনীর চলমান যুদ্ধ এখনো অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে গতকাল সকাল থেকে শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তে থেমে থেমে মিয়ানমারের গোলগুলির শব্দ ভেসে আসে। দ্বীপের বাসিন্দা এনাম উল্লাহ বলেন, রাতে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া না গেলেও সকাল ৮টা থেকে গুলির বিকট শব্দ বাড়ি থেকে শোনা গেছে। জীবনে এমন গুলির আওয়াজ কখনো আমরা শুনিনি। শব্দে ঘরবাড়ি কেঁপে উঠছিল। গোলাগুলির শব্দে আমার দেড় বছরের শিশু সন্তান ভয়ে ঘুম ভেঙে কেঁদে ওঠে। পুরো দ্বীপজুড়ে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, সীমান্তে প্রায় সময় গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। নাফ নদী থাকার কারণে আমরা অনেকটা ‘সেফ জোন’-এ আছি। তবুও আমরা সীমান্তের বসবাসকারীদের সতর্ক থাকতে বলেছি। সীমান্তের বাসিন্দারা বলছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের জেরে গত শনিবার বিকালে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটে গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গা নারীসহ ৫ জন আসে। পরে তাদের ফেরত পাঠানো হবে বলে জানানো হয়। শাহপরীর দ্বীপ মিস্ত্রিপাড়ার বাসিন্দা আলী আহমদ (৫০) বলেন, নাফ নদীতেই আমাদের বেড়ে ওঠা। এখানে বাপ-দাদাদেরও জীবন কেটেছে। মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে গতকালও ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে, তবে অন্য দিনের চেয়ে কিছুটা কম। টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুস সালাম বলেন, মিয়ানমার সীমান্তে এখনো গোলাগুলি বন্ধ হয়নি। শনিবার গুলিবিদ্ধ নারীসহ পাঁচজন রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছিল।

এদিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম-তুমব্রু এলাকার ওপারে মিয়ানমার অংশ বেশ কিছুদিন ধরে শান্ত রয়েছে। গতকালও কোনো গোলাগুলির ঘটনা ঘটেনি। তবে বিজিবির পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরা সীমান্তে সার্বক্ষণিক টহল অব্যাহত রেখেছে। নিরাপত্তার স্বার্থে বন্ধ করে দেওয়া ঘুমধুমের সীমান্তলাগোয়া পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এখনো খুলে দেওয়া হয়নি। চলতি মাসের শুরুর দিকে ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তের ওপারে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেল এসে পড়ে বাংলাদেশের ভেতরে। এতে দুজন নিহতসহ অনেকে আহত হন। ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। গুলিতে ছালবাকল উঠে যায় বড় বড় গাছের।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবদুল মান্নান জানিয়েছেন, সীমান্তের ওপারে ব্যাপক গোলাগুলি ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেল এসে পড়ায় ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাজাবনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু পশ্চিমকূল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং বাইশারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এগুলো খোলার ব্যাপারে মন্ত্রণালয় থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। সিদ্ধান্ত হলে স্কুলগুলো খুলে দেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর